বুধবার, ৬ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২২শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

নীলফামারীতে কোরাবনির জন্য প্রস্তুত প্রায় ৩ লাখ পশু

মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী : আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নীলফামারীতে গরু পালনকারী ও খামারিদের প্রস্তুতি প্রায় শেষপর্যায়ে। এখন খামারিদের কাছে আসছেন পশু ব্যবসায়ীরা। তবে হাটবাজার জমতে আরও কয়েক দিন দেরি হবে বলে খামারি ও গৃহস্থরা জানান। এরই মধ্যে গরু ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন এলাকার ব্যাপারী খামারে খামারে গিয়ে চাহিদামতো গরু দরদাম করে কিনতে শুরু করেছেন। কোরবানির হাটে স্বাস্থ্যসম্মত ও মোটা-তাজা গরু-ছাগলের চাহিদা থাকায় খামারিরা প্রাকৃতিক উপায়ে সেগুলোকে প্রস্তুত করছেন এমনটি জানিয়েছেন খামারিরা।

জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, এবার কোরবানির ঈদের জন্য জেলায় বাণিজ্যিক ও পারিবারিক খামার রয়েছে ৩০ হাজার ৯৭২টি। এসব খামারে গরু-ছাগল রয়েছে ২ লাখ ৭৬ হাজার ২০১টি। এ বছর জেলায় গরুর চাহিদা ১ লাখ ৪৩ হাজার ১০৯টি, যা চাহিদার চেয়ে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯২ টি গরু-ছাগল বেশি। এর মধ্যে ষাঁড় ৪৮ হাজার ৩৮৫টি, বলদ ৩ হাজার ৮৪৯টি, গাভী ২৩ হাজার ৫৯৮টি, মহিষ ৩৩টি, ছাগল ১ লাখ ৮৬ হাজার ১৫১টি ও ভেড়া রয়েছে ১৪ হাজার ১৯৪টি।

সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে খামারিরা জানান, আর কয়েকদিন পরেই পুরোদমে শুরু হবে কোরবানির পশু কেনা-বেচা। তাই আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পশুর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। গরুকে খাবার হিসেবে কাঁচা ঘাস, খৈল, ভুট্টা এবং ধানের কুড়াসহ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। তবে পশুখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু পালনে খরচ অনেকটা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন খামারিরা।

নীলফামারী শহরের আবু তালেব নামে এক খামারি বলেন, ‘প্রতিবছরই পারিবারিকভাবে দুটি গরু পালন করি। এবারও এক বছর আগে এক লাখ টাকায় দুটি গরু কিনে পালন করেছি। গরু ব্যবসায়ীরা বাড়িতে এসে দুই লাখ টাকা দাম হাঁকিয়েছেন। তবে আশা করছি আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি হবে গরু দুটি।’

জেলা শহরের খামারি শফিয়ার রহমান জানান, প্রতি বছর কোরবানির জন্য ১০-১২টি ষাঁড় দেশীয় পদ্ধতিতে লালন-পালন করি। বাজারে দেশি গরুর চাহিদা বেশি থাকায় এবার লাভের মুখ দেখা যাবে। তিনি আশা করছেন, ভারতের গরু ছাড়াই আমাদের দেশি গরু দিয়ে কোরবানির হাট-বাজারগুলো ভরে যাবে।

সৈয়দপুরের বিউটি এগ্রো ফার্মের ম্যানেজার আবিদ হোসেন প্রতিবেদককে জানান, শখের বসে তাঁরা খামার শুরু করেছেন। তাদের খামারে এবছর কোরবানির জন্য ২২টি গরু ১৩ টি ছাগল প্রস্তুত আছে। তিনি বলেন, এখানে বিভিন্ন জাতের গরু আছে, শাহীওয়াল, আট্রেলিয়ান, ফ্রিজিয়ান, ক্রোস ও মুন্ড। হারিয়ানা, তোতাপুড়ি,রামছাগল ও দেশি জাতের ছাগল রয়েছে। তবে কোরবানি জন্য প্রস্তুত এসব গরু ও ছাগল মালিক নিজের কোরাবনির জন্য পালন করছেন। আগামী বছর বাণিজ্যিকভাবে গরু ও ছাগল পালনের ইচ্ছের কথা জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পশু-খাদ্যের দাম অনেক বেড়েছে। যার কারনে গরু ও ছাগল পালনে খরচও বেড়েছে। গরুগুলোকে প্রতিদিন দুই বেলা প্রাকৃতিক খাদ্য যেমন ভুট্টা, খৈল, ব্রান্ড, কাঁচা ঘাস, গমের ভুসি ও খড় খাওয়ানো হয়। দিনে দুই-তিনবার গোসল করানো হয়। পশুর থাকার জায়গা সবসময় পরিষ্কার রাখাসহ সার্বক্ষণিক ফ্যান চালিয়ে পরিবেশ ঠান্ডা রাখা হচ্ছে।

সৈয়দপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শ্যামল কুমার রায় প্রতিবেদককে জানান, গরুকে দানাদার খাদ্য ও কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর জন্য খামারিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ভিটামিন খাওয়াতেও বলা হচ্ছে খামারিদের। তবে গরুকে নিষিদ্ধ কোনো রাসায়নিক ও হরমোন ওষুধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তিনি আরো জানান, এ জেলার খামারি ও গৃহস্থরা প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে গরু মোটাতাজা করায় এই জেলার পশুর চাহিদা সারাদেশে। এখানকার লোকজন খামার ছাড়াও প্রায় প্রতিটি বাড়িতে পারিবারিকভাবে পশু পালন করে থাকেন। এবার ভারত থেকে গরু আমদানি না হলে লাভের আশা করছেন খামারিরা।

নীলফামারী জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সিরাজুল হক প্রতিবেদককে জানান, এবার চাহিদার চেয়ে পর্যাপ্ত কোরবানির পশু প্রস্তুত আছে। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে জেলার বাইরেও বিক্রি করতে পারবেন খামারিরা। এবছর প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণের জন্য উপজেলাভিত্তিক তালিকাভুক্ত খামারিদের সারা বছর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আসন্ন কোরবানির ঈদে হাটে আগত ব্যবসায়ী ও খামারিরা যাতে নির্বিঘ্নে তাঁদের পশু বিক্রি করতে এবং ক্রেতা-বিক্রেতার সার্বিক নিরাপত্তা দিতে পুলিশ ও প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরো বলেন, পশু হাটে পশু অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত পশু চিকিৎসক নিয়োজিত থাকবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ