মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী : নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানের স্থান নির্ধারণকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পাল্টাপাল্টি ইট পাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত উপজেলার বাবু টকিজ হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে সেনাবাহিনীসহ যৌথ বাহিনীর টহল দেখে উভয়পক্ষ ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
আহতরা হলেন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গ্রেনেড বাবু (৪৫) লেবু মিয়া (৪২) রিশাদ (২২) নূরনবী (৪২), লেবু মিয়া (৫৫), হাবিবুল্লাহ (৩৫), জুয়েল (১৮), সৈয়দ আলী (৩২), জুয়েল (৪৪)।
স্থানীয় ও পুলিশ সুত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা বিএনপির কমিটি নিয়ে সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা পাটোয়ারীর সাথে বিরোধ চলে আসছিল। এতে দু’পক্ষই কেন্দ্র ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচি পৃথকভাবে পালন করে আসছেন। ১ সেপ্টেম্বর রোববার বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল আয়োজনের জন্য বিএনপি নেতা মাসুদ রানা পাটোয়ারীসহ নেতারা কিশোরগঞ্জ হাইস্কুলে স্থান নির্ধারণ করেন। অন্যদিকে একই স্থানে অন্য গ্রুপের নেতা-কর্মীরাও দোয়া মাহফিলের স্থান নির্ধারণ করে।
একই স্থান নির্ধারণ করাকে কেন্দ্র করে শনিবার সকাল থেকে দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এরই মধ্যে মাসুদ রানা পাটোয়ারী বর্তমান কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সাধারণ সম্পাদক একেএম তাজুল ইসলাম ডালিমকে ফোনে হুমকি দেন। পরে সন্ধ্যার দিকে সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বাজারে আসার পথে মাসুদ রানা পাটোয়ারী গ্রুপের নেতাকর্মীরা তাকে পথরোধ করলে দুই পক্ষের কর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে লাঠিসোঁটা ও ইট পাটকেল নিয়ে উপজেলা শহরের মূল সড়কে মুখোমুখি অবস্থান নেয়।
এতে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষে জাতীয় পার্টির সদস্য ও ইউপি চেয়ারম্যান হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গ্রেনেড বাবুসহ বিএনপির ১০ নেতাকর্মী আহত হন। এসময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা দোকানপাট ভাঙচুর করলে শহরের অন্যান্য দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল।
মাসুদ রানা পাটোয়ারী জানান, পক্ষপাতিত্ব করে এখানে নতুন কমিটি দেয়া হয়েছে। দলের ত্যাগী কর্মীদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের যোগসাজশে মনগড়া কমিটি গঠন করেছে। তিনি বলেন, সভাপতি মামুন জাতীয় পার্টি ও সাধারণ সম্পাদক ডালিম ছাত্রলীগ থেকে এসেছেন। যারা প্রকৃত ত্যাগী নেতাকর্মী তারা সবাই বাদ পড়েছে। আমরা এমতাবস্থায় যাদের পদ নেই ইউনিয়ন ভিত্তিক তাদের সুসংগঠিত করছি।ওই কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক আওয়ামী লীগের হয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে।
এ বিষয়ে আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মাসুদ রানা সকালে কল দিয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়।এরপর আমি সন্ধ্যায় বাজারে আসলে তার ছোট ভাই গ্রেনেড বাবু আমাকে আটকানোর চেষ্টা করে। পরে বিষয়টি আমি নেতাকর্মীদের বিষয়টি জানালে তারা রাস্তায় দাঁড়ায়। এসময় মাসুদ রানার পক্ষের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর চড়াও হয়ে হামলা চালায়। এতে আমার কর্মীরা ও ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়।
কিশোরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পলাশ চন্দ্র মন্ডল বলেন, স্থানীয় পুলিশের পক্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না হওয়ায় পুলিশ সুপারকে বিষয়টি অবগত করলে সেনাবাহিনীসহ যৌথ বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। যৌথবাহিনীর টহল দেখে উভয় পক্ষ স্থান ত্যাগ করে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।