শুক্রবার, ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

নীলফামারীতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন

মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী : দিগন্ত বিস্তৃত ধানখেত। বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে এ জেলায়। বাতাসে দোল খাওয়া কাঁচা-পাকা হলুদ শীষে চোখ পড়তেই কৃষকের মুখে হাসি ফোটার কথা ছিল। তবে সেই হাসির বিপরীতে কৃষকদের উলটো ধানের দাম নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। এরপরও তীব্র তাপপ্রবাহ ও শ্রমিক সংকটেও থেমে নেই কৃষকরা পুরোদমে চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। কৃষকদের অভিযোগ চড়া দামে সার-সেচ-শ্রম দিয়ে ফসল ফলিয়ে সে অনুপাতে ধানের দাম না পাওয়ায় ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কা করছেন। বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলেও ধানের দাম নিম্নমুখি হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, চলতি মৌসুমে ৮১ হাজার ৮৫৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার ৭০ মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত মোট আবাদী জমির মধ্যে ২০ ভাগ ধান কাটা শুরু হয়েছে।

জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, মাঠগুলোতে এখন ধান কাটার উৎসব। দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। বাতাসে দোল খাচ্ছে বোরোর সোনালি শীষ। সোনালি ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকরা। কেউ আঁটি বেঁধে ধানের বোঝা কাঁধে নিয়, কেউ ভ্যানে করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন ধান।

কৃষক আব্দুল জলিল হোসেন বলেন, দুই বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি এবার। ধান চাষে লাভ কম। দুই বিঘা ধান চাষে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা বিক্রি হবে ৩৮হাজার টাকা। ধানের দাম যদি বাড়তো তাহলে ধান চাষে পোষাতো। ধানের বাজার খারাপ। এ বাজারে ধান চাষ করে লাভ নাই। ধানের চাইতে ভুট্টায় লাভ বেশি।আগামীতে ধানের পরিবর্তে ভুট্টার চাষ করবো।

ধান চাষি ললিত চন্দ্র রায় জানান, এবছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে। জমি অনুযায়ী বিঘা (৩০ শতাংশে) প্রতি ১৫ থেকে ২০ মণ ধান পাওয়া যাবে। আবার কোনো মাঠে বিঘাপ্রতি ২২ মণ ধানও পেয়েছে কৃষক। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে ছিল এবং পোকার আক্রমণও ছিল তুলনামূলক কম। তবে দীর্ঘ খরায় ফসল উৎপাদনে বাড়তি সেচ খরচ যোগাতে হয়েছে। একারনে ধানের বাজার কম হওয়ায় কৃষকেরা লাভবান কম হচ্ছেন।

কৃষক রজব আলী জানান, দিন দিন বাড়তি হচ্ছে বিদ্যুতের দাম। বাড়ছে সার, কীটনাশক এবং শ্রমিকের মজুরি। সব মিলে দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে চাষাবাদের উৎপাদন খরচ। ধান চাষে এত অল্প লাভে কৃষকের চাষাবাদ করা লোকসান।

সরেজমিন ধানের হাট পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় ১ সপ্তাহ আগে প্রতি মণ হাইব্রিড জাতের শুকনা ধান বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১১শ টাকা মণ হিসেবে আবার পরের সপ্তাহে নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৯শ থেকে ১ হাজার টাকা মণ। চাষিরা বলছেন এই দামে ধান বিক্রি করে লাভ হবে না। তারপরও নিরুপায় হয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।

ধান ব্যবসায়ী কাফি মিয়া বলেন, বাজারে নতুন ধানের চাহিদা কম। অটোমিলগুলিও পুরাতন ধান কিনছে, নতুন ধান কম কিনছেন তারা। তিনি বলেন, আমি নিজেই একজন কৃষক আমার বিঘা প্রতি জমিতে সেচের পানিতে খরচ হচ্ছে তিন হাজার টাকা। কারণ বাজারে সার, ওষুধসহ সব জিনিসের দাম বেশি। এছাড়াও ধান পরিচর্যা, শ্রমিকের মজুরি, মাড়াই ও পরিবহনসহ অন্য সব ধরনের খরচও বাড়তি। কয়েক দফায় সবকিছুর দাম বাড়লেও ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা।

নীলফামারী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক আহমেদ জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে এবং পোকা-মাকড়ের আক্রমণও ছিল কম, ফলে কীটনাশকের ব্যবহার কম হয়েছে। এখন পর্যন্ত সদরে ১৫ ভাগ কৃষকের ঘরে ধান উঠা শুরু হয়েছে। এই মাসের মধ্যেই বাকি ধানগুলো কাটা শেষ হতে পারে বলে জানান তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক এস.এম আবু বক্কর সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকার ৩২ টাকা কেজি দরে ধানের দাম দিয়েছে, সেই হিসেবে এক বস্তা ধানের দাম ২ হাজার ৪০০ টাকা। তবে সরকারি রেটে ধান কেনা এখনও শুরু হয়নি। চলতি এ মৌসুমে জেলায় ৮১ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জেলায় কৃষি শ্রমিকের পাশাপাশি কৃষি বিভাগের ৭৮টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটতে কৃষকদের সহযোগিতা করছে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সুন্দরভাবে ধান কাটতে পারছেন চাষীরা।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ