নেত্রকোণা প্রতিনিধি : নেত্রকোণার কলমাকান্দা ও দূর্গাপুর সীমান্ত পার হয়ে অবৈধভাবে আসছে ভারতীয় চিনি। ঈদকে সামনে রেখে আরো সক্রিয় হয়ে উঠেছে চোরাচালান চক্রের দল। প্রায়ই জেলা পুলিশের অভিযানে জেলার বিভিন্ন সড়কে জব্দ করা হয় ভারতীয় চিনি। চোরাকারবারিরা এ দুই উপজেলার কয়েকটি সীমান্ত পথ দিয়ে চিনি এনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাচার করছে।
স্থানীয়রা কয়েকজন জানান, সীমান্ত চোরাচালান দ্বন্দ্বে গত এক বছরে একজন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও সাংবাদিকসহ পাঁচটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। আর চোরাকারবারিদের ধরতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জেলা পুলিশের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত তিন মাসে জেলার সীমান্ত পথে অবৈধভাবে আসা ভারতীয় চিনির অন্তত পাঁচটি চালান জব্দ করা হয়। এতে একটি পিকাপসহ ৫৮৮টি বস্তায় ২৭ হাজার ৫৩৫ কেজি ভারতীয় চিনি পায় পুলিশ। যার বাজারমূল্য আনুমানিক ৪৮ লাখ ৬ হাজার ৫০ টাকা।
গত বছরের ২২ আগস্ট থেকে এ বছরের এখন পর্যন্ত চোরাইপথে আসা এসব সামগ্রীর দাম এক কোটি ২২ লাখ ২৯ হাজার ৭৬ টাকা। এসব ঘটনায় ২৫৬টি মামলা ও ৪১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। একই সময়ে বিজিবি ও র্যাবের সদস্যরাও বিপুল পরিমাণ ভারতীয় চোরাইপণ্য আটক করেছে।
এ দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে: চোরাকারবারিরা প্রতিদিন চিনি এনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করছে। ৫০ কেজি ওজনের প্রতিটি বস্তা ভারত সীমান্ত থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকা দরে কিনে শ্রমিকের খরচসহ সব মিলিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছাতে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়। এসব বস্তা সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে পাঁচ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়। চিনির বস্তা সীমান্ত থেকে স্থানীয় বাজারে আনতে লাইনম্যান সহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে স্তরে স্তরে দিতে হয় টাকা।
গোপন সূত্রে জানা যায়, চিনি আনতে চোরাকারবারিরা দুর্গাপুরের, ভরতপুরের গাজীকোনা,বারোমারির লক্ষ্মীপুর, বিজয়পুর, চণ্ডীগড়ের ফেচিয়া, কলমাকান্দার লেংগুরা ইউনিয়নের কাঁঠালবাড়ি, জগন্নাথপুর, চেংগ্নী, সাত শহীদের মাজার, কালাপানি, তকলেটবাড়ি, খারনৈ ইউনিয়নের বৌ-বাজার, বলমাঠ, কচুগড়া, রংছাতি ইউনিয়নের পাতলাবন,পাঁচগাঁও, সন্ন্যাসীপাড়া, বেতগড়া, জাকিরপাড়া, নক্লাই, রামনাথপুরসহ বিভিন্ন সীমান্ত পথ ব্যবহার করে থাকে।
প্রথমে সীমান্ত থেকেসাইকেল ,মোটরসাইকেল, রিকশা ও ইজিবাইকে করে দুর্গাপুর বাজার, কলমাকান্দা বাজার ও নাজিরপুর বাজারে কিছু ব্যবসায়ীর গুদামে এসব চিনি মজুত রাখা হয়। পরে পিকআপভ্যান ও ছোট ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।গুদামে রেখে ভারতীয় বস্তা পাল্টে দেশীয় কয়েকটি কোম্পানির নামে সিল মারা বস্তায় ভরা হয় চিনি।
পরে মধ্যরাতে পিকআপভ্যান ও ট্রাকে করে হাটবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। চোরাই চিনিভর্তি যানবাহন নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য রাতের আঁধারে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে থাকেন লাইনম্যান হিসেবে পরিচিত চোরাচালানি দলের সদস্যরা। স্থানীয়দের অভিযোগ: চিনির সঙ্গে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রসাধনী, চকলেট, বিস্কিট, মসলা, পোশাক, গাড়ির যন্ত্রাংশ, মদ,ফেনসিডিলসহ মাদকও আসছে।
নেত্রকোণার পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদ বলেন, ঈদকে সামনে রেখে চোরাকারবারি যেমন সক্রিয় হয়ে উঠেছে আমাদের পুলিশ প্রশাসন ও সক্রিয়ভাবে কাজ করবে। এবং বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে চোরাচালান রোধে নিয়মিত অভিযান চলছে। সীমান্তে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অভিযান বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের কয়েকটি ইউনিটের সমন্বয়ে টিম করে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।