
মো. নাজমুল ইসলাম, নেত্রকোনা: নদীমাতৃক জেলা নেত্রকোনার বুক চিরে প্রবাহিত ৯৫টি ছোট-বড় নদী একসময় ছিল এ অঞ্চলের প্রাণভোমরা। কৃষি, মৎস্য, যোগাযোগ ও পরিবেশ—সব কিছুতেই নদীর সঙ্গে ছিল অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। কিন্তু বর্তমানে মানবসৃষ্ট সংকটে একের পর এক নদী হারাচ্ছে তাদের স্বাভাবিক রূপ ও প্রবাহ।
জানা গেছে, জেলার ৯৫টি নদীর মধ্যে ইতোমধ্যে ৩৮টি নদী প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে আরও ৪৬টি। মাত্র ১১টি নদী এখনও স্বাভাবিকভাবে প্রবাহমান রয়েছে।
১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে কালি গাং, কালিহারি, মরা নদীর মতো কিছু জলধারা প্রাকৃতিকভাবে হারিয়ে গেলেও বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় সংকট দখল, দূষণ, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন ও নিয়মিত খননের অভাব। অনেক নদীতে জেগে উঠেছে বিশাল চর, কোথাও কোথাও একেবারেই পানি নেই। কিছু নদীর বুকজুড়ে গড়ে উঠেছে দোকানপাট, বসতি এমনকি সড়কও।
নেত্রকোনার কংস, ধনু, সোমেশ্বরী, মগড়া ও নান্দাইল নদী কিছুটা প্রাণ ফিরে পেলেও অধিকাংশ নদী এখন পানিশূন্য। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন, একশ্রেণির প্রভাবশালী দখলদার ও প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার কারণেই নদীগুলোর এমন করুণ দশা।
একজন জেলে বলেন, “নদীতে আগের মতো পানি নেই। মাছ নেই বললেই চলে। এখন আর নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে যাওয়া যায় না।”
একজন কৃষক জানান, “বোরো মৌসুমে সেচের জন্য পানির অভাব ভয়াবহ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক খরচ করে ভিন্ন উৎস থেকে পানি আনতে হয়।”
নদী গবেষক ড. অহিদুর রহমান বলেন, “নদীর এই সংকট শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতির সৃষ্টি করছে না, পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্যকেও মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ফেলছে।”
এ বিষয়ে নেত্রকোনার নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান বলেন, “আমরা নদী দখলমুক্তকরণ, খনন কার্যক্রম এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির তিনটি ধাপে কাজ করছি। তবে দীর্ঘমেয়াদি ও পরিকল্পিত উদ্যোগ ছাড়া এ সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।”
পরিবেশবিদরা মনে করেন, নদীর স্রোত থেমে গেলে যেমন তার অস্তিত্ব বিলীন হয়, তেমনি নেত্রকোনার নদীগুলো হারালে কৃষি, মৎস্যসম্পদ ও জীববৈচিত্র্যও ধ্বংস হবে। এখনই যদি সরকার, প্রশাসন ও জনগণ মিলে পদক্ষেপ না নেয়, তবে আগামী প্রজন্ম হয়তো নদীর অস্তিত্ব খুঁজে পাবে কেবল পাঠ্যবইয়ের পাতায়।
তাই পরিবেশবাদীদের দাবি, ‘নদী বাঁচাও’ জাতীয় কর্মসূচি এবং জেলা ভিত্তিক বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্প গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।