শুক্রবার, ১লা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নেত্রকোনায় হতদরিদ্র বীর মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দিনের ভাগ্যে জোটেনি বীর নিবাস

মেহেদী হাসান নেত্রকোনা জেলা প্রতিনিধি : সরকার সারাদেশে অসহায় অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীর নিবাস নির্মাণ করে দিচ্ছেন। বীর নিবাসের জন্য বারবার আবেদন করেও পাচ্ছে না ঘর জীবনের অন্তিম মুহুর্তে এসে শারীরিক শক্তি হারিয়ে আয় উপার্জন না থাকায় অনাহারে অর্ধহারে দু’চোখে কেবলই অন্ধকার দেখছেন নেত্রকোণা জেলার মদন উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের দেওসহিলা গ্ৰামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জালাল উদ্দিন।

১৯৭১ সালে তিনি যখন টগবগে তরুণ সেই সময় জীবনের মায়া উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে তারা আপন পাঁচ ভাই মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ভারতে মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং নিয়ে ১১নং সেক্টরে কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে যুদ্ধ শুরু করেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সক্রিয় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

জীবনের মায়া উপেক্ষা করে দেশমাতৃকার মায়ায় ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধার নিবেদিত সৈনিক হিসেবে কাজ করেছেন একই মায়ের পাঁচ সন্তান । সেই সময়ে চোখ মুখে স্বপ্ন দেখতেন সোনালী ভবিষ্যতের। দেশ স্বাধীন হলে দুবেলা আহার জুটবে,জুটবে নিরাপদ আবাসস্থল।

তাঁর বাড়ি উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের দেওসহিলা গ্রাম। বয়স ৭৩ তার কোন ছেলে সন্তান নেই শুধু তিন মেয়ে মেয়েদেরকেও বিয়ে দিয়েছেন তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস অসুখ বিসুখে নিধারুণ কষ্টে কাটছে তার জীবন। বড়ই অসহায় ও একাকিত্ব জীবন যাপন করছেন বীরমুক্তিযুদ্ধা জালাল উদ্দিন ভূঁইয়া।

নিজের জমিজমা বলতে তেমন কোন কিছু নেই। আছে শুধু মাথা গুজার টাইটুকু। আগাছার মত আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। থাকার ঘরটুকু বৃষ্টি আসার সঙ্গে সঙ্গেই ঘরের চালা দিয়ে পানি পড়ে বিছানা সহ ঘরের সমস্ত কিছু ভিজে যায়। বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে তার ঘর টুকু। তাই জীবনের শেষ বেলায় দাঁড়িয়ে তার শেষ ইচ্ছা একখন্ড জমিতেই নিজের একটি বাড়ি চান। যেখানে বাকী জীবন নিজের স্ত্রীকে নিয়ে তিনি নির্বিঘ্নে কাটাতে পারেন।

দারিদ্রতায় জর্জরিত এ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থেকে রোগ বালাইয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে জীবন যুদ্ধে জয় হতে চান বীরমুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দীন।

তার ভারতীয় তালিকা নং ১২৯৬৯ মুক্তিবার্তা নম্বর ০১১৬০৯০১৩৪ গেজেট মুক্তিযোদ্ধা নম্বর ২৩৭৩ মুক্তিযোদ্ধা সনদ নং ০১৭২০০০০২২০৮। তবে ভাতা হিসেবে পাওয়া অর্থ স্বামী-স্ত্রী দু’জনের চিকিৎসা ও খাওয়া পরার খরচ যোগাতে শেষ হয়ে যায়। স্থায়ী একটা বাসা বাড়ী তৈরীর চিন্তা তার কাছে দুঃস্বপ্ন মাত্র।

তিনি বলেন: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার অনেক গরীব মানুষকে জমি দিচ্ছেন পাকা বাড়ি করে দিচ্ছেন। স্থানীয় অনেক আল বদর রাজাকারের সন্তান মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। দুর্নীতিবাজ জনপ্রতিনিধির কারণে অনেক ভিটে মাটিহীন নাগরিক এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমি একজন সহায় সম্বলহীন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন একজন অসহায় মুক্তিযোদ্ধার শেষ ইচ্ছাটা যেন তিনি পূরণ করেন। আমরা একই মায়ের পাঁচ সন্তান বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশ স্বাধীনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম।

এ বিষয়ে ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সামিউল হায়দার শফি বলেন: দেওসহিলা গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ জালাল উদ্দিন ভূঁইয়া তারা আপন পাঁচ ভাই আমাদের দেশ স্বাধীন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় একই পরিবারে পাঁচ মুক্তিযোদ্ধা থাকার পরেও কোন ভাইয়ের ভাগ্যে এখনো জোটেনি বীরনিবাস এটি দুঃখজনক। আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করব।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ শওকত জামিল বলেন: বীর মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দিন সাহেব বীর নিবাসের জন্য সময়মতো আবেদন করেনি তাই তার আবেদনটি গ্রহণ করা হয়নি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শাহ আলম মিয়া বলেন: আমি এখানে যোগদান করার পর নতুন করে কোন বীর নিবাসের বরাদ্দ আসেনি। যদি আসে আর তিনি যদি সময় মত আবেদন করে সেটি যোগ্য হলে তার আবেদনটি বিবেচনা করা হবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ