
মো. নাজমুল ইসলাম, নেত্রকোনা: এক সময় ধানকাটার মৌসুম আসলেই গ্রামে গ্রামে পরতো খৈ-মুড়ি ভাজার ধুম।গ্রামের ছেলে-বুড়ো সকলেরই ধানের বিনিময়ে গরম গরম খৈ-মুড়ি না খেলে যেন ধানমাড়াই মৌসুমটাই অপূর্ব থেকে যেত। গ্রামীণ হাটবাজারে খৈ আর মুড়ির কদর ছিল ব্যাপক। মুড়ি আর গুড় দিয়ে তৈরি হত বাহারী ধরনের নাড়ু।
নেত্রকোনার বিভিন্ন এলাকায় শত শত পরিবার এই পেশার সঙ্গে জড়িত থাকলেও বর্তমানে হাতে তৈরি খৈ-মুড়ি শিল্পটি বিলুপ্তির পথে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাটির চুলায় ধান ভেজে খৈ বানানো কিংবা চাল ভাজা মুড়ি তৈরি একটি পরিশ্রমসাধ্য ও সময়নিবিড় কাজ। আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে প্যাকেটজাত খাদ্যের জনপ্রিয়তা, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি এবং শ্রমের অভাবে এই ঐতিহ্যবাহী পেশাটি টিকে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
নেত্রকোনা সদর উপজেলার দক্ষিণ বিশিউড়ার রোশনারা বেগম বলেন, “৪০ বছর ধরে খৈ-মুড়ি ভাঁজি। এখন আর কেউ আগ্রহী না। আগের মতো বিক্রি নেই, লাভও নেই।”
স্থানীয় বাজারগুলোতেও আগ্রহ কমে গেছে। মদন উপজেলার এক মুড়ি বিক্রেতা জানান, আগে যেখানে প্রতি হাটে কয়েক মণ খৈ-মুড়ি বিক্রি হতো, এখন ১০-১৫ কেজিও বিক্রি হয় না।
জেলা কৃষি বিপণন অফিস সূত্রে জানা গেছে, সঠিক পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণ পেলে এই পেশাকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। ইতোমধ্যে কয়েকজন নারী উদ্যোক্তা অনলাইনে খৈ-মুড়ি বিক্রি শুরু করেছেন, যা নতুন আশার বার্তা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারি সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও বাজার সম্প্রসারণ জরুরি। না হলে নেত্রকোনার এই গ্রামীণ শিল্পটি হারিয়ে যাবে ইতিহাসের পাতা থেকে ।