যায়যায়কাল প্রতিবেদক: পরিকল্পিতভাবে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে বলে মনে করে সরকার। গত দুই দিনে ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বিশৃঙ্খলা–ভাঙচুরের যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা বড় ধরনের পরিকল্পনার অংশ বলেই ভাবছে সরকার।
দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দুজন উপদেষ্টা সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে কথা বলেন।
তারা হলেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, হামলা, ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার। এ ধরনের কার্যক্রম সহ্য করা হবে না।
ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, বড় ধরনের পরিকল্পনা না থাকলে এক দিনে (গতকাল) এতগুলো ঘটনা কাকতালীয় না। তাঁরা মনে করছেন, এখানে নানা পক্ষের পরিকল্পনা আছে। সরকার সফলভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করুক, এটা হয়তো অনেকেই চাইছে না। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার নানাভাবে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু অভ্যুত্থান–পরবর্তী পরিস্থিতিতে আমরা আছি, সকলের ভেতরে সেই একটি বিপ্লবী চেতনা আছে, উত্তেজনা আছে, সেটা যেন আমরা ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করি।…এখানে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর এখানে ভূমিকা নেওয়ার আছে।’
এর আগে রোববার দুপুরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের কয়েক শ শিক্ষার্থী প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে গিয়ে যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে ব্যাপক হামলা ও ভাঙচুর চালান। একপর্যায়ে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। এর আগে গত রোববার পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালান মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এই কলেজের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু ভুল চিকিৎসার কারণে হয়েছে, এমন অভিযোগের জেরে ওই হামলা চালানো হয়েছিল। এ হামলার পাল্টা প্রতিক্রিয়া গতকাল দেখিয়েছে সোহরাওয়ার্দী ও নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এমন পরিস্থিতিতে সোমবার সন্ধ্যায় সংবাদ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় কারও দায়িত্বে অবহেলা আছে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আগের চর্চায় যদি পুলিশ যেত, তাহলে খুব স্বাভাবিকভাবে ছাত্ররাও আক্রমণ করত। তখন পুলিশ প্রতিরোধ করলে ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হতো। পুলিশ প্রথমে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সেই ব্যারিকেড (প্রতিবন্ধকতা) পেরিয়ে ছাত্ররা চলে যায়। পুলিশ ও সেনাবাহিনী শেষ পর্যন্ত ঘটনা থামানোর চেষ্টা করেছে। হামলা–ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ ঘটনায় কারও ইন্ধন আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, অনেক ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে সুষ্ঠু তদন্ত করার আগপর্যন্ত কোনো কিছুই বলা যাবে না।
হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পুলিশের দুর্বলতা ছিল। দুর্বলতা ছিল দেখেই তো আসলে ঘটনা সংঘর্ষের দিকে গেছে। পুলিশ একটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার ভেতরে আছে। সেই জায়গায় যখন এত এত শিক্ষার্থী নেমে এসেছে, পুলিশ যদি শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থানে যেত, তাহলে সেটি আরও বেশি খারাপ দিকে যেতে পারত। এ কারণ হয়তো পুলিশ প্রাথমিকভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়নি। পরে অবশ্য পুলিশ ও সেনাবাহিনী সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। পুলিশকে আরও সক্রিয় করার জন্যই একটি রদবদল করা হয়েছে এবং এই রদবদল অব্যাহত থাকবে। যেখানে ব্যর্থ হচ্ছে সেখানে পরিবর্তন করা হবে।
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, পুলিশে একটি বড় পরিবর্তন (পুলিশ বাহিনীর প্রধান ও ঢাকার পুলিশ কমিশনার পদে নতুন নিয়োগ) এসেছে। প্রশাসনে স্থবিরতা কাটানোর জন্যও প্রশাসনে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে আটকের বিষয়েও প্রশ্ন করা হয়। এর জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানাবে। তবে তারা যেটা জানেন, তাকে আটক করা হয়েছে এবং তার নামে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা আছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, সামনে শিক্ষা নিয়ে সংস্কার কমিশন করার পরিকল্পনা আছে। তবে নিয়ে কোনো সময়সীমা তিনি জানাতে পারছেন না।
এই ব্রিফিংয়ের আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সংঘর্ষে না জড়িয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে শান্ত থাকেন, সে আহ্বান জানিয়েছে সরকার। অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির যেকোনো চেষ্টা কঠোর হাতে দমন করা হবে।