
সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি:
সারাদেশে জিডি গ্রহণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করলেও তা পুলিশ মানছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দিনের পর দিন অনলাইন, অফলাইনে নানা চেষ্টা করেও জিডি না নেয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন সিংড়ার সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলকের নিজ এলাকা নাটোরের সিংড়া পৌর এলাকার বাসভবনের কেয়ারটেকার ও ঢাকায় নিযুক্ত আইনজীবি।
দায়িত্বরত ব্যক্তি হিসেবে তারা ওই কাজ করতে না পারায় নিজে যেমন দায়িত্ব পালন করতে না পেরে মনক্ষুন্ন ও অসন্তোষে ভুগছেন। পাশাপাশি ওই কারণে ভবিষ্যতে পলক ক্ষতিগ্রস্ত ও সমস্যায় পড়বেন এমন ধারণা তাদের।
তবে পুলিশ বলছেন, সঙ্গত কারণেই পলক পক্ষের জিডি গ্রহণ করতে পারছেন না তারা।
তথ্যমতে, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলকের নিজ এলাকা নাটোরের সিংড়া পৌর শহরে চারতলা একটি বাসভবন রয়েছে। ওই বাড়িতেই নিজ পরিবার নিয়ে বসবাসের পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের সাথে কথা বলা ও মিটিং চলতো পলকের। গণঅভ্যত্থানে শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামীলীগ নেতাদের বাসভবন ও দলীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। ওই সময় সিংড়ায় পলকের বাড়িতেও অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এতে পলকের বাড়ির প্রায় ৫ লাখ টাকার মালামাল ছাড়াও পলকের স্ত্রীর স্বর্ণালংকার, বাড়ির দলীলসহ বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী লুট ও আগুনে পোড়ানো হয়। ওই ঘটনায় বাড়ির কেয়ারটেকার মুনছুর আলম সিদ্দিকী দুদু সিংড়া থানায় জিডি করতে গেলে তৎকালীন ওসি তা গ্রহণ করেননি।
শুধু তাই নয়, পলকের ছিল লাইসেন্স করা দুটি আগ্নেয়াস্ত্র। ৫ আগস্টের ঘটনা প্রবাহে অস্ত্র দুটি খোয়া যাওয়ার দাবী করা হয়েছে পলকের পক্ষে। তবে কাটছে না আতঙ্ক। কেননা, অস্ত্র জমাদানের মেয়াদ শেষ হলেও সাধারণ ডায়েরীর মাধ্যমে অফিসিয়ালী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করা যাচ্ছে না।
জানা যায়, আ’লীগ সরকারের পতনের পর পলককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনায় সারা দেশের বৈধ-অবৈধ অস্ত্র বিষয়ে তথ্য জানতে বৈধ অস্ত্র জমা দিতে বলার পাশাপাশি অস্ত্র উদ্ধার অভিযানও চলে। ওই সময় পলকের পক্ষ থেকে দাবী করা হয় ৫ আগস্ট পলকের লাইসেন্সধারী দুটি অস্ত্র খোয়া গেছে এবং এ বিষয়ে দেশের জাতীয় কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় খবরটি প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু ওই বিষয়টি আইনানুগভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানাতে পারেনি পলক পক্ষ। এতে ভবিষ্যৎ সমস্যা আর নতুন মামলা আতঙ্কে কাটছে তাদের সময়।
পলকের স্বজনদের দাবী শেখ হাসিনার পতনের পর পলকের স্ত্রী-সন্তানরা বিদেশে চলে যান ও আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে পলককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর পলকের কাছের মানুষ ও ঘনিষ্ঠরাও আত্মগোপনে যায়। ফলে পলকের মনোনীত আইনজীবির মাধ্যমে তার মামলা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
পলকের সিংড়া বাড়ির কেয়ারটেকার মুনছুর আলম সিদ্দিকী দুদু বলেন, তার দায়িত্বে পুরো বাড়ির সম্পদ ছিল। অথচ ওই ঘটনার পর বার বার ঘুরলেও তার জিডি নেয়নি পুলিশ। এতে নিজের দায়বদ্ধতায় ভোগার পাশাপাশি ভবিষ্যতে পলক বা তার পরিবারের কেউ এ নিয়ে কথা বললে তিনি জবাব দিতে পারবেন না। একজন মানুষের এত বড় ক্ষতি হওয়ার পরও তিনি আইনী ব্যবস্থা নিতে পারবেন না এটা কিভাবে হয়-এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি।
পলকের আইনজীবি, ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী তরিকুল ইসলাম জানান, গত ২রা সেপ্টেম্বর পলকের সাবেক আইনজীবি এডভোকেট সাদ্দাম হোসেন ঢাকা জেলা প্রশাসকের গান শাখায় লিখিতভাবে অবহিত করে জানান এবং আবেদনটি রিসিভও করেন। গত ৫ আগস্ট পলক ঢাকার শেরেবাংলা নগরে বি-৫ ব্লকে নিজ বাসায় অবস্থান করছিলেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় সঙ্গীয়দের নিয়ে তিনি জাতীয় সংসদের চতুর্থ তলায় স্পীকারের কক্ষে অবস্থান নেন। এরপর ওই কক্ষেই নিজ নামে লাইসেন্সকৃত ৩২ বোর পিস্তল (লাইসেন্স নং ২১০/২০১০ F 69822) এবং ১২ বোর শর্টগান (লাইসেন্স নং ৯০২/২০১০ শর্টগান নং ৮৭০) রাখেন। কিন্তু ওই আবেদন বা অবহৃতকরণ জিডিটি শেরে-ই বাংলা নগর থানায় গ্রহণ করা হয়নি। এরপর গত ৩ সেপ্টেম্বর সরকারঘোষিত অস্ত্র জমাদানের সময়সীমা শেষ হয়। তারপর তিনি গত ১৪ নভেম্বর ওই সংক্রান্ত জিডি শেরে ই বাংলা নগর থানায় জমা দিলেও তা গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি অনলাইনে জিডি করলেও তা গৃহিত হয়নি।
তিনি আরো দাবী করেন, গত ২১ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচীব আব্দুল মোমেন স্বাক্ষরিত পরিপত্রে জিডি গ্রহণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে জিডি করার অধিকার রয়েছে দাবী করে তিনি জানান,ওই জিডি গ্রহণ না করা নাগরিক অধিকার হরণই শুধু নয় বরং মানবাধিকার হরণও বটে এবং বৈষম্যর শিকার। তিনি অনলাইন, অফলাইনে নানা ভাবে চেষ্টা স্বত্বেও প্রায় তিন মাস থেকে যোগাযোগ করেও থানায় কোন প্রতিকার পাননি। জিডি গ্রহণ করা না হলে ভবিষ্যতে পলক নতুন সমস্যা ও মামলার সম্মুক্ষিণ হতে পারেন দাবী করে এবিষয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নির্দেশনা কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেরে-ই বাংলা নগর থানার ওসি মোঃ গোলাম আজম জানান, অস্ত্র দুটির লাইসেন্স পলকের নামে হওয়ায় তাকেই স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে জিডি দায়ের করতে হবে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের এমন নির্দেশনা থাকায় সঙ্গত কারণেই জিডি গ্রহণ করতে পারেননি তিনি।