
শাহ্ সোহানুর রহমান, রাজশাহী ব্যুরো: ঈদুল আজহার আগের এক অপ্রীতিকর ঘটনা থেকে শুরু। জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি পৌরসভার দানেজপুরের ব্রিজের ওপর বসা অবস্থায় আরিফ নামের এক যুবক তার বন্ধুর সঙ্গে অপমানজনক আচরণ করায় বাইরের এক তরুণকে থাপ্পড় মারে।
সে খবর পৌঁছে যায় বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা শামীম হোসেনের কাছে। যিনি কুখ্যাত সন্ত্রাসী ‘কিনা’কে পাঠান প্রতিশোধ নিতে। চোখের পলকে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। কিনা ঘটনাস্থলে গিয়ে অকথ্য ভাষায় আরিফকে গালিগালাজ করে ও প্রকাশ্যে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক পেটাতে শুরু করে। মারধরের শিকার হয়ে আরিফ হাসপাতালে ভর্তি হন। এখান থেকেই শুরু হয় এক রক্তাক্ত রাজনীতির গল্প।
এর জের ধরে ১০–১২ দিন পর আরিফ ব্যক্তিগত রাগের বশবর্তী হয়ে পল্লি বিদ্যুৎ অফিসের সামনে কিনাকে পেয়ে পেছন থেকে মাথায় আঘাত করে, ফলে কিনা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। সাধারণ এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হঠাৎ করে মূল অভিযুক্ত আরিফের পরিবর্তে আসামির তালিকায় যুক্ত হয়ে যান পাঁচবিবির সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও পৌর মেয়র বা উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জিয়াউল ফেরদৌস রাইট।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও স্থানীয়দের মতে, এটি একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক চক্রান্ত। যার উদ্দেশ্য রাইটের জনপ্রিয়তা নষ্ট করা এবং তাকে রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করা। রাইট ও তার পরিবার এই মামলা মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করে এর কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে।
রাইটের একমাত্র মেয়ে নাফিসা ফেরদৌস উদিতা বলেন, “আমার বাবা কোনোভাবেই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। সন্ত্রাসী শামীম ও গফুর পরিকল্পিতভাবে বাবার জনপ্রিয়তা ধ্বংস করতে এই মিথ্যা মামলার নাটক সাজিয়েছে।”
রাইটের বড় ভাই জান্নাতুল কুদ্দুস ফাইট বলেন, “যেখানে কিনা হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী পর্যন্ত বলছেন আরিফ একাই তাকে মেরেছেন, সেখানে আমার ভাইকে মামলায় জড়ানো সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমাদেরকে রাজনীতি সহ সব দিক থেকে দুর্বল করা তাদের মূল লক্ষ্য।”
প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, ঘটনার ত্রিসীমানায় ছিলেন না অভিযুক্ত বিএনপি নেতা রাইট।
হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী চা দোকানি আতিক জানান, “আমি নিজ চোখে দেখেছি, আরিফ একাই এসে কিনাকে পেছন থেকে কয়েকটি বাড়ি মেরে চলে যায়। রাইট ভাই তো ছিলই না সেখানে।”
আরো এক প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় দোকানদার সিরাজুল ইসলাম বলেন, “ঘটনাটা মুহূর্তের মধ্যে ঘটে যায়। আরিফ একাই ছিল। এরপর মানুষ কিনাকে হাসপাতালে নেয়।”
পাঁচবিবির স্থানীয় বাসিন্দা, বিএনপি নেতৃবৃন্দসহ সুশীল সমাজ মনে করছে, এগুলো সব বহিষ্কৃতদের ছায়া রাজনীতির অংশ।
দানেজপুর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মাহবুব মণ্ডল জানান,”পাঁচবিবির সবাই জানে, রাইট ভাই সৎ, জনপ্রিয় এবং পরিশ্রমী। তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে শামীম-গফুর চক্র বড় ধরনের অন্যায় করেছে।”
এ বিষয়ে পাঁচবিবি উপজেলা সুজনের সভাপতি জুলফিকার ফেরদৌস বলেন, “ঘটনা স্পষ্ট, সকলেই জানে কে দোষী আর কে নির্দোষ। এখানে রাইট এর বিরুদ্ধে নোংরা রাজনীতিতে নেমেছে শামীম ও গফুর বাহিনী।”
স্থানীয় ও জেলা বিএনপির নেতারাও একটি আলোচনা সভায় একে ‘ষড়যন্ত্র’ এবং ‘মানহানিকর নাটক’ বলে আখ্যায়িত করছেন।
জয়পুরহাট জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম. এ. ওহাব বলেন, “পাঁচবিবি বিএনপিকে দুর্বল করার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে রাইটকে ফাঁসানো হইছে। থানায় মামলা দায়েরের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করা উচিত ছিল। এটি একটি স্পষ্ট ষড়যন্ত্র।”
পাঁচবিবি উপজেলার বিএনপি’র সভাপতি সাইফুল ইসলাম ডালিম বলেন, তারা বিএনপি থেকে বহিস্কৃত হয়েও বিএনপির নাম ব্যবহার করে পুরো পাঁচবিবি কে অশান্ত করে এখানে নৈরাজ্য , দুর্নীতি চাঁদাবাজি , মারামারি সহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম করছে। তারা বিএনপির নাম ক্ষুন্ন করার জন্য অন্যায়ভাবে রাইটকে এই মামলায় ফাঁসিয়েছে।
এ বিষয়ে জয়পুরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন বলেন,”রাইট ষড়যন্ত্রের শিকার। তারা কেবল রাইটকে নয়, পুরো পাঁচবিবি বিএনপিকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র করছে। তাদের এই ষড়যন্ত্র গুলোকে কঠোর ভাবে প্রতিরোধ করতে হবে।”
এই দিকে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জিয়াউল ফেরদৌস রাইট মুঠোফোনে বলেন, “আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ, আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে বহিষ্কৃত বিএনপির নেতারা। তারা শুধু আমার সাথেই প্রতারণা করেনি, তারা নিয়মিত প্রতারণা করে চলেছে পাঁচবিবির জনগণ, সমাজ ও শহীদ জিয়ার প্রাণের দল বিএনপির সাথে।”
এদিকে পাঁচবিবি থানার ওসির বরাতে জানা যায় বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত শামীম হোসেন ও আ গফুর মণ্ডলের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে পাঁচবিবি সুজনের সভাপতির ওপর হামলা, ছিনতাই,লুট, হত্যা চেষ্টা সহ থানায় ও কোর্টে একাধিক মামলা রয়েছে।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মইনুল ইসলাম বিএনপি নেতা রাইটের মিথ্যা মামলা সম্পর্কে বলেন,” মামলায় আসামির নাম দিলেই তো আর সে দোষী হয়ে যায়না। মামলার পূর্ণাঙ্গ সঠিক তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।”