শুক্রবার, ২৬শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,১০ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

পাসপোর্ট হারালে বা বাতিল হলে করণীয়

যায়যায়কাল প্রতিবেদক: সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৯৭ জনের কূটনীতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম-খুন ও জুলাই অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়।

পাসপোর্ট কী, বাংলাদেশে কয় ধরনের পাসপোর্ট আছে, কোন ধরনের পাসপোর্ট কারা ব্যবহার করেন, পাসপোর্ট বাতিল বা হারিয়ে গেলে কী করবেন, ট্রাভেল ডকুমেন্ট কী—জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।

পাসপোর্ট একটি আন্তর্জাতিক ভ্রমণ নথি, যা সরকার দেশের নাগরিকদের দেয়। পাসপোর্ট নাগরিকদের পরিচয় ও জাতীয়তা নিশ্চিত করে। পাসপোর্টের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি বিদেশে ভ্রমণ, বসবাস, কাজ ও চিকিৎসাসহ নানা প্রয়োজনে অবস্থানের অনুমতি পান।

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী পাসপোর্টের মাধ্যমে দেশের বাইরে যাওয়া ও ফেরা আমাদের মৌলিক অধিকার।

কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে যদি অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ থাকে, মামলা হয়, বিচার চলমান থাকে বা রাজনৈতিক কোনো কারণ থাকে, তাহলে তার পাসপোর্ট স্থগিত বা বাতিল করা হতে পারে, যাতে তিনি দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে না পারেন।

অপরাধী বা অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি দেশের বাইরেও অবস্থান করেন, সেক্ষেত্রেও সরকার ওই ব্যক্তির পাসপোর্ট বাতিল করে দিতে পারে। যাতে অভিযুক্ত স্বাধীনভাবে পাসপোর্ট ব্যবহার করে অন্যান্য দেশে চলাচল করতে না পারেন।

পাসপোর্ট বাতিল বা হারিয়ে গেলে করণীয়: দেশের বাইরে থাকাবস্থায় যদি কারও পাসপোর্ট বাতিল হয় তবে তাকে  সে দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনে আগের পাসপোর্ট জমা দিয়ে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হবে কিংবা মিশন থেকে ট্রাভেল পাস বা ডকুমেন্ট নিয়ে দেশে ফিরে আসতে হবে।

দেশে থাকাবস্থায় পাসপোর্ট বাতিল হলে নতুন পাসপোর্টের জন্য পাসপোর্ট অধিদপ্তর বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। তবে পাসপোর্ট বাতিল হলে সাধারণত আদালতের শরণাপন্ন হতে হয় এবং পাসপোর্ট পাওয়া বা না পাওয়া আদালতের রায়ের ওপর নির্ভর করে।

হারিয়ে যাওয়া পাসপোর্ট ফিরে পেতে অবশ্য তেমন ঝামেলা পোহাতে হয় না। হারিয়ে যাওয়ার বিষয় উল্লেখ করে থানায় করা সাধারণ ডায়েরির (জিডি) কপিসহ পাসপোর্ট অধিদপ্তরে নতুন আবেদন করলেই পেতে পারেন পাসপোর্ট।

দেশের বাইরে থাকাবস্থায় পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে ওই দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনে যোগাযোগ করে ফেরার জন্য ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু ওই দেশে কাজের সূত্রে বা অন্যান্য প্রয়োজনে স্থায়ীভাবে থাকলে বাংলাদেশ মিশনে আবেদন করে নতুন পাসপোর্ট পাওয়া যায়।

ট্রাভেল পাস বা ডকুমেন্ট: বিদেশে গিয়ে পাসপোর্ট হারিয়ে ফেললে দেশে ফেরার জন্য যে অনুমতিপত্র দেওয়া হয়, তাই ট্রাভেল পাস বা ডকুমেন্ট। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন থেকে সাময়িক ভ্রমণ পাস বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট ইস্যু করা হয়।

তবে দেশে এসে অবশ্যই নতুন পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে। অন্যথায় ট্রাভেল ডকুমেন্ট বা ট্রাভেল পাস দিয়ে আর কোনো দেশে ভ্রমণ করা যাবে না।

বাংলাদেশে কয় ধরনের পাসপোর্ট আছে: বিশ্বজুড়ে পাসপোর্টের রং ও নকশা ভিন্ন ভিন্ন হয়। তবে কোনো দেশ যেই রঙের পাসপোর্টই ইস্যু করুক না কেন, সেটি অবশ্যই আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (আইকাও) থেকে অনুমোদিত হতে হবে। তবে বিশ্বজুড়ে পাসপোর্টে সাধারণত লাল, নীল, সবুজ ও কালো—এই চার রঙের ভিন্ন ভিন্ন শেড ব্যবহার করা হয়।

বাংলাদেশে সাধারণভাবে সবার জন্য সবুজ রঙের পাসপোর্ট চালু থাকলেও নীল ও লাল রঙের পাসপোর্টও রয়েছে।

কোন ধরনের পাসপোর্ট কারা ব্যবহার করেন

  • সবুজ পাসপোর্ট বা সাধারণ পাসপোর্ট
  • নীল পাসপোর্ট বা অফিশিয়াল পাসপোর্ট
  • লাল পাসপোর্ট বা কূটনীতিক পাসপোর্ট

সবুজ পাসপোর্ট: সবুজ পাসপোর্ট সাধারণ পাসপোর্ট বা অর্ডিনারি পাসপোর্ট নামে পরিচিত। এটি বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ইস্যু করা হয়। জন্মসূত্রে বা বৈবাহিক সূত্রে যারা বাংলাদেশি, তারা এই পাসপোর্ট পেতে পারেন। বিদেশে যাওয়ার জন্য এই পাসপোর্টধারীদের সংশ্লিষ্ট দেশের ভিসা প্রয়োজন। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এটি দেশের সব সাধারণ নাগরিকের মৌলিক ভ্রমণ অধিকার নিশ্চিত করে।

নীল পাসপোর্ট: নীল পাসপোর্ট অফিশিয়াল পাসপোর্ট নামে পরিচিত। সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা সরকারি কাজে বিদেশ ভ্রমণের জন্য এই পাসপোর্ট ব্যবহার করেন। এটি পেতে সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিসের অনুমোদন বা গভর্নমেন্ট অর্ডার (জিও) প্রয়োজন। নীল পাসপোর্টধারীরা কমপক্ষে ২৭টি দেশে বিনা ভিসায় ভ্রমণ করতে পারেন। তবে সরকারি কাজ ছাড়া নীল পাসপোর্ট ব্যবহার করা যায় না।

লাল পাসপোর্ট: লাল পাসপোর্টকে কূটনৈতিক পাসপোর্ট বা ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট বলা হয়। এটি রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য এবং তাদের স্বামী-স্ত্রী, উচ্চ আদালতের বিচারপতি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রধান, মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বিদেশে বাংলাদেশি মিশনের কর্মকর্তাদের জন্য ইস্যু করা হয়। লাল পাসপোর্টধারীদের বিদেশে ভ্রমণের জন্য ভিসার প্রয়োজন হয় না, তারা সংশ্লিষ্ট দেশে পৌঁছে অন-অ্যারাইভাল ভিসা পান।

পাসপোর্ট ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের বাইরে যাতায়াত নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হলেও এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত ও নিয়ম মেনে চলতে হয়। প্রতিটি পাসপোর্টের আলাদা ব্যবহার ও গুরুত্ব রয়েছে। এর সঠিক ব্যবহার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ