রবিবার, ১৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১লা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

পীরগঞ্জে শীতের আগেই খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

মিফতাহুল ইসলাম, পীরগঞ্জ (রংপুর) : শীতের আমেজ শুরুর সাথে সাথে খেজুরের রস সংগ্রহ কাজে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছে পীরগঞ্জের গাছিরা। কার আগে কে কত বেশী পরিমাণ রস সংগ্রহ করবে এই প্রতিয়োগিতায় নেমে পড়েছে তারা।

গুড় ব্যবসায়ীরাও আগাম তাগিদ দিচ্ছে গুড় তৈরির করতে গাছিদের। এমনিতেই খেজুরের গুড় দিয়ে পিঠা পায়েস এর মজাই আলাদা। আর এই খেজুর গুড়ের পিঠা পায়েস খেতে কার না মন চায়। রংপুরের পীরগঞ্জের প্রত্যন্ত পল্লীতে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ৮ থেকে ৯টি স্থানে খেজুরের গুড় তৈরির কারখানা চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বুধবার সকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা কথা হয় রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার মৃত আক্কিল হোসেনের ছেলে গাছি তাজেল মিয়ার সাথে।

তিনি বলেন, শুধু পীরগঞ্জের মাটিতেই বিগত ২৮ বছর ধরে খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরির কাজ করে আসছি। প্রতিবছর অন্যের কারিগর হিসেবে কাজ করছি। এবার আমার ছেলে লালন মিয়াকে সাথে নিয়ে কাশিমপুর গ্রামে ১শ খেজুর গাছ লিজ নিয়ে গাছ পরিষ্কার করছি। আশা করি কুয়াশার আগাম বার্তা যেভাবে জানান দিচ্ছে এতে চলতি বছর গাছ ভালো রস সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। তাই গাছের ডাল-পালা পরিস্কার এবং রস আহরনের জন্য তৈরি করে নিচ্ছি। ক’দিন আগে আমরা এই এলাকায় এসেছি। এখানে এসেই আগে রাত্রি যাপনের জন্য ঘর এবং গুড় তৈরির চুল্লী তৈরির কাজ শেষ করেছি। এখন রস সংগ্রহের জন্য আমরা গাছ কেটে প্রস্তুত করছি।

স্থানীয়রা বলছেন, রাজশাহী থেকে ৩টি দল প্রতিবছর এই এলাকায় খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরি করে থাকে। কাশিমপুর, ভাগজোয়ার এবং জাহাঙ্গীরাবাদ এলাকায় এরা গুড় তৈরির কারখানা চালু করে প্রতিবছর। এলাকার গুড়ের চাহিদা মিটিয়েও আশপাশের জেলাগুলোতে গুড় রপ্তানি করা হয়। প্রতিদিন অর্ধশতাধিক লোক গুড় তৈরি কাজে নিয়োজিত থাকে। এলাকার অধিকাংশ খেজুরের গাছ রাস্তা এবং পুকুর পাড়ে রয়েছে। একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই খেজুরের গাছ থেকে প্রতি বছর বাড়তি আয় করে থাকেন গ্রামের লোকজন। যে কারনে এলাকার রাস্তাঘাটসহ পরিত্যক্ত স্থানেও নতুন করে খেজুরের গাছের বীজ রোপণ করছেন অনেকেই।

খেজুর গাছ মালিক কাশিমপুর গ্রামের আব্দুল মতিন হাজির পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গাছ প্রতি ২ কেজি হারে গুড় পাবে গাছ মালিকরা। প্রতিবছর এই চুক্তিতে গাছগুলো লিজ দেয়া হয়।

ভাগজোয়ার গ্রামের ফজলু মিয়া বলেন, আমাদের এখানে প্রায় মানুষের বাড়িতে, পুকুর পাড়ে, আবাদি জমির আইলে এবং রাস্তার দু’পাশে এজন্যই এসব খেজুর গাছ রোপণ করা হয়েছে। এই গাছ আবাদের কোনো ক্ষতি করছে না। আবার প্রতি বছর একটা মোটা অংকের টাকা বাড়তি হিসাবে পাওয়া যাচ্ছে। গাছিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত গুড় দিয়ে সারা বছর প্রয়োজন মিটে যায়। আবার বিক্রি করে মোটা অর্থও পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান সরকার জানান, পীরগঞ্জ উপজেলার সবখানেই খেজুর গাছ রয়েছে বিশেষ করে মিঠিপুর, শানেরহাট এবং পাঁচগাছি ইউনিয়নে। প্রতিবছর রাজশাহী এলাকা থেকে গাছিরা এখানে এসে গুড় তৈরি কাজে নিয়োজিত থাকে। তাদের দেখে এলাকার কিছু লোকজন রস সংগ্রহ এবং গুড় তৈরির কাজে জড়িয়ে পড়ে। উপজেলায় খেজুর গাছের বাগান না থাকলেও প্রায় এলাকায় এবং বসতবাড়িতে ও কৃষি জমির আইলেও গাছ রোপণ করেছেন স্থানীয়রা। এ অঞ্চলের কৃষক খেজুর গাছ থেকে বাড়তি আয় করে থাকেন। গাছিদের খেজুরগাছ কাটার কাজটি শিল্প আর দক্ষতায় ভরা। ডাল কেটে গাছের বুক চিড়ে রস বের করার মধ্যে রয়েছে বুদ্ধিমত্তা। এ জন্য রস সংগ্রহ কাজে নিয়োজিত প্রকৃত গাছিদের যথেষ্ট কদর রয়েছে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ