মঙ্গলবার, ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কিশামত বদি উচ্চ বিদ্যালয়

প্রধান শিক্ষক থেকে আয়া: এক স্কুলে একই পরিবারের ১২ জন

মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী: নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার রণচন্ডি ইউনিয়নের কবিরাজের বাজারে অবস্থিত কিশামত বদি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক থেকে আয়া পর্যন্ত সবাই একই পরিবারের।

গত ২ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক অনন্ত কুমারের দীর্ঘ ১৬ বছরে কিসামত বদি উচ্চ বিদ্যালয়টিকে পরিবারতন্ত্রে রূপান্তরিত করার একটি তালিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তে সেটি ভাইরালও হয়। এতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে সমাজের সকল স্তরের মানুষের মাঝে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটিতে একমাত্র ইসলাম ধর্মের একজন শিক্ষক মুসলিম রয়েছেন। তিনি ছাড়া বাকি সবাই সনাতম ধর্মের।

আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ ১৬ বছরে প্রধান শিক্ষক অনন্ত কুমার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এমন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার সরেজমিনে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কিসামত বদি উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০২ সালে এমপিওভুক্ত হয় বিদ্যালয়টি । এসময় প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসাবে জমিদাতা কুলোদা মোহন রায়কে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করা হয়। সভাপতি কুলোদা মোহল রায় প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে সেসময় অন্তত কুমারকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। প্রতিষ্ঠানে নিজের আধিপত্য বিস্তারের জন্য কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজের ভাই, স্ত্রী, ভাইয়ের স্ত্রীসহ পরিবারের সকলকে নিয়োগ দেন প্রধান শিক্ষক অনন্ত কুমার।

প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কুলোদা মোহন রায়ের মৃত্যুর পর প্রধান শিক্ষক নিজের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির ছেলে বিমল চন্দ্র রায়কে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্বে দেন। পরে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক দুজনে মিলে দুই পরিবারের লোকজনদের নিয়োগ প্রদান করেন। বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক থেকে শুরু করে আয়া পর্যন্ত মোট ১৮ জন কর্মরত রয়েছেন। তার মধ্যে শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মের একজন শিক্ষক ছাড়া বাকিরা সকলেই সনাতন ধর্মের। এর মধ্যে ১২ জন প্রধান শিক্ষকের পরিবারের।

প্রধান শিক্ষক অনন্ত কুমারের স্ত্রী সহকারী প্রধান শিক্ষক ববিতা রানী রায় জানান, আমার স্বামী এই বিদ্যালয়ের প্রধান। আমার ভাসুর অন্নদা মোহন রায়, দেবর রঘুনাত চন্দ্র রায় ও তুলারাম রায়। তারা সকলে আপন সহোদর। এছাড়াও সহোদরের স্ত্রী, ভাগিনা, ভাগিনার বউও নিয়োগ পেয়েছেন বলে তিনি স্বীকার করেন।

প্রধান শিক্ষক অনন্ত কুমার বলেন, আমি যা করেছি নিয়ম মেনে করেছি। একই পরিবারের প্রার্থী নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর না দিয়ে ইউএনও কার্যালয়ে যাবেন বলে দ্রুত সটকে পড়েন তিনি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফ-উজ-জামান সরকার বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। এ বিষয়ে কিছু জানেন না তিনি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এমন একটি তালিকা দেখেছেন বলে স্বীকার করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী হক বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া শিক্ষকের নামের তালিকা দেখে প্রধান শিক্ষককে ডেকেছিলাম। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ