শুক্রবার, ১৩ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২৭শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

 প্রবাসী–অধ্যুষিত মাদারীপুর সবচেয়ে ‘দরিদ্র’জেলা 

মো. রিপন হাওলাদার, মাদারীপুর:  বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের দারিদ্র্য মানচিত্র ২০২২’ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন মাদারীপুরের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। মানচিত্রে প্রবাসী–অধ্যুষিত এই জেলাকে দেশের সবচেয়ে দরিদ্র জেলা এবং সবচেয়ে গরিব উপজেলা হিসেবে জেলার ডাসার উপজেলাকে উল্লেখ করা হয়েছে। বিবিএসের প্রতিবেদনে সঠিক তথ্য উঠে আসেনি বলে অভিযোগ তুলেছেন জেলার বাসিন্দারা।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য দেখে রীতিমতো অবাক হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মাদারীপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সহসভাপতি এনায়েত হোসেন। তিনি বলেন জেলায় প্রবাসী আয় ছাড়া তেমন কোনো কর্মসংস্থান নেই এটি সত্য। কৃষি খাতেও চাষিরা সচ্ছল নন। জেলায় এখন পর্যন্ত কোনো অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে ওঠেনি। তবে রেমিট্যান্সের দিক থেকে এই জেলা অন্যান্য জেলা থেকে  অনেক এগিয়ে আছে। এই হিসাবে কোনোভাবেই এই জেলা দরিদ্র জেলা হিসেবে উপস্থাপিত হতে পারে না।
মাদারীপুর সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান সাইদুর রহমানের মতে, মাদারীপুরে এমন কোনো গ্রাম নেই যেখানে প্রবাসী নেই। রাস্তাঘাট, স্কুল–কলেজ—সবকিছুই অন্য অনেক জেলার তুলনায় উন্নত। সেখানে দরিদ্র জেলা হয় কীভাবে? বিবিএসের এই জরিপ যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে করা হয়নি। এটা হতাশাজনক।
সচেতন অনেকে মনে করেন আনুমানিক শতকরা ৯০ ভাগ শ্রমিক মাগুরা, ঝিনাইদাহ, খুলনা, কুষ্টিয়া ও যশোর থেকে ভাড়া করে আনতে হয়। বিভিন্ন জেলা থেকে এসে এই জেলায় রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে অনেকে, এই খানকার  ইট ভাটার শ্রমিক রা অন্য অঞ্চলের । জেলার বেশির ভাগ নাগরিকই সুখী। মাঠপর্যায়ে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে দক্ষ জনবল দ্বারা এই জরিপ আবার করার দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুর জেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, তিনি ২০২২ সালের ২ অক্টোবর এখানে যোগদান করেন। যোগদানে আগেই এই প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। আর্থসামাজিক নানা বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে এ ধরনের প্রতিবেদন দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘মাদারীপুর জেলাকে সারা দেশের মধ্যে দরিদ্র জেলা ঘোষণা করার প্রতিবেদনটি আমি নিজে দেখছি। আমি নিজেও বিব্রতকর অবস্থায় আছি। কেন এ রকম হলো তা আমিও বুঝতে পারছি না। দেখি, স্যারদের সঙ্গে এ বিষয় কথা বলতে হবে আমার।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ বিবিএসের দারিদ্র্য মানচিত্র নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মাদারীপুর সদর উপজেলার অন্তর্গত ধুরাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান তার ফেসবুক লিখেছেন, মাদারীপুর জেলা বাংলাদেশের মধ্যে ৩য় বৃত্তবান জেলা বলে আমরা ভি জি এফ ও ৪০ দিনের কর্মসূচি পাইনা।আর কোথা থেকে কোন অসত্য তথ্য দিয়ে মাদারীপুর কে গরিব জেলা যারা বানিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
শামিম মাতুব্বর নামে  ইতালি প্রবাসী তার ফেইবুক লিখেন মাদারীপুর জেলার শতকরা অন্তত ৯০ ভাগ পরিবারে এক বা একাধিক সদস্য বিদেশে থাকেন। কোনো কোনো পরিবারে দেশে শুধু একজন সদস্য থাকেন—বাকিরা সবাই থাকেন বিদেশে এবং বিদেশে থাকার ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্য নয়, ইতালি-ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের প্রাধান্য বেশি। যুবক মানুষ গ্রামেই থাকেন না, ১৮ থেকে ২০ হলেই প্রায় সকল যুবক প্রবাস করতে ইচ্ছে পোষন করে। যাঁদের পরিবারে বিদেশে নেই, তাঁদের পরিবারে কর্মক্ষম পুরুষ নেই। সবচেয়ে গরিব উপজেলা নাকি ডাসার।এটাও কি মানার বিষয়!  বিবিএসের কর্মকর্তাদের  অনুরোধ করব, কোনো দিন ইউরোপ না গেলে গরিবের ইউরোপ হিসেবে ডাসার ঘুরে আসেন।’
বায়জিদ হাওলাদার নামে ব্যবসায়ী তার ফেইবুকে লিখেন ভূয়া সমীক্ষা নিউজের জন্য তীব্র প্রতিবাদ জানাই।মাদারীপুর জেলাকে নিয়ে ও ডাসার উপজেলাকে নিয়া এমন মনগড়াভাব সমীক্ষা নিউজের নিন্দা জ্ঞাপন করছি।মাদারীপুর জেলায় না আসলে এর সম্পর্কে সঠিক ধারনা পাবেন না,আমাদের উৎপাদনশীলতার শিল্প কলকারখানা না থাকলে ও আমাদের রয়েছে লক্ষ লক্ষ রেমিটেন্স যোদ্ধা যাঁদের কল্যানে শুধুমাত্র মাদারীপুর না সারা বাংলাদেশের রোল মডেল মাদারীপুর জেলা।
Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *