মঙ্গলবার, ৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,২২শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই একাডেমিক ভবনের সামনে মন্দির উদ্বোধন

মো. রিফাত ইসলাম, বেরোবি : রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে(বেরোবি) প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া একাডেমিক ভবনের সামনে মন্দির উদ্বোধন করেন সনাতনী বিদ্যার্থী সংসদ (এসবিএস)।

সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টায় সনাতনী বিদ্যার্থী সংসদের সভাপতি শয়ন কুমার সাহার নেতৃত্বে এই মন্দির উদ্বোধন করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন সনাতনী বিদ্যার্থী সংসদের ৫০ এর অধিক সদস্য ও সাধারণ শিক্ষার্থী।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে সনাতনী শিক্ষার্থীরা মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতি বছর দাবি জানিয়ে আসছে,বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপাচার্যের আসলে বাজেট সংকলন, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও নানাবিদ জটিলতা তা হয়ে ওঠেনি। সনাতনী শিক্ষার্থীর দাবির প্রেক্ষিতে অস্থায়ী উপাসনালয়ের জায়গা নির্ধারণ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উপাসনালয়টি বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ভবনের ১ ও ২ এর মাঝে। তবে জন্মাষ্টমী পালনকালে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই মন্দির উদ্বোধন করেন বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা।

এদিকে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া মন্দির উদ্বোধন ও একাডেমিক ভবনের সামনে এবং ১ নং গেটের পাশে জায়গা নির্ধারণ করায় চলছে সমালোচনার ঝড়।

এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন,প্রশাসন শুন্য অবস্থায় কিভাবে এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজের উদ্বোধন করেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।তাছাড়া একাডেমিক বিল্ডিংয়ের সামনে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি প্রশ্নের সৃষ্টি করে। কেননা মন্দির একটি ধর্মীয় উপাসনালয় এখানে নানা সময় ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান হবে যা একাডেমিক বিল্ডিংয়ের পাশে হওয়ায় তাদের কাজের বিঘ্নিত ঘটতে পারে।শুধু তাই নয় কোনো অনুষ্ঠান চলাকালীন একাডেমিক ক্লাস পরীক্ষাতেও মনযোগ বিঘ্নিত ঘটতে পারে। আমরা অনুরোধ করব সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক।

মন্দির উদ্বোধনের বিষয়ে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী রাহগীর মাহি বলেন,বাংলাদেশ একটি সম্প্রীতির দেশ। সারাদেশে যখন অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে এমন সময় উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর ইন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অনুপস্থিতিতে অবৈধভাবে জায়গা দখল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং গেইটের কাছে একাডেমিক বিল্ডিংয়ের নিচে কেন্দ্রীয় মন্দির উদ্বোধনের নাটক সাজিয়ে চরম উগ্রবাদীতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ ছাত্র হিসেবে এমন স্বৈরাচারী কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা জানাই।

এ বিষয়ে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী লাতিফুর খাবির মাহী বলেন,প্রসাশনের অনুমতি ব্যতিত কেন!! হিন্দুরা তাদের ধর্ম পালন করবে, তাতে কোন বাধা নেই। কিন্তু বেআইনি ভাবে এগুলা করার মানে কি? এগুলা কি উদ্দেশ্য প্রবন ভাবে করা হচ্ছে!! যখন প্রসাশন একটু নরবর বা দুর্বল তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম কানুন কে ত্বোয়াক্কা না করেই বা গুরুত্ব না দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের বেআইনি ভাবে স্থাপনা তৈরি!! এদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া উচিত৷

মন্দির স্থাপনের বিষয়ে মোঃ সুলাইমান বলেন, দেশে ধর্ম চর্চা হোক এটায় প্রত্যাশা। কিন্তু মন্দিরের মতো একটা উপাসনার জায়গা এভাবে প্রশাসন ব্যতীত চালু করতে হলো। দেশের এরকম পরিস্থিতিতে সুযোগ নেওয়া অনৈতিক হয়েছে বলে মনে করছি। এটাকে জবাবদিহিতা আওতায় আনতে হবে।

ওয়াহিদুর জামান ওয়াহিদ বলেন, একাডেমিক ভবনগুলোর আশেপাশে যেখানে ল্যাব রুম করার অনুমতি দেয় না।সেখানে জোরপূর্বক মন্দির বানানো অযৌক্তিক। একটা যৌক্তিক সমাধানের মধ্যে দিয়ে আগানো উচিত ছিল।

প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া মন্দির উদ্বোধন ঠিক হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ বেরোবির সভাপতি শয়ন কুমার সাহা বলেন, আপনি বলুন আমাদের মন্দির প্রয়োজন আছে কিনা? আমরা বিগত ১৫ ধরে মন্দির চেয়ে আসছি কিন্তু স্থায়ী মন্দির পাইনি। এখন প্রশাসন বলতে কি কেউ আছে কার কাছে অনুমতি নিব।

প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া মন্দির উদ্বোধন করায় যদি সমালোচনা উঠে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেব, আমরা সেটি মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত আছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেরোবি রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী বলেন, মন্দির উদ্বোধনের অনুমতি বিষয়টি আমার জানা নেই। আমরা এই বিষয়ে অবগত না।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on tumblr
Tumblr
Share on telegram
Telegram

, , বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ