যায়যায়কাল প্রতিবেদক: গণ আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত সরকার আবারও ষড়যন্ত্র করছে অভিযোগ করে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে জনগণকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আজকে দেশের চারদিকের অবস্থা দেখে অনেকে একটু আতঙ্কিত হচ্ছেন, একটু উদ্বিগ্ন হচ্ছেন এগুলো কী হচ্ছে! আসলে আপনাদের বুঝতে হবে। আমাদের সেই শত্রুরা যারা সামনে থেকে চলে গেছে, পেছনে থেকে তারা দেশকে আবার অস্থির করে তুলছে। এখানে আমাদের অত্যন্ত সজাগ থাকতে হবে। দুর্ভাগ্য আমাদের, আমাদের দেশের মানুষের কেন জানি না সহনশীলতার অভাব হয়ে গেছে। একটু ধৈর্য ধরতে হবে।
রাজধানীতে গত দুই দিনে সংঘটিত সংহিসতার প্রসঙ্গ টেনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকার হোটেল লেকশোরে ‘তারেক রহমান: পলিটিক্স অ্যান্ড পলিসিস কনটেম্পরারি বাংলাদেশ’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন মির্জা ফখরুল।
দেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই সরকারকে আমাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে। কারণ এই সরকার ফেল করলে অভ্যুত্থান ফেল করে যাবে, বিপ্লব ফেল করে যাবে…আমরা আবারও সেই অন্ধকারে চলে যাব। সুতরাং এই বিষয়গুলো নিয়ে আমার মনে হয় আপনাদের পজেটিভ চিন্তা করা প্রয়োজন।
রাজধানীতে কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে গত কয়েকদিনের সংঘর্ষের প্রসঙ্গেও কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব।
ছাত্রদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে যে সমস্ত কোমলমতি বালকেরা, ছাত্ররা তারা যে সমস্ত কাজ করছে, তাদের এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ধৈর্য ধরতে হবে। এটা একটা অন্তবর্তীকালীন সরকার, এই সরকারের পক্ষে সব কিছু একসঙ্গে করে ফেলা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে, যাতে করে ন্যূনতম সংস্কারের পরে…, গতকাল তারেক রহমান বলেছেন, সংস্কার করতে হবে, আমরা সংস্কারবিরোধী নই। সংস্কার করে আমরা নির্বাচনে যেতে চাই। কেন নির্বাচনে যেতে চাই, এই কথা আমি বারবার বলেছি। নির্বাচন ছাড়া এ ধরনের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়, এই ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। একমাত্র নির্বাচিত সরকারই পারে এই সমস্ত সমস্যা সমাধান করতে। অন্তত তার পেছনে যে জনশক্তি থাকে, যে ম্যান্ডেট থাকে, সেই ম্যান্ডেট নিয়েই সেটা তার পক্ষে করা সম্ভব হবে।
সংবাদপত্রের ওপর আঘাতকে ‘ভয়াবহ কাজ’ বলে মনে করেন বিএনপির মহাসচিব।
দেশের চলমান ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, একটা বিষয় অত্যন্ত জরুরি বলে আমি বলতে চাই, দুর্ভাগ্যক্রমে আজকে একটা ভয়াবহ কাজ শুরু হয়েছে। যেটা হচ্ছে, সংবাদপত্রের ওপর আঘাত; স্বাধীন মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে আঘাত। যার জন্যে আমরা সবসময় সংগ্রাম করেছি, লড়াই করেছি। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পরে তিনি প্রথম সংবাদপত্রকে মুক্ত করেছিলেন। আজকে যখন দেখছি, কিছু সংখ্যক হঠকারী, কিছু সংখ্যক উসকানিদাতা তারা বিভিন্নভাবে এই সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে বিঘ্নিত করবার চেষ্টা করছেন, ধ্বংস করার চেষ্টা করছেন, যেটা কোনোমতেই সচেতন মানুষের, দেশপ্রেমিক মানুষের মেনে নেওয়া উচিত নয়। আমি অনুরোধ জানাব সংশ্লিষ্ট সকলকে যে, অনুগ্রহ করে এই ভয়াবহ আত্মহননের কাছ থেকে সরে আসুন এবং গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য সহযোগিতা করুন।
তারেক রহমানকে নিয়ে ‘তারেক রহমান: পলিটিক্স অ্যান্ড পলিসিস কনটেম্পরারি বাংলাদেশ’ বইটি লিখেছেন মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে নিউইয়র্কের ‘উড ব্রিজ’। ৫৭১ পৃষ্ঠার বইটিতে তারেক রহমানের জীবন, কর্ম ও রাজনীতির নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ‘জীবন্ত ইতিহাস’ আখ্যা দেন মির্জা ফখরুল।
তার ভাষ্য, আমি প্রায় সবসময় এই কথাটা বলি যে, ইচ্ছা করলেই চেষ্টা করলেই কাউকে ম্লান করে দেওয়া যায় না, উড়িয়ে দেওয়া যায় না, ইতিহাসকে বিকৃত করা যায় না। ইনশাল্লাহ ‘জীবন্ত ইতিহাস’ তারেক রহমান। আমাদেরকে আলোকিত বাংলাদেশের দিকে তিনি নিয়ে যাবেন, এই বিশ্বাস আমাদের রয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের সভাপতিত্বে ও সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সাংবাদিক শফিক রেহমান, চারুকলা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, গবেষক মোবাশ্বর হোসেন, শরীফুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, আবদুল হালিম, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, রুহুল কবির রিজভী, আবদুস সালাম আজাদ, মাহবী আমিন, আনোয়ার হোসেন খোকন, সেলিম রেজা, শামা ওবায়েদ, আফরোজা আব্বাস, বাসস পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান আনোয়ার আলদীন উপস্থিত ছিলেন।