রবিবার, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বগুড়ায় মাকে হত্যার পর ছেলের ‘ডাকাতির নাটক’

সামিউল আলীম, বগুড়া: বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় গৃহবধু উম্মে সালমা খাতুনকে তার ১৯ বছর বয়সী ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানই হত্যা করে ডিপ ফ্রিজে রেখেছিল। আটকের পর র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১২) কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে মাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে মাদ্রাসাছাত্র সাদ।

মঙ্গলবার দুপুরে র‌্যাবের বগুড়া ক্যাম্পে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানানো হয়। ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখী হন র‌্যাব বগুড়া ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. এহতেশামুল হক খান।

হত্যাকাণ্ডের কারণ জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘হাত খরচের টাকা নিয়ে সাদ বিন আজিজুর রহমানের সঙ্গে তার মা ৫০ বছর বয়সী উম্মে সালমা খাতুনের ঝগড়া বিবাদ চলে আসছিল। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ি থেকে টাকা হারিয়ে যেত। ঘটনার দিন হাত খরচের টাকা চেয়ে না পাওয়ায় সাদ তার মাকে হত্যা করে ডাকাতি বলে প্রচারের চেষ্টা করে।’

দুপচাঁচিয়ার একাধিক সাংবাদিক জানিয়েছেন, মাদ্রাসাছাত্র সাদ বিন আজিজুর রহমান মাদকাসক্ত ছিলেন। পাশাপাশি তিনি পরকীয়া সম্পর্কেও জড়িয়েছিলেন।

নিহত উম্মে সালমা খাতুন দুপচাঁচিয়া ডিএস (দারুস সুন্নাহ) কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ আজিজুর রহমানের স্ত্রী। আজিজুর রহমান স্থানীয় উপজেলা মসজিদের খতিব এবং ‘আজিজিয়া হজ্ব কাফেলা’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। আজিজুর ও উম্মে সালমা খাতুন দম্পতির দুই ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছে। বড় দুই ছেলে-মেয়ে ঢাকায় থাকেন। আর ছোট ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমান বাবার মাদ্রাসায় আলিম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। ওই ছোট ছেলেকে নিয়ে আজিজুর-উম্মে সালমা দম্পতি দুপচাঁচিয়া উপজেলার সদরে জয়পুরপাড়া এলাকায় নিজেদের ৪ তলা বিশিষ্ট ‘আজিজিয়া মঞ্জিল’-এর তৃতীয় তলায় বসবাস করতেন।

গত ১০ নভেম্বর ‘আজিজিয়া মঞ্জিলে’ খুন হন গৃহবধু উম্মে সালমা খাতুন। হত্যার পর তার লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখা হয়। ওইদিন দুপুর ৩টার দিকে নিহতের ছোট ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমান বাড়িতে গিয়ে তার মাকে না পাওয়ার কথা তার বাবাসহ স্বজনদের জানায়। এরপর খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে সে ডিপ ফ্রিজের ভেতরে তার মায়ের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে। ঘরে রাখা স্টিলের আলমারিতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটার চিহ্ন এবং তার নিচে কুড়াল পড়ে থাকার চিত্র দেখে পরিবারের সদস্যরা ঘটনাটিকে ডাকাত দলের কাজ বলে সন্দেহ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। তবে বাড়ি থেকে টাকা-পয়সা কিংবা স্বর্ণালংকার খোয়া না যাওয়ায় এমনকি নিহতের কানে থাকা স্বর্ণের দুল অক্ষত থাকায় পুলিশের সন্দেহ হয়। ওইদিন রাতে সাদ বিন আজিজুর রহমানকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।

ওই হত্যাকাণ্ড নিয়ে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় র‌্যাব বগুড়া ক্যাম্পে এক ব্রিফিংয়ে কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. এহতেশামুল হক খান জানান, নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের পর পরই তারা ছায়া তদন্ত শুরু করেন। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তদন্তের এক পর্যায়ে তারা হত্যাকারী সন্দেহে নিহত উম্মেল সালমা খাতুনের ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানকে সোমবার দিবাগত রাত ১২টার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসেন। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সাদ তার মাকে হত্যার কথা স্বীকার করে।

তিনি বলেন, ঘটনার দিন হাত খরচের টাকা চেয়ে না পেয়ে মায়ের সঙ্গে সাদ বিন আজিজুর রহমানের বাকবিতণ্ডা হয় এবং সে নাস্তা না খেয়েই মাদ্রাসায় চলে যায়। বেলা ১১টার দিকে ক্লাসের বিরতি হলে সাদ মাদ্রাসা থেকে বের হয়। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সে বাড়িতে ঢুকে তার মাকে কুমড়া কাটতে দেখে। তখন পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সাদ পেছন থেকে তার মায়ের নাক ও মুখ চেপে ধরে। এ সময় ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে কুমড়া কাটার বটি দিয়ে সাদের তর্জনীর আঙুল কেটে যায়। কিন্তু তার পরেও সে দুই হাত দিয়ে নাক ও মুখ চেপে ধরে শ্বাস রোধ করে তার মায়ের মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর ওড়না দিয়ে মায়ের দুই হাত বেঁধে লাশটি ডিপ ফ্রিজের মধ্যে রাখে। পরে ঘটনাটি ডাকাতি বলে প্রমাণের জন্য সে কুড়াল দিয়ে আলমারিতে কোপ দিয়ে প্রধান ফটকে তালা দিয়ে বাইরে চলে যায়। কিছুক্ষণ পরে আবার সে তালা খুলে ভেতরে ঢুকে তার মাকে খুঁজে না পাওয়ার কথা ফোনে বাবাসহ স্বজনদের জানায়।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, আসামী সাদ বিন আজিজুর রহমানকে দুপচাঁচিয়া থানায় হস্তান্তর করা হবে।

দুপচাঁচিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদুল ইসলাম জানান, উম্মে সালমা খাতুন হত্যাকাণ্ডে এখনও মামলা হয়নি। তবে নিহতের বড় ছেলে বাদী হয়ে এজাহার করবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on tumblr
Tumblr
Share on telegram
Telegram

, , , বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ