
কবির হোসেন, টাঙ্গাইল: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু দিয়ে প্রথম পরীক্ষামূলক (ট্রায়াল) ট্রেন চলেছে। যমুনা নদীর ওপর নির্মিত এই ট্রেন লাইন উত্তরাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার সকালে সেতুর পূর্বপাড় টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর অংশ থেকে পশ্চিমপাড় সিরাজগঞ্জ অংশে পৌঁছায় এবং অপর একটি ট্রেন পশ্চিমপাড় থেকে পূর্বপাড়ে পৌঁছায়। দুটি ইঞ্জিন ও তিনটি বগি নিয়ে ট্রায়াল ট্রেন দুটি চলাচল করেছে।
বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট গ্লোবাল লিমিটেডের সাব স্ট্রাকচার ইঞ্জিনিয়ার রবিউল আলম বলেন, দুটি ট্রায়াল ট্রেন সেতুর পশ্চিমপাড় থেকে পূর্বপাড়ে চলেছে। প্রথমে ১০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করে। ধীরে ধীরে এর গতি বাড়ানো হচ্ছে। এভাবে বেশ কয়েকবার ট্রায়াল দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
ট্রায়াল ট্রেনের চালক মইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার খুব ইচ্ছে ছিল প্রথম ট্রেনটি আমি চালাব। ইচ্ছে পূরণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শেখ নাইমুল জানান, ইতোমধ্যে রেলসেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা পরীক্ষামূলকভাবে সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চালানো শুরু করেছি। আগামী জানুয়ারিতে সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। তবে এটি চালু হলেও ট্রেনের পূর্ণ গতি পেতে সময় লাগবে আরও দুই মাস।
রেল সেতু রেলওয়ে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, নির্মাণাধীন যমুনা রেল সেতু সাধারণ ট্রেন ছাড়াও দ্রুতগতির (হাইস্পিড) ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে সেতুতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। তবে উদ্বোধনের প্রথম বছরে সাধারণত ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে। এতে ক্রসিংয়ের সমস্যা হবে না, ফলে সময় সাশ্রয় হবে ২০ থেকে ৩০ মিনিট।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের নকশা প্রণয়নসহ সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রথমে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এর মেয়াদ ২ বছর বাড়ানো হয়। ফলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা দাঁড়ায়, যার মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ দেশীয় অর্থায়ন এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ দিয়েছে।
১৯৯৮ সালে যমুনা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন সেতু পারাপার হচ্ছে। এই সমস্যার সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।
২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এই সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং ২০২১ সালের মার্চে পিলার নির্মাণের জন্য পাইলিং কাজ শুরু হয়।
মোট ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রেল সেতু দেশের দীর্ঘতম প্রথম ডাবল ট্রাকের ডুয়েল গেজের সেতু। মোট ৫০টি পিলারের ওপর ৪৯টি স্প্যানে নির্মিত হয়েছে এই সেতুটি।
জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে রেল সেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে জাইকা। যার প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা।