হানিফ পারভেজ,বড়লেখা(মৌলভীবাজার): মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার কিছু এলাকায় এখনও শীতলপাটি তৈরি করে জীবন-জীবিকা চালাচ্ছে কিছু পরিবার। সময়ের কালক্রমে প্লাস্টিকের পাটি বাজারে আসার কারণে বিলীন হয়ে যাচ্ছে মনোমুগ্ধকর বিশ্ব ঐতিহ্য শীতলপাটি।
বড়লেখা উপজেলার দাসের বাজার, সুজানগর ও তালিম পুর ইউনিয়নের শত শত পরিবার এখনও শীতলপাটি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছে।
একটা সময় এই শীতলপাটি তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছে অনেক পরিবার। রাত দিন পরিবারের সকলে এই পাটি তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকতো। বাড়ির চার পাশে মোতরা গাছ লাগিয়ে পাটির কাজে ব্যবহার করতো। প্রতিমাসে প্রত্যেকে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করতো। কালের বিবর্তনে শীতলপাটির ঐতিহ্য আজ বিলীনের পথে।
গ্রীষ্মের দুপুরে বাড়ির পাশের বাগানে শীতলপাটিতে পিঠ এলিয়ে একটুখানি স্বস্থির কথা গত শতাব্দির শেষাংশে জন্মগ্রহণ করাদের অবশ্যই জানা আছে। শীতলপাটি গ্রাম-বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য। গ্রাম কিংবা শহরের সৌখিন মানুষদের কাছে শীতলপাটির কদর অনেক। তবে বর্তমানে উন্নতমানের মাদুর ও প্লাস্টিকের রেক্সিন আবিষ্কারের কারণে হ্রাস পেয়েছে শীতলপাটির মূল্য ও উৎপাদন। এছাড়াও শীতলপাটি তৈরির কাঁচামালের দাম অনেক। এসব নানা কারণে এখন বিলুপ্তির পথে হাজার বছরের এ বিশ্ব ঐতিহ্য ও হস্তশিল্প।
শীতলপাটি বুননের কাঁচামাল হচ্ছে মুরতা বেত। যা শুষ্ক মৌসুমে রোপণ করা হয়। বেত পরিপক্ব হলে বর্ষার পানিতে ভিজিয়ে পাটি তৈরির উপযোগী বেতে পরিনত করা হয়। এরপর চলে পাটি বুনন। এখনো গ্রামাঞ্চলের বিয়েতে কনের সঙ্গে শীতলপাটির উপহার ধরাবাঁধা নিয়ম হিসেবেই রয়ে গিয়েছে। এছাড়াও বেতের তৈরি নামাজের মুসল্লা বা মাদুরেরও রয়েছে সমান কদর। ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে শীতলপাটির স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেসকো)।