কামরুল হাসান ভূজপুর, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে অতি বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলে গত সপ্তাহে মারাত্মক বন্যায় উপজেলার প্রায় সবকটি ইউনিয়ন ও পৌরসভা প্লাবিত হয়ে জনজীবনে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, পানি বন্দি হয়ে পড়ে ৩ লাখের অধিক মানুষ। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় শতশত মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলী জমি, সড়ক-মহাসড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট, বৈদ্যুতিক খুঁটিসহ মানুষের জান-মালের। শুধু সড়কে দুইটি দপ্তরের ক্ষতি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা।
চলমান বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কিত উপজেলা এলজিইডির প্রাথমিক তথ্য বিবরনীতে বলা হয়েছে, উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার ১৪৩টি সড়ক, ৩০টি ব্রিজ, ১২০টি বক্স কালভার্ট, ৭৪ টি স্লাব কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের প্রায় ২২ কি.মি. উপজেলা সড়ক, ৩৭ কি.মি. ইউনিয়ন সড়ক, ২৬৮ কি.মি. গ্রামীণ সড়ক রয়েছে। এছাড়া একাধিক সড়ক পানিতে নিমজ্জিত থাকায় সম্পূর্ণ উপজেলার তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি বলেও বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে, অতিবৃষ্টিজনিত বন্যা ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে পানিতে বিভিন্ন স্থানে সড়ক তলিয়ে যায়। আকস্মিক বন্যায় পানির তোড়ে অনেক সড়কের সম্পূর্ণ ও আংশিকভাবে ডুবে যায়। ধসে পড়ে একাধিক সড়ক বাঁধ। বিভিন্ন সড়কের উপরিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। এতে বেড়েছে জনদুর্ভোগ।
স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ব্রিজ, কালভার্ট, ছোট-বড় কার্পেটিং ও ব্রিক সলিংসহ সব মিলিয়ে প্রায় ৫০-৬০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতাধীন ৪টি সড়ক ও ১০টি কালভার্টসহ সব মিলিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় সড়ক ও জনপদ বিভাগ।
উপজেলার দাঁতমারায় ইউনিয়নটি পাহাড়ি পানি প্রবেশদ্বার । তার উপর দিয়ে বয়ে গেছে বন্যার অধিকাংশ পানি। ইউনিয়নের সবকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে সড়কের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ওই এলাকায়। স্থানীয় ৩ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মোঃ পারভেজ বলেন, পানির প্রবেশদ্বার হিসেবে আমার ওয়ার্ড নিচিন্তায় কয়েকটি সড়কে প্রায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, যেহেতু পানির স্রোতও ছিল বেশি। তার কারণে দাঁতমারা ইউপির বেতুয়া,হাসনাবাদ, সাদিনগর,বাংলাপাড়া,বালুটিলায় সড়কে বেহাল অবস্থা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, পুরো ইউপিতে ১০-১৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, এছাড়া সুয়াবিল, সুন্দরপুর, হারুয়ালছড়ি, বাগানবাজারেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী তন্ময় নাথ বলেন, এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তা প্রাথমিক হিসাব। পুরো চিত্র পাওয়ার জন্য বন্যার পানি সরে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এখনো সুয়াবিল ও বাগানবাজারের কিছু সড়ক পানিতে ডুবে আছে। যেগুলোর প্রকৃত অবস্থা আমরা জানি না। পানি কমলে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করা হবে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে সড়ক মেরামতের কাজ শুরু হবে।