
আবু জিহাদ, আমতলী (বরগুনা): ত্রয়োদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বরগুনা-১ (বরগুনা সদর- আমতলী- তালতলী) আসনে দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশীরা এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন।
নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা নিষ্ক্রিয় থাকলেও বিএনপির প্রার্থীরা সক্রিয়। বিএনপির দলীয় স্বাম্ভব্য প্রার্থীরা জনগনের সমর্থণ ও মনোনয়ন পেতে সভা সমাবেশ করছেন।
প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল ও শহরের হাট ও বাজারের চায়ের দোকানে বইছে নির্বাচন ও প্রার্থী নিয়ে আলোচনা। স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনটি আওয়ামীলীগ জয়লাভ করে আসছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ থাকায় এ আসন দখলে নিতে মরিয়া বিএনপি ও জামায়াত। তবে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে পায়রা নদীর দুই পাড়ের ভোটার মূল ফ্যাক্টর।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারলে পাল্টে যেতে পারে ভোটের সমীকরণ। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ডজন খানেক আর জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ একক ও দুইজন আওয়ামী লীগ প্রার্থী রয়েছেন।
জানা গেছে, বরগুনা-১ আসন আমতলী-তালতলী ও বরগুনা সদর তিনটি উপজেলা নিয়ে গঠিত। সাড়ে চার কিলোমিটার প্রস্থ ও ৭২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য পায়রা নদী উপজেলা তিনটি বিছিন্ন করে রেখেছে। পায়রা নদীর পূর্ব পাড়ে আমতলী-তালতলী উপজেলা। পশ্চিম পাড়ে বরগুনা সদর উপজেলা। এ আসনে ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৫৭ হাজার ৮’শ ৭৪। এর মধ্যে আমতলী উপজেলায় ১ লাখ ৯৮ হাজার ৪’শ ৮ ও তালতলী উপজেলার ভোটার সংখ্যা ৯৩ হাজার ৭’শ ২৫ জন। এ দুই উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৯২ হাজার ১’শ ৩৩।
বরগুনা সদর উপজেলায় ভোটার ২ লাখ ৬৫ হাজার ৭’শ ৪১ জন। বরগুনা সদর উপজেলার চেয়ে পায়রা নদীর পূর্বপাড়ের আমতলী-তালতলী উপজেলার ২৬ হাজার ৩’শ ৯২ ভোটার বেশী। এ তিনটি উপজেলার মধ্যে বরগুনা সদর উপজেলায় আওয়ামীলীগের দুর্গ। তালতলী উপজেলা বিএনপির দুর্গ।
আমতলী উপজেলায় আওয়ামী লীগ, বিএনপির ভোট বেশি কিন্তু ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলেরও ভোট আছে। তবে আমতলী-তালতলী উপজেলায় জামায়াতের ভোট কম।
আমতলী ও তালতলী উপজেলা থেকে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক সাংসদ আলহাজ্ব মোঃ মতিয়ার রহমান তালুকদার, সাবেক সাংসদ অধ্যাপক অ্যাডভোকেট মজিদ মল্লিক, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৌহিদুল ইসলাম গাজী, বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রায়াত অ্যাডভোকেট খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের এপিএস ওমর আব্দুল্লাহ শাহীন ও বরগুনা জেলা আদালতের জিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ তালুকদার।
মজিদ মল্লিক ও মজিদ তালুকদার ছাড়া অপর তিন প্রার্থী মাঠে গণ সংযোগ করছেন। গত বছর ৫ আগষ্টের পরে তরুণ নেতা ওমর আব্দুল্লাহ শাহীন বরগুনা জেলা উন্নয়নে এবং বরগুনা সংসদীয় আসন পুর্নবহালে বেশ গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রেখেছেন। এতে তরুণ নেতা হিসেবে মানুষের কাছে জনপ্রিয়।
বরগুনা সদর উপজেলা থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী বরগুনা জেলা বিএনপি’র আহবায়ক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম মোল্লা, কেন্দ্রিয় সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ-উজ জামান মামুন মোল্লা। এ দুইজন একই পরিবারের। সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক ফজলুল হক মাষ্টার, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব হুমায়ুন হাসান শাহীন, সাবেক জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রেজবুল কবির, কেন্দ্রিয় মহিলা দলের স্বনির্ভর বিষয়ক সহ-সম্পাদক আসমা আজিজ ও জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান কেএম শফিকুজ্জামান মাহফুজ। আওয়ামীলীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারলে সাবেক সাংসদ গোলাম সরোয়ার টুকু ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার ফোরকান মনোনয়ন প্রত্যাশী। কিন্তু তারা মাঠে নেই।
আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলেও অন্য দল দিয়ে আওয়ামীলীগ প্রার্থী মনোনয়ন দিলে তাতেও তারা মনোনয়ন চাইবেন বলে নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানাগেছে। এর মধ্যে মতিয়ার রহমান তালুকদার, মজিদ মল্লিক, গোলাম সরোয়ার টুকু, গোলাম সরোয়ার ফোরকান ছাড়া সকলেই নবীন। তারা কেউ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করেনি। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আমতলীর তিনজন, তালতলীর দুইজন আর বরগুনা সদর উপজেলার সাত জন। জামায়াতে ইসলামী দল বরগুনা জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক মহিবুল্লাহ হারুন এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মাহমুদুল হাসান অলিউল্লাহকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। তারা দলীয় মনোনয়ন পেয়ে গণ সংযোগ করছেন। বিএনপির নজরুল মোল্লা, ফজলুল হক মাস্টার, রেজবুল কবির, আসমা আজিজ ও মামুন মোল্লা দলীয় মনোনয়ন পেতে গণ সংযোগ করেছেন।
স্বাধীনতার পর থেকে এ আসন থেকে বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী জয়লাভ করতে পারেননি। আওয়ামীলীগের একতরফা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র নাথ শম্ভুকে হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সরোয়ার টুকু জয়লাভ করেছেন। অপর দিকে পায়রা নদীর পুর্বপাড়ের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সরোয়ার ফোরকান ওই নির্বাচনে মাত্র আড়াই হাজার ভোট কম পেয়ে হেরে যান। তবে তারা দুজনই আওয়ামীলীগ নেতা। সাবেক বরগুনা -৩ আসন থাকাকালিন (আমতলী-তালতলী) মতিয়ার রহমান তালুকদার দুইবার জয়লাভ করেছেন। একবার বিএনপির দলীয় মনোনয়নে উপ-নির্বাচনে ও একবার জাতীয় পার্টি থেকে। তার জনপ্রিয়তা থাকলেও তিনি বয়সের ভারে নুয্যমান। বিএনপির একতরফা সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অ্যাডভোকেট মজিদ মল্লিক সাংসদ হন। অপর দিকে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অধ্যাপক মহিবুল্লাহ হারুন ও বিএনপির মনোনয়র প্রত্যাশী যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অ্যাডভোকেট রেজবুল কবির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান থাকায় তাদের সদর উপজেলায় কিছুটা জন সমর্থণ রয়েছে। আমতলী-তালতলী উপজেলায় তাদের তেমন জন সমর্থন নেই। বরগুনা জেলার নব গঠিত বিএনপির আহবায়ক নজরুল মোল্লা হওয়ায় তার কিছুটা জন সমর্থণ বেড়েছে।
বরগুনা-১ আসনে বিএনপির প্রার্থীর জয়লাভ করতে হলে যোগ্য, দক্ষ ও জনপ্রিয় নেতাকে দলীয় মনোনয়ন দিতে হবে। তবে ভোটার ও পায়রা নদী বিবেচনায় মনোনয়ন দিলে জয়লাভ সহজ হবে বলেন জানান শিবলী, জিয়া উদ্দিন জুয়েল ও ছত্তারসহ আরো সাধারণ মানুষ। অপর দিকে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলের ঘোষিত প্রার্থী বাড়ী বরগুনা সদর উপজেলার। বিএনপি ও অন্য দলের প্রার্থীর মনোনয়ন যদি বরগুনা সদর উপজেলা থেকে দেয়া হয় তবে আমতলী-তালতলী উপজেলায় প্রার্থী শুন্য। এ দিক থেকে আমতলী-তালতলী ফাঁকা মাঠে স্বতন্ত্র প্রার্থী সুযোগ লুফে নিবে। এতে এ আসন বিএনপি উদ্ধার করা কঠিন হবে বলে জানান সাধারণ ভোটাররা। আমতলী-তালতলী উপজেলা থেকে মুল দলের যে প্রার্থী মনোনয়ন দিবে সেই দলের প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার সম্ভবনা বেশী বলে জানান সাধারণ ভোটাররা। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে আওয়ামীলীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারলে পাল্টে যেতে পারে ভোটের সমীকরণ।
তরুণ নেতা ওমর আব্দুল্লাহ শাহীন বলেন, গত ১৫ বছর আওয়ামীলীগের নির্যাতন, হামলা ও মামলার শিকার হয়েও দলের পক্ষে কাজ করেছি। গত ৫ আগষ্টের পরে বরগুনা জেলার উন্নয়নে বেশ ভুমিকা রেখেছি। দলীয় মনোনয়ন পেলে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে বরগুনা জেলাকে মডেল জেলায় উন্নীত করা হবে। আশা করি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাকে সেই সুযোগ দিবেন। তিনি আরো বলেন, আওয়ামীলীগের গুমের শিকার হয়েও সততার সঙ্গে দলের ত্যগী নেতা হিসেবে কাজ করছি।
একমাত্র নারী মনোনয়ন প্রত্যাশী আসমা আজিজ বলেন, ১৭ বছর আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে আওয়ামীলীগের নির্বাতনের শিকার হয়েছি। অনেক মামলার আসামী হয়েছি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের ত্যাগী, যোগৗ ও সৎ নেতাদের মুল্যায়ণ করবেন, সেই হিসেবে আমি মনোনয়ন পেতে আশাবাদী।
বরগুনা জেলা বিএনপির আহবায়ক নজরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, দলের মনোনয়ন পেলে তৃণমুলের নেতাকর্মীসহ জনগনের ভোটে বিজয় লাভ করে এ আসনটি দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে উপহার দিতে পারবো।
সাবেক সাংসদ মতিয়ার রহমান তালুকদার বলেন, দুই বার সাংসদ থাকাকালিন আমতলী ও তালতলীর ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। দল থেকে মনোনয়ন পেলে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপি দলকে আরো শক্তিশালী করতে পারবো এবং বরগুনার উন্নয়নে আরো ভুমিকা রখতে পারবো।