শুক্রবার, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাংলাদেশকে ভারত ঠিক সময়ে সব তথ্য সরবরাহ করে: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র

যায়যায় কাল ডেস্ক : অভিন্ন নদীর কারণে বাংলাদেশের প্লাবন রোধে ওই দেশের নতুন প্রস্তাব বিবেচিত হতে পারে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল শুক্রবার সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ ইঙ্গিত দিয়েছেন।

বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির জন্য সম্প্রতি অনেকে ভারতকে দায়ী করেছে। এ নিয়ে বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভারতবিরোধী প্রচার চলছে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা ২২ আগস্ট দেখা করেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে। সেই সাক্ষাতে বন্যা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া ও পানিবণ্টন নিয়ে ড. ইউনূস কিছু প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে যে ধরনের বোঝাপড়া ও ‘মেকানিজম’ (ব্যবস্থা) রয়েছে, সেই ধাঁচে অভিন্ন নদীর পানি ব্যবস্থাপনা ও বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে উদ্যোগী হওয়ার প্রস্তাব তিনি দিয়েছিলেন।

সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেন, দুই দেশের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। তাদের পানিসম্পদ ব্যবহার, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বহুদিন ধরেই স্বীকৃত কিছু ‘মেকানিজম’ রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা আছে। এ অনুযায়ী ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে ভারত নিয়মিতভাবে ঠিক সময়ে সব তথ্য সরবরাহ করে।

তিনি বলেন, নতুন কোনো মেকানিজম বা ব্যবস্থার প্রস্তাব প্রচলিত ব্যবস্থার উন্নতি ঘটালে ও মানুষের দুর্দশা কমাতে পারলে তা নিয়ে দুই দেশ আলোচনা করতেই পারে। বিবেচিত হতেই পারে।

এবারের বন্যা মনুষ্যসৃষ্ট ও ইচ্ছাকৃত বলে অনেক প্রচার বাংলাদেশে চলেছে। এ প্রসঙ্গে মুখপাত্র বলেন, ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে অভাবিত বন্যার পর ভারত দুটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে বন্যার কারণ কী, তা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বন্যার কারণ প্রবল বৃষ্টি। ভারত ইচ্ছা করে বাংলাদেশকে বানভাসি করেনি।

গতকালের ব্রিফিংয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল, ভারতে থাকার মেয়াদ, তৃতীয় দেশের যাওয়া কিংবা তাঁকে প্রত্যাবর্তনের সরকারি অনুরোধ বাংলাদেশ থেকে এসেছে কি না, এ বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়। মুখপাত্র জয়সোয়াল এ নিয়ে কিছুই প্রায় বলতে চাননি।

তিনি শুধু জানান, নিরাপত্তার কারণে হাসিনা স্বল্প সময়ের নোটিশে ভারতে এসেছেন। তাছাড়া ভারত কখনো অনুমানমূলক প্রশ্নের উত্তর দেয় না।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ফোনালাপের পর ভারতের পক্ষ থেকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুই নেতা বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেছেন। অথচ যুক্তরাষ্ট্র থেকে জারি করা বিবৃতিতে সেই প্রসঙ্গ অনুচ্চারিত ছিল। এ নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মুখপাত্র তারও ব্যাখ্যা দেন মুখপাত্র।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে যে দাবি করা হচ্ছে, তা দুরভিসন্ধিমূলক। বৈশ্বিক নেতারা কীভাবে আলোচনা করেন, এ সম্পর্কে সমালোচনাকারীদের সম্যক ধারণা নেই। বাইডেন ও মোদি অবশ্যই বাংলাদেশের ঘটনাবলি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

এ প্রসঙ্গে মুখপাত্র আরও বলেন, প্রথমত, দুই নেতার মধ্যে আলোচনার পর যে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়, তা যৌথ বিবৃতি নয়, যেখানে প্রতিটি শব্দের ব্যবহার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার করা হয়ে থাকে। দ্বিতীয়ত, ওই বিজ্ঞপ্তি সার্বিক আলোচনার বিবরণও নয়। তৃতীয়ত, নেতারা নিজেদের মতো করে আলোচ্য বিষয়ের অবতারণা করবেন, তা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। ফলে কারও বিবৃতিতে কোনো বিষয়ে অনুচ্চারিত থাকার অর্থ এই নয় যে তা আলোচিত হয়নি।

রণধীর জয়সোয়াল বলেন, ভারতের বিজ্ঞপ্তিতে যা বলা হয়েছে (বাংলাদেশ-সম্পর্কিত আলোচনা), তা পুরোপুরি সত্য।

অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র বলেন, পটপরিবর্তনের পর ভারতীয় প্রকল্পগুলোর কাজ আপাতত থমকে আছে। কর্মীদের অনেকেই ভারতে ফিরে এসেছেন। প্রতিটি প্রকল্পের উদ্দেশ্য দুই দেশের জনকল্যাণ। তিনি বলেন, ভারত চিরকালই বাংলাদেশের শুভাকাঙ্ক্ষী। বাংলাদেশে স্বাভাবিকতা ফিরে এলে প্রকল্পগুলো নিয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলা হবে। নতুন সরকার স্বাভাবিকতা ও সুস্থিতি ফিরিয়ে আনার সব রকম চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ভারত চায়, দ্রুত স্বাভাবিকতা ফিরে আসুক, যাতে জনমুখী প্রকল্পগুলোর কাজ শুরু করা যায়।

বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং সেই সংগঠনের পক্ষ থেকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার অভিপ্রায় নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। জবাবে রণধীর জয়সোয়াল বলেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সম্পর্ক স্থাপন ও উন্নত করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংগঠনপ্রধানের ওই বিবৃতি ভারতের নজরে এসেছে।

ভিসা প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র জয়সোয়াল বলেন, এখন জরুরি প্রয়োজন ও চিকিৎসার জন্য ভিসা দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুরোদমে ভিসা দেওয়া হবে। তবে বাংলাদেশের বন্যায় ত্রাণ পাঠাতে ভারত উদ্যোগী হবে কি না, জানতে চাওয়া হলে মুখপাত্র সরাসরি কোনো উত্তর দেননি।

তিনি শুধু বলেন, ভারতের হাইকমিশনার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on tumblr
Tumblr
Share on telegram
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ