
মো. নাজমুল ইসলাম, নেত্রকোনা: জমি লিখে না দেওয়ায় বাবাকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছে ছেলে—এমন ঘটনা ঘটেছে নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলায়। আহত বাবার দায়ের করা মামলার পরও অভিযুক্ত ছেলেকে গ্রেপ্তার না করায় তিনি রয়েছেন নিরাপত্তাহীনতায়। শনিবার দুপুরে নেত্রকোনা জেলা প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী বাবা মিয়াচান ব্যাপারী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২ মে বারহাট্টা সদরের ‘রাসেল এন্টারপ্রাইজ’ নামে ডিমের আড়তে গিয়ে ব্যবসায়ী মিয়াচান ব্যাপারীকে মারধর করেন তার ছেলে সোহেল মিয়া। সঙ্গে ছিলেন আরও তিনজন—গুমুরিয়া গ্রামের মৃত মুক্তুল মিয়ার ছেলে মন্নান মিয়া, মৃত কেরামত আলীর ছেলে হাসিদ মিয়া ও হাদিস মিয়ার ছেলে বিকাশ মিয়া। তারা মিয়াচানকে কুপিয়ে মাথায় গুরুতর জখম করেন এবং প্রতিষ্ঠানের ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন। পরে স্থানীয়রা আহত অবস্থায় মিয়াচানকে বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
ঘটনার পরদিন (৩ মে) মিয়াচান ব্যাপারী বারহাট্টা থানায় ছেলেসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। তিনি বলেন, “ছেলের ঋণ পরিশোধ করতে আমি শহরের একটি বাসা বিক্রি করে তাকে ৫৭ লাখ টাকা দিয়েছি। এরপরও সে সন্ত্রাসী ভাড়া করে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে। এখন মামলা করায় আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।”
অভিযুক্ত সোহেল মিয়া অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমার বাবা দ্বিতীয় পক্ষের সন্তানদের জমি লিখে দিচ্ছেন। আমি বাধা দেওয়ায় তিনি মিথ্যা মামলা করেছেন। তিনি আমাদের মা ও পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্য করে আসছেন।”
এ ঘটনায় স্থানীয় কৃষকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মিয়াচান ব্যাপারীর জমি বর্গা নিয়ে চাষ করা বজলুর রহমান ও বিল্লাল মিয়া বলেন, “সোহেল ১০–১৫ জন লোক নিয়ে দেশীয় অস্ত্রের মুখে ধান কেটে নিয়ে গেছে। এখন আমরা ঋণের টাকা শোধ করব কী করে?”
মিয়াচান ব্যাপারীর মেয়ে সুমি আক্তার বলেন, “বাবা সব সম্পদ বিক্রি করে সোহেলের ঋণ শোধ করেছেন। গ্রামে পাকা বাড়িও তৈরি করে দিয়েছেন। এরপরও বাবার ওপর হামলা চালানো হয়েছে।”
বারহাট্টা থানার ভারপ্রাপ্ত পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে মামলা নেওয়া হয়েছে। একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।”