যায়যায়কাল প্রতিবেদক: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তিন মাস হয়নি এখনই রাস্তায় রাস্তায় লড়াই শুরু হয়েছে।
বুধবার শহীদ ডা. মিলন দিবস উপলক্ষে রাজধানীর প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এত যে প্রাণ গেল, তার ফলশ্রুতি কি এই বাংলাদেশ? তিন মাস হয়নি এখনই রাস্তায় রাস্তায় লড়াই শুরু হয়েছে। তিন মাস এখনো যায়নি একজন আরেকজনের রক্ত ঝরাচ্ছে। তিন মাসও যায়নি এখনই পত্রিকা অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, আক্রমণ করছে।’
তিনি বলেন, ‘এ কোন বাংলাদেশ? আমরা কি ৫ আগস্টের আগে এমন বাংলাদেশকে চিনতাম? আজ কেন এই ভয়াবহ হিংসা? আজ কেন এই ভয়াবহ অস্থিরতা? সমস্যাগুলো কোথায়? এই প্রশ্নগুলো আপনাদের কাছে আমি করছি।’
ফখরুল বলেন, ‘৫ আগস্টের পর সুযোগ এসেছিল সবাই মিলে একসঙ্গে একত্রে মিলে দেশের জন্য একটি পরিবর্তন নিয়ে আসার। তিন মাস হয়নি এখনো, এই তিনটা মাসের মধ্যেই আমাদের সেই আসল চেহারা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এরকম চেহারা নিয়ে কোনোদিনই সাফল্য অর্জন করা যায় না। যতই বড় বড় কথা বলি, যতই লম্বা লম্বা বক্তৃতা করি, বিশ্বকে এক করার চেষ্টা করি, হয় না। নিজের ঘরেই যদি বিভেদ থেকে যায়, বিভাজন থেকে যায়, তাহলে হয় না।’
বিএনপি দেশের পরিস্থিতি নিয়ে ‘খুব চিন্তিত, ভয়াবহভাবে উদ্বিগ্ন’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। ‘আপনারা চিন্তা করতে পারেন ধর্মকে কেন্দ্র করে কি উন্মাদনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে? আপনি চিন্তা করতে পারেন মুক্ত স্বাধীন মিডিয়ার জন্য প্রেসের জন্য আমরা এতদিন লড়াই করলাম, তার অফিস পুড়িয়ে দিচ্ছে। এই বাংলাদেশ তো দেখতে চাই না, আমি অন্তত দেখতে চাই না,’ বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আর কি উন্মাদনা, কিছু সংখ্যক মানুষ আছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়, যখন দেখি আতঙ্কিত হয়ে উঠি। পুড়িয়ে দাও, জ্বালিয়ে দাও—এরকম কথাবার্তা হচ্ছে সেখানে। চিন্তা করতে পারেন কোন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশকে?’
‘আমরা কি বুঝি আমাদের ভয়টা কোথায়? আমরা কি বুঝি আমাদের আতঙ্কটা কোথায়? আমরা কি বুঝি আততায়ী কোথায় ছুরি নিয়ে দাড়িয়ে আছে আমাদের পেছনে? বুঝি না। বুঝলে এরকম দায়িত্বহীন, ইরেসপসিবল কথাবার্তা আমাদের মুখ থেকে বের হতো না,’ বলেন তিনি।
‘দুর্ভাগ্য আমাদের। কিছু সংখ্যক মানুষ নিজেদের অত্যন্ত জনপ্রিয় মনে করেন, সবচেয়ে দেশপ্রেমিক মনে করেন, আজ গোটা জাতিকে তারা বিভাজনের দিকে ঠেলে দিয়ে, উসকে দিয়ে একটা অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে,’ বলেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘আপনারা গভীরভাবে চিন্তা করবেন। আমি কারও নাম বলব না, বলতে চাই না। আপনারা চিন্তা করবেন, যারা আমাদেরকে বিভাজনের দিকে ঠেলছে তারা আমাদের শত্রু নাকি মিত্র।’
‘অন্তর্বর্তী সরকার কারও দয়ার দান নয়’ মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘যারা দায়িত্বে আছেন সরকারের, এমন কোনো কথা বলবেন না দয়া করে, যা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।’
প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ অন্যান্য পত্রিকার ওপর আক্রমণের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সারাজীবন সংবাদমাধ্যমে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছি। দ্যাট ইজ মাই এইম। আমার বিশ্বাস, আমার আস্থা। গণতন্ত্র মানে কী? আপনি আপনার কথাটা বলবেন, আমি একমত না হতে পারি। কিন্তু আপনার মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে আমি জীবন দিয়ে রক্ষা করব। দ্যাট ইজ ডেমোক্রেসি।’
‘আপনি এক ফ্যাসিস্টকে উৎখাত করেছেন, কারণ সে আমাদের গলা টিপে ধরেছিল। সে আমাদের মেরে ফেলছিল, কথা বলতে দিত না, ভোট দিতে দিত না, হত্যা করেছে, নির্যাতন করেছে। আবার এখন আরেকটা, তাকে কথা বলতে দেওয়া যাবে না, নিশ্চিহ্ন করো। এভাবে একটা সমাজ এগোতে পারে?’ প্রশ্ন রাখেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘আমি ১৪-১৫ বছর ধরে লড়াই করেছি। বহুবার জেলে গিয়েছি। যেকোনো সময় আবার জেলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। কিন্তু আমি এই বাংলাদেশ দেখতে চাই না। আমি যেটা বিশ্বাস করি, আমার দল যেটা বিশ্বাস করে, আমার প্রাণ গেলেও সে কথা বলব, আমি বিশ্বাস করি লিবারেল ডেমোক্রেসিতে। আমি বিশ্বাস করি মানুষের স্বাধীনতায়, বাকস্বাধীনতায়, ভোটের স্বাধীনতায়।’