মাসুদ রানা, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার আলু দেশের চাহিদা মিটিয়ে ফসলের মাঠ থেকে সরাসরি দেশের গন্ডি পেরিয়ে রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। ব্যস্ততা বেড়েছে কৃষক, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের। চলতি মৌসুমের মধ্যস্থলে আলুর দাম কিছুটা কম থাকলেও বর্তমানে দাম বাড়ায় লাভবান হয়েছেন অনেক কৃষক।
জানা যায়, চলতি মৌসুমে খানসামা উপজেলায় বীজ, সার ও কীটনাশকের পর্যাপ্ত সরবরাহ এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমান সময়ে দেশে ও দেশের বাইরে আলুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি দেখা গেছে। মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে এ আলু। তবে অন্যান্য দেশের চেয়ে মালয়েশিয়াতে এবার প্রচুর পরিমাণে আলুর চাহিদা থাকায় সেখানে প্রেরণ করা হচ্ছে। গত বছর সিঙ্গাপুরে চাহিদা থাকায় সেখানে পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ২ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে ৫০ হাজার মেট্রিক টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ১০ হাজার টন আলু বিদেশে রপ্তানি হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে দ্বিতীয় বছরের মত কাজ করছে কৃষি বিভাগ। ইতিমধ্যে ১০০ টন আলু রপ্তানি হয়েছে। এই উপজেলার সাগিতা, গ্রানুলা, সানসাইন, কুমরিকা, সেভেন জাতের আলু মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানির কার্যক্রম ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। প্রায় শতাধিক কৃষক কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় রফতানিকারকদের মাধ্যমে বিদেশে আলু রফতানি করছেন।
হোসেনপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল আলীম বলেন, ‘এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জমি থেকে প্রতি কেজি আলু ১৪-১৫ টাকা দরে বিদেশে রপ্তানি করছি। আমি মালয়েশিয়া পাঠানোর জন্য প্রায় ১০০ টন আলু মজুদ করেছি খুব শীঘ্রই পাঠাবো। গত বছর সিঙ্গাপুরে পাঠিয়েছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাসুদেব রায় বলেন, উপজেলার মাটি আলু চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় ভালো ফলন হয়েছে। গত বছরগুলোর তুলনায় এবার বিদেশে আলুর চাহিদা বেড়েছে। আলু রপ্তানিতে কৃষি বিভাগ রপ্তানিকারকদের সাথে কৃষকদের যোগসূত্র স্থাপনে কাজ করছেন। তিনি আরো বলেন, কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে আধুনিক কলাকৌশল বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ওই প্রকল্পের আওতায় রফতানিযোগ্য জাতের আলুর চাষাবাদ সম্প্রসারণ করা হয়েছে। যাতে করে কৃষকরা আলু বিদেশে রপ্তানি করে আর্থিক ভাবে লাভবান হতে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নূরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করি ভালো উৎপাদনের। যেখানে মিটিং, সেমিনার হয় সেখানেই ভালো উৎপাদন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। আমরা সব সময় চাই এবং চেষ্টা করি যেখানে আবাদ বেশি হয় সেখানেকার চাহিদা মিটিয়ে বাইরের দেশে রপ্তানির জন্য। এতে করে কৃষকরা যেন ভালো দাম পায়। এবার জেলায় ৪৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আমরা শুধু উৎপাদনের অংশের সঙ্গে জড়িত বিক্রয়ের পরের অংশটাতে আমরা জড়িত নই। অনেকেই মনে করে আমরা পরের অংশটার সঙ্গেও জড়িত, এটা ভুল ধারণা। সর্বোপরি ভালো ফলন হোক, আমরা এটাই চাই। কৃষকরা ভালো থাকুক।’
ছবির ক্যাপশন: ১. আলু বিদেশে রপ্তানির জন্য ফসলের মাঠেই বস্তা বন্দী করছে কৃষক। ছবিটি খানসামার হোসেনপুর গ্রাম থেকে তোলা
২. আলু বিদেশে রপ্তানির জন্য গোডাউনে মজুদ করে রাখা হচ্ছে। ছবিটি খানসামার আমতলী থেকে তোলা