শুক্রবার, ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,১৪ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বিরামপুরে কাঁচা লঙ্কা নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড

খান মো. আ. মজিদ, দিনাজপুর : ঘড়ির কাঁটায় সকাল পৌনে আটটা। সবজির পাইকারি বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ কম। ব্যবসায়ীরা কাঁচা মরিচ নিয়ে বাজারে আসা চাষিদের হন্য হয়ে খুঁজছেন। যাকেই পাচ্ছেন কয়েকজন মিলে হাতে বস্তা ও ওজন মাপার যন্ত্র নিয়ে ঘিরে ধরছেন। কে কত আগে বেশি দামে কিনতে পারেন, সেই প্রতিযোগিতাও চলে। দামে মিললে চাষির হাত থেকে মরিচের ব্যাগ বা বস্তা ছোঁ মেরে নিয়ে যাচ্ছেন দোকানে।

শনিবার সকালে দিনাজপুরের বিরামপুর পৌর শহরের পুরাতন বাজার এলাকার পাইকারি সবজি বাজারে মরিচচাষি ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে এমন দৃশ্য দেখা যায়। বাজারের প্রবেশপথে চাষি ও ব্যবসায়ীদের বস্তা টানাটানি করতে দেখে ক্রেতাদের মধ্যে দেখা দেয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। খুচরা বাজারে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এতে বেশি দামে কাঁচা মরিচ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন সাধারণ ক্রেতারা।

দুই সপ্তাহ ধরে উপজেলার স্থানীয় মরিচখেতগুলোয় উৎপাদন কমেছে। সেই সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় কাঁচা মরিচের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিরামপুরের পাইকারি বাজারে মরিচের সরবরাহ কমেছে। ফলে উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও থেকে বিরামপুরের পাইকারি বাজারে আগের মতো আর কাঁচা মরিচ আসছে না। এতে পাইকারি বাজারে কাঁচা মরিচের সংকট চলছে।

আজ সকাল থেকেই বিরামপুরের পাইকারি বাজারে দেশি প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ প্রকারভেদে ১৬০–১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। হাইব্রিড (উচ্চফলনশীল) জাতের কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খুচরা বাজারে দেশি প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ২০০ ও হাইব্রিড ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

হাকিমপুর উপজেলার নওপাড়া গ্রামের মরিচচাষি সেকেন্দার আলী বিরামপুরের পাইকারি বাজারে কাঁচা মরিচ বিক্রি করতে এসেছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকালে খেত থেকে ১২ কেজি হাইব্রিড জাতের (নাগা মরিচ-অ্যাগ্রো ওয়ান) মরিচ তুলে বিক্রির জন্য বিরামপুর বাজারে আনছি। বাজারে ঢুকতেই পথে পাইকারি ব্যবসায়ীরা কাড়াকাড়ি শুরু করেন। পরে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলাম। মরিচের দাম ভালো পাওয়ায় খুব ভালো লাগছে।’

বিরামপুর পৌর শহরের পূর্ব জগন্নাথপুর মহল্লার বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে এমন প্রতিযোগিতা চললে কৃষক বেশি দাম চাইবেন, এটা স্বাভাবিক। এরপর ব্যবসায়ীরা তাঁদের মতো ক্রেতাদের থেকে গলাকাটা দাম নেবেন। বেশি দামে কেনা ছাড়া ক্রেতাদের উপায় নেই। এ বিষয়ে প্রশাসনের নিয়মিত বাজারে নজরদারি করা দরকার।

বিরামপুর পুরাতন বাজারের কাঁচা মরিচের পাইকারি ব্যবসায়ী মানিক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে পাইকারি বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ কম। এ জন্য বাজারে চাহিদাও বেড়েছে। প্রতিদিন যেখানে এক থেকে দেড় মণ কাঁচা মরিচ বিক্রি করেন, সেখানে আজ মাত্র ১২ কেজি মরিচ বিক্রি করেছেন।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কাঁচা মরিচের চাহিদা ও দাম বেড়ে যাওয়ায় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আসা অধিকাংশ কাঁচা মরিচ সেসব জেলায় চলে যাচ্ছে। এতে হিলি স্থলবন্দর ও আশপাশের উপজেলার পাইকারি ও খুচরা বাজারে দামে প্রভাব পড়ছে।

হিলি স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, ১ থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ৮৬টি ট্রাকে ৮১৮ টন কাঁচা মরিচ আমদানি করা হয়েছে। ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুরের ফুলবাড়ি ও বিহার রাজ্যের কাটিহার ও অনল জাতের কাঁচা মরিচ আমদানি হচ্ছে বলে আমদানিকারকেরা জানিয়েছেন।

হিলি স্থলবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী সংগনিরোধ কর্মকর্তা ইউসুফ আলী বলেন, ‘হিলি স্থলবন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচ আমদানির জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে এ পর্যন্ত ২৮টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রায় সাড়ে ৭ হাজার টন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি (আইপি) পেয়েছে। স্থলবন্দর দিয়ে নিয়মিত ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি হচ্ছে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *