খাঁন মো. আ. মজিদ, দিনাজপুর : দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে পটল উৎপাদন হচ্ছে। এসব পটল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ব্যবসায়ীদের হাত ধরে চলে যাচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়। উৎপাদন বেশি হওয়ায় হাটবাজারে সরবরাহ বেড়েছে। তবে দাম না পেয়ে হতাশ কৃষকরা।
উৎপাদন খরচ ওঠানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় এ বছর ১ হাজার ২৫৫ হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল জাতের পটলের আবাদ হয়েছে। যা থেকে ২৩ হাজার ২২০ টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৭০ কোটি টাকা।
সবজি ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত উত্তরের জেলা দিনাজপুর। জেলার মাঠে মাঠে এখন বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি চাষ হচ্ছে। বিস্তীর্ণ মাঠে এখন দেখা মিলবে পটল, বেগুন, করলা, কাকরোল, ঢেঁড়স, লাউ ও বিভিন্ন শাকসবজি। তবে অন্যান্য সবজির তুলনায় এখন প্রচুর পটলের আবাদ হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে প্রচণ্ড খরা ও অনাবৃষ্টিতে পটলের উৎপাদন কম হয়েছিল। গত একমাস আগেও ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানে উৎপাদন বেশি হওয়ায় পাইকারিতে ৭-১২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
দিনাজপুরের বিরামপুরে মঙ্গলবার ও শনিবার সাপ্তাহিক হাটবার। ভোরের আলো ফোটার পর কেউ সাইকেল, ভ্যান, অটোরিকশা আবার কেউ কাঁধে করে পটল বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকরা পটল এ হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। এদিন হাটে প্রতিকেজি পটল ৭-১২ টাকায় বিক্রি হয়। যা গত হাটেও ছিল ১৫-১৬ টাকা। কৃষকদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে দিয়েছে, আবার ওজনেও বেশি নিচ্ছে।
সদর উপজেলার ভেলারপাড় গ্রামের কৃষক আব্দুল হালিম মণ্ডল বলেন, গত বছর ১২ কাঠা জমিতে পটলের আবাদ করে প্রায় ৬৫ হাজার টাকা বিক্রি করেছিলাম। এ বছরও একই পরিমাণ জমিতে পটলের আবাদ করা হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে ভালো দাম পেয়ে লাভবান হওয়া গেছে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে পটলের উৎপাদন ভালো হচ্ছে। বর্তমানে উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম কমেছে। এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।
মাহমুদপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বলেন, ১৮ কাঠা জমিতে পটলের আবাদ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে পটলের আবাদে খরচ হয় ২৫-৩০ হাজার টাকা। যা এক মৌসুমে ৯০ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকার বিক্রি হয়ে থাকে। তবে সার-কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় ফসল উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় দাম পাওয়া যাচ্ছে না। ৬৫ কেজি পটল তুলে হাটে পাইকারি বিক্রি করলাম ১০ টাকা কেজি।
মুকুন্দপুর গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ১৮ কাঠা জমি থেকে সপ্তাহে আড়াই মণ পটল ওঠানো হয়। ১০ টাকা কেজি হিসাবে দাম পাওয়া যায় ১ হাজার টাকা। সেখানে কীটনাশক দিতে খরচ হয় ৪০০-৫০০ টাকা। সবকিছুর দাম বেশি। কিন্তু ফসলের দাম পাওয়া যায় না।
পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, সাপ্তাহিক মঙ্গলবার ও শনিবার হাটবার। তবে শনিবারের হাটটি বড় হয়। হাটে প্রচুর পটলের সরবরাহ হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব পটল ৫-৬টি ট্রাকে করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। প্রতিটি ট্রাকে প্রায় দেড় লাখ টাকার পটল থাকে। প্রতি হাটে প্রায় ৮ লক্ষাধিক টাকার বেচাকেনা হয়ে থাকে। তবে সবজিতে পানি থাকায় ৪২ কেজিতে মণ ক্রয় করা হয়।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুজ্জামান বলেন, দিনাজপুর জেলায় এবার ৪৭০ হেক্টর জমিতে পটল চাষ হয়েছে। গত বছর পটলের আবাদ হয়েছিল ৪৬০ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদন ভালো হচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে বাজার কিছুটা ভালো থাকলেও বর্তমানে দাম কমেছে। তবে কিছুদিনের মধ্যে অন্যান্য সবজির পরিমাণ কমে গেলে আবারও বাড়বে পটলের দাম। এতে কৃষকরা লাভবান হবে। তবে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রবিউল হাসান জানান, এ বছর বেশি পরিমাণ পটল উৎপাদন হওয়ার কারণে বাজারে পটলের চাহিদা মেটানোর পরও অতিরিক্ত পটোল থাকছে। ফলে পটলের দাম কমে গেছে।
বিরামপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কমল কৃষ্ণ রায় বলেন, এ বছর বিরামপুর উপজেলায় ৪৪ হেক্টর জমিতে পটল চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পটলের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে পটলের দাম কমেছে।