বৃহস্পতিবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিশ্ব বরেণ্য শিল্পী এসএম সুলতান এঁর জন্মশতবর্ষ উদযাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : চেহারার সঙ্গে মিল রেখে পিতা মাতা আদর করে তাঁর নাম রেখেছিলেন লাল মিয়া। লাল মিয়া জীবনের মূল সুর-ছন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবন, কৃষক এবং কৃষিকাজের মধ্যে। আবহমান বাংলার সেই ইতিহাস-ঐতিহ্য, দ্রোহ-প্রতিবাদ, বিপ্লব-সংগ্রাম এবং বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থাকার ইতিহাস তার শিল্পকর্মকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে। যাঁর ছবিতে গ্রামীণ জীবনের পরিপূর্ণতা, প্রাণপ্রাচুর্যের পাশাপাশি শ্রেণির দ্বন্দ্ব এবং গ্রামীণ অর্থনীতির হাল ফুটে উঠে, বিশ্বসভ্যতার কেন্দ্র হিসেবে গ্রামের মহিমা উঠে এসেছে এবং কৃষককে এই কেন্দ্রের রূপকার হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছেন যিনি, তিনি বিশ্ব বরেণ্য শিল্পী এসএম সুলতান।

১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট শেখ মোহাম্মদ সুলতান তৎকালীন পূর্ব বাংলার নড়াইলের মাসিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রাকৃতিক নৈসর্গ্য এবং প্রতিকৃতি আঁকতেন। তার আঁকা ছবির প্রথম প্রদর্শনী হয়েছিলো ১৯৪৬ সালে সিমলায়। সত্তরের দশকের শুরুর দিকে তিনি নড়াইল জেলার পুরুলিয়া গ্রামে থাকতেন। ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি শিল্পরসিকদের চোখের আড়ালেই থেকে যান। সত্তরের দশকের মধ্যভাগে তার কিছু শুভানুধ্যায়ী তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। এখানে এসে তিনি কিছু ছবি আঁকেন। তার আঁকা এইসব ছবি নিয়ে ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর সুলতানের প্রথম একক প্রদর্শনীর আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং এই প্রদর্শনীর মাধ্যমেই তিনি নতুন করে শিল্পসমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। শিল্পকলা একাডেমির প্রদর্শনীতে তাঁর ছবির মহিমা নতুন করে প্রস্ফুটিত হয়। এই ছবিগুলোর মধ্যে দেখা যায় বিশ্বের কেন্দ্র হচ্ছে গ্রাম আর সেই কেন্দ্রের রূপকার কৃষককে আপন মহিমায় সেখানে অধিষ্ঠিত দেখা যায়। গ্রাম ও গ্রামের মানুষ ছিলো তার শিল্পকর্মের অনুপ্রেরণা আর উপকরণ ছিলো কৃষক এবং কৃষকের জীবন চেতনা। এস এম সুলতান তেলরঙ এবং জলরঙ-এ ছবি আঁকতেন৷ পাশাপাশি রেখাচিত্র আঁকতেন ।শেষ বয়সে তিনি নড়াইলে শিশুস্বর্গ এবং যশোরে চারুপীঠ নামে দুটি শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন সুরসাধক এবং বাঁশিও বাজাতেন। ১৯৮২ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ম্যান অব এশিয়া পুরস্কার লাভ করেন। একই বছর তিনি একুশে পদক পান। ১০ অক্টোবর ১৯৯৪ সালে বিশ্ববরেণ্য শিল্পী শেখ মোহাম্মদ সুলতান মৃত্যুবরণ করেন।

১০ আগস্ট বিশ্ব বরেণ্য শিল্পী এসএম সুলতান-এর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে তাঁর জন্মস্থান নড়াইলে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।
নড়াইলে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় থাকছে- সকাল ১১.০০ মি. বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি (বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ চেতনা চত্বর, নড়াইল) এরপর সকাল ১১.৩০ মি. থাকবে শিল্পী এস এম সুলতানের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি। সকাল ১১.৪৫ মি. শিল্পী এস এম সুলতানের জীবন ও কর্মের উপর শিশুদের অংকিত চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হবে শিশু স্বর্গ মিলনায়তনে। দুপুর ১২.০০ টায় সারাদেশের ২০ জন বরেণ্য শিল্পীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে আর্টক্যাম্প ও তাদের তত্ত্বাবধানে শিশু চিত্রকর্মশালা। অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা হলেন – শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী হামিদুজ্জামান খান, শিল্পী আব্দুল মান্নান,শিল্পী রোকেয়া সুলতানা,শিল্পী নাইমা হক, শিল্পী আইভি জামান, শিল্পী নাসিম আহমেদ নাদভী, শিল্পী সৈয়দা মাহবুবা করিম, শিল্পী নাজমা আক্তার, শিল্পী সমীরণ চৌধুরী, শিল্পী বিমানেশ বিশ্বাস, শিল্পী নিখিল চন্দ্র দাস, শিল্পী বলদেব অধিকারী, শিল্পী সুশান্ত অধিকারী, শিল্পী সমীর মজুমদার, শিল্পী সমীর বৈরাগী, শিল্পী অনাদি বৈরাগী, শিল্পী মাহবুব জামাল শামীম, শিল্পী নজরুল ইসলাম অগ্রানী, শিল্পী সুফিয়া বেগম।
বিকাল ৩.০০ মি. শিশু চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে শিশু স্বর্গ, নড়াইলে। বিকাল ৪.৩০ মি. শিশুদের নিয়ে থাকবে চিত্রা নদীতে নৌকা ভ্রমণ। সন্ধ্যা ৬.০০টার আয়োজনে থাকছে শিল্পী এসএম সুলতানের চিত্রকর্মের পর্যালোচনা (জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তন, নড়াইল)। সন্ধ্যা ৬.২০মি. আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তন, নড়াইলে।

আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন খলিল আহমদ, সচিব, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। উদ্বোধন করবেন হাসনাত আবদুল হাই, বিশিষ্ট লেখক ও শিল্প সমালোচক। সম্মানিত অতিথি হিসেবে থাকবেন ইমেরিটাস অধ্যাপক শিল্পী হাশেম খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী, জেলা প্রশাসক, নড়াইল এবং সভাপতি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।
সন্ধ্যা ৭.০০ টায় প্রামাণ্যচিত্র ‘আদমসুরত’ প্রদর্শিত হবে। ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত সাত বছর ধরে এস এম সুলতানের উপর ভিত্তি করে নির্মাণ করা হয় আদম সুরত। চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের প্রযোজনা এবং পরিচালনায় এই প্রামাণ্যচিত্রে সুলতানের দৈনন্দিন কর্মজীবন তুলে ধরার পাশাপাশি বাংলার সংস্কৃতি এবং কৃষিচিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তন, নড়াইল।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on tumblr
Tumblr
Share on telegram
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ