সোমবার, ২৩শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,৭ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

বেনজীরের রিসোর্টে ক্রোক বিজ্ঞপ্তি

যায়যায় কাল প্রতিবেদক : আদালতের আদেশে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন গোপালগঞ্জের ‘সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক’ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর সেখানে রিসিভার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া পার্কের ফটকে ক্রোক বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়ে দিয়েছে দুদক; যেখানে পার্কের মালামাল লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

দুই দিন আগে গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলা প্রশাসন পার্কটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। সোমবার বেলা ১১টা থেকে রিসিভাররা দায়িত্ব বুঝে নেনবলে জানান দুদক গোপালগঞ্জ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান। দুপুরে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল পার্কটির বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে দেখেন।

এ সময় কাজী মাহবুবুল আলম সাংবাদিকদেরকে বলেন, “আপাতত পার্কটি বন্ধ থাকলেও খুব তাড়াতাড়ি আদালতের অনুমতি নিয়ে চালু করা হবে।”

এ সময় গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ফারহানা জাহান উপমা, দুদক গোপালগঞ্জের উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহসিন উদ্দীনসহ কৃষি ও মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে শনিবার সকাল থেকে পার্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলা প্রশাসন। এখন থেকে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী দুই জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে পার্কের যাবতীয় কার্যক্রম চলবে।

গত ৩১ মার্চ ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ ও ৩ এপ্রিল ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন দৈনিক কালের কণ্ঠ। সেখানে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গোপালগঞ্জে প্রায় ১৪০০ বিঘা জমিতে একটি ইকো রিসোর্ট গড়ে তুলেছেন বেনজীর পরিবার। এছাড়া ঢাকা ও পূর্বাচলে সাবেক এ আইজিপির একাধিক ফ্ল্যাট ও বাড়ি আছে।

বনের জমি দখল করে গাজীপুরে রিসোর্ট বানানোর অভিযোগও আনা হয়েছে দৈনিকটির প্রতিবেদনে। ওই রিসোর্টের এক-চতুর্থাংশের মালিকানা বেনজীর পরিবারের বলে পত্রিকাটি দাবি করেছে।

বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যে হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন সাবেক আইজিপি বেনজীর এবং তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে দুদকে আবেদন করেন।

এরপর গত ১৮ এপ্রিল কমিশন সভায় অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নেয় দুর্নীতি দমন কমিশন। সেজন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।

অনুসন্ধান কমিটির সদস্যরা হলেন- উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক নিয়ামুল হাসান গাজী এবং জয়নাল আবেদীন।

বিষয়গুলো নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বললেও গত ২০ এপ্রিল ফেইসবুক লাইভে এসে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন বেনজীর আহমেদ।

তিনি দাবি করেন, যেসব অভিযোগ তার এবং পরিবারের বিরুদ্ধে উত্থাপন করা হয়েছে, তার বেশিরভাগই ‘মিথ্যা’।

যেসব সম্পত্তি অর্জনের তথ্যকে ‘মিথ্যা’ বলছেন, কেউ যদি সেই তথ্যকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তবে সেই সম্পত্তি সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে হাসিমুখে লিখে দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন সাবেক পুলিশ প্রধান।

এদিকে বেনজীর আহমেদের সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে সোমবার হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান ।

দুদক চেয়ারম্যান, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট চারজন এবং বেনজির আহমেদকে বিবাদী করা হয় সেখানে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বেনজীর আহমেদের বিপুল অর্থ-সম্পদের বিবরণ তুলে ধরা হয়।

সেখান বলা হয়, বেনজীরের বিপুল সম্পদের মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামের এক অভিজাত ও দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্র। এছাড়াও তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ছয়টি কোম্পানির খোঁজ পাওয়া গেছে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে বেনজীর আহমেদের দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার পাশে বিঘার পর বিঘা জমি রয়েছে। দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচতারা হোটেল লা মেরিডিয়ানের রয়েছে দুই লাখ শেয়ার। পূর্বাচলে রয়েছে ৪০ কাঠার সুবিশাল জায়গাজুড়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা। একই এলাকায় আছে ২২ কোটি টাকা মূল্যের আরও ১০ বিঘা জমি। অথচ গত ৩৪ বছর সাত মাসের দীর্ঘ চাকরিজীবনে বেনজীর আহমেদের বেতন-ভাতা বাবদ মোট আয় এক কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকার মত হওয়ার কথা।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *