বৃহস্পতিবার, ১৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,৩রা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

ব্যাংক লুটে অভিযুক্ত নাফিজের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত শুরু

যায়যায় কাল প্রতিবেদক : আর্থিক খাতে আলোচিত নাম চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধে ব্যাংক দখল ও শেয়ারবাজার থেকে টাকা লুটপাটের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদক নাফিজ সরাফাত ছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ এবং এস আলম গ্রুপের ইসলামী ব্যাংক দখল করে নেওয়ার অভিযোগেরও তদন্ত শুরু করেছে।

বৃহস্পতিবার দুদক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সাবেক ব্যাংকার চৌধুরী নাফিজ সরাফাত পদ্মা ব্যাংকের (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান রেইসের মালিকানার সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়া তার মোবাইলের টাওয়ার কোম্পানি, বিদ্যুৎ কোম্পানি, তারকা হোটেল ব্যবসা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, গণমাধ্যমসহ নানা ব্যবসা রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক পরিচালক বৃহস্পতিবার বলেন, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত পুলিশ ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সহায়তা নিয়ে পদ্মা ব্যাংক দখল করেছিলেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে শেয়ারবাজার থেকে ৮০০ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধে পদ্মা ব্যাংক দখল ও শেয়ারবাজার থেকে টাকা লুটপাটের অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তার এসব অনিয়ম নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

সাবেক ফারমার্স (বর্তমানে পদ্মা) ব্যাংক গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে ২০১৭ সালে পদ ছাড়তে বাধ্য হন ব্যাংকটির তৎকালীন চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। এরপরই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংকটির নাম পাল্টানো হয়। নাম দেওয়া হয় পদ্মা ব্যাংক।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।

চৌধুরী নাফিজ সরাফাত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দণ্ড-সুদ, জরিমানা মওকুফসহ বিভিন্ন ছাড় পায় পদ্মা ব্যাংক। এরপরও ব্যাংকটি ধুঁকছে। ২০২৩ সালের শেষে পদ্মা ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণই ৩ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। ফলে ঋণ থেকে যে আয় হয়, তা দিয়ে আমানতের সুদ পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। ব্যাংকটি বড় অর্থের লোকসান গুনছে বলে জানা গেছে।

এস আলমের ইসলামী ব্যাংক অনিয়মের অনুসন্ধান শুরু: গত বছরের নভেম্বর মাসে ইসলামী ব্যাংক থেকে ২ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগের তদন্ত শুরু করে দুদদ। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় এস আলম গ্রুপ। এখন ব্যাংকটির এক-তৃতীয়াংশ ঋণই গ্রুপটির স্বার্থসংশ্লিষ্ট।

ওই নভেম্বর মাসে ইসলামী ব্যাংক থেকে নানা উপায়ে ৮টি প্রতিষ্ঠান ২ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা তুলে নেয়। এ জন্যই ব্যাংকটির কর্মকর্তারা ওই মাসকে ‘ভয়ংকর নভেম্বর’ হিসেবে বর্ণনা করেন। গত বছর ডিসেম্বর মাসেও ব্যাংকটির চট্টগ্রামের তিনটি শাখা থেকে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণসুবিধা দেওয়া হয়। এর মধ্যে মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৫৪ কোটি টাকা, ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৮৪ কোটি টাকা ও সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টসের ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ১১৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকের রাজশাহীর কয়েকটি শাখা থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়।

দুদক আগেই ইসলামী ব্যাংক থেকে অনিয়ম-দুর্নীতি করে টাকা তুলে নেওয়ার বিষয়টির অনুসন্ধান শুরু করেছিল। তবে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় সেই অনুসন্ধান বন্ধ হয়ে যায়।

দুদক সূত্র বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চার দফা ইসলামী ব্যাংকের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তখন বাংলাদেশ ব্যাংক দুদককে কোনো তথ্য দিয়ে সাহায্য করেনি। তাই অনুসন্ধান বন্ধ করে দেওয়া হয়।

শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ইসলামী ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা তুলে নেওয়ার বিষয়টির নতুন করে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধানসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ইয়াসির আরাফাত বলেন, ১২ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *