
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় জেলা পরিষদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার। গতকাল শনিবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথ সভা শেষে ৬১ জেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলের সমর্থন পাওয়া প্রার্থীদের নাম জানানো হয়। সেখানেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসেছে আল মামুন সরকারের নাম।
জেলায় আল মামুন সরকার ছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের বর্তমান জেলা প্রশাসক আলহাজ্ব শফিকুল আলম এমএসসি ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়ির সহসভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন দলের সমর্থনপ্রত্যাশী ছিলেন। শফিকুল ও হেলাল দলীয় সমর্থন পেতে যথেষ্ঠ দৌড়ঝাঁপ এবং প্রচার-প্রচারণাও করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত আল মামুন সরকারকেই বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আল মামুন সরকার বলেন, আমাকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য আমি দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি আমার প্রতি আস্থা রেখেছেন। আমি নির্বাচিত হলে রাজনীতি ও সমাজসেবায় সেই আস্থার প্রতিফলন ঘটাতে সর্বাত্মক চেষ্টা করব।
দলের সমর্থনপ্রত্যাশী সাবেক পৌর মেয়র হেলাল উদ্দিন বলেন, আল মামুন সরকারকে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিয়েছেন। আমরা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বাইরে যাব না। আল মামুন সরকার জেলার সাধারণ সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। আগের জেলা পরিষদ নির্বাচনেও আমি দলের প্রার্থীর পক্ষে নিরলসভাবে কাজ করেছি।
জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক শফিকুল আলম বলেন, ‘দল যাকে ভালো মনে করেছে তাকে সমর্থন দিয়েছে।’ দলের সমর্থন না পেলেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া আল মামুন সরকার দলের তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসা একজন নেতা। তিনি ১৯৬৯ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগে যোগ দেয়ার মাধ্যমে ছাত্ররজনীতি শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা ছাত্রলীগের কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন। পরে তিনি পর পর দুইবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
আল মামুন সরকার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ ছাত্র-ছাত্রী সংসদের ভিপি ছিলেন। পর্যায়ক্রমে তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ১০০টি ইউনিয়ন, ৯টি উপজেলা ও পাঁচটি পৌরসভায় জনপ্রতিনিধির সংখ্যা এক হাজার ৩৯৬ জন। এর মধ্যে দুজন জনপ্রতিনিধির মৃত্যুতে জেলা পরিষদের নির্বাচনে মোট ভোটার এক হাজার ৩৯৪ জন।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ থাকবে। আপিল নিষ্পত্তি করা হবে ২২ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। এরপর বৈধ প্রার্থীরা ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারবেন। ২৬ সেপ্টেম্বর প্রতীক বরাদ্দের মাধ্যমে শুরু হবে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট নেয়া হবে।