শুক্রবার, ১৩ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২৭শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

ভিডিও ভাইরাল: শরীয়তপুরের সেই ডিসি ওএসডি

যায়যায়কাল প্রতিবেদক: এক নারীর সঙ্গে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ছড়ানোর পর শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে।

শনিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ আদেশ দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় আদেশের চিঠি শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পৌঁছায়।

শরীয়তপুরের একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিনের সঙ্গে এক নারীর আপত্তিকর ভিডিও ও ছবি ছড়িয়ে পড়ে। এরপর জেলাজুড়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার রাতে একটি ভাড়া করা গাড়িতে শরীয়তপুর থেকে চলে যান আশরাফ উদ্দিন।

শনিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন নিয়োগ শাখা থেকে তাকে (জেলা প্রশাসক) ওএসডি করার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বলেন, বৃহস্পতিবার সারা দিন অফিস করার পর সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক তার বাংলোতে ফেরেন। এরপর রাতে তিনি একটি ভাড়া করা গাড়িতে শরীয়তপুর ছাড়েন।

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক নারীর সঙ্গে তাকে নিয়ে ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করা হয়। এ নিয়ে দুই দিন ধরে একটা বাজে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের। আজ সন্ধ্যায় তাকে ওএসডি করার আদেশ এসেছে।

ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিও নিয়ে শুক্রবার রাতে কথা বলেন জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন। তিনি দাবি করেন, ছবি ও ভিডিওতে থাকা নারী তার আত্মীয়। পরিবারে যাতায়াতের কারণে তাদের সম্পর্ক তৈরি হয়। প্রকাশ পাওয়া ছবি ও ভিডিও কিছু সত্য এবং কিছু মিথ্যা। ওই নারী গত বছর সেপ্টেম্বরে তার স্বামীকে তালাক দেন।

ছবি ও ভিডিওগুলো শরীয়তপুরে আসার আগের দাবি করে আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ওই নারী আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেন। আমি ডিসি হিসেবে পদায়নের পর তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। নানাভাবে আমাকে ব্ল্যাকমেল করতে থাকেন। বিভিন্ন সময় ঘুমের ওষুধ ও নেশাদ্রব্য খাইয়ে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করে আমার ছবি ও ভিডিও ধারণ করতেন। ব্ল্যাকমেল করে প্রতি মাসে টাকা হাতিয়ে নিতেন। পূবালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে তার অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়া হয়েছে। টাকা দেওয়ার ডকুমেন্ট আছে। সর্বশেষ তিনি চাপ দিতে থাকেন, আমার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তাকে বিয়ে করতে হবে। নয়তো বড় অঙ্কের টাকা দিতে হবে। ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় টাঙ্গাইলের কিছু সংবাদকর্মী ও আইনজীবীকে ছবি ও ভিডিও সরবরাহ করেন। এ ছাড়া শরীয়তপুরের এক আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে টাকা আদায় করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। ব্যক্তিগত ও সংবেদনশীল ছবি জনসমক্ষে প্রকাশ করার অধিকার কেউ রাখেন না। এ কারণে ওই নারীর বিরুদ্ধে আমি আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারি।’

ভিডিওতে থাকা ওই নারীর বাড়ি টাঙ্গাইলে। তিনি স্বামীর সঙ্গে ঢাকার মিরপুর এলাকায় থাকতেন। জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিনের বাসাও মিরপুর এলাকায়। স্বামীর সঙ্গে ওই নারীর বিচ্ছেদ হওয়ার পর তিনি টাঙ্গাইলে বসবাস করছেন। শুক্রবার কয়েক দফা ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি।

শরীয়তপুরের একজন সাংবাদিকের সঙ্গে ওই নারী যোগাযোগ করেছেন।

সেখানে তিনি দাবি করেন, আশরাফ উদ্দিন তাকে বিয়ের কথা বলে তার সংসার ভেঙেছেন। এখন বিয়ে না করে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। ঘুমের ওষুধ খেয়ে, নেশা করে আত্মহত্যা করার ভয় দেখিয়ে তার প্রতি তাকে (নারী) দুর্বল ও আসক্ত করেন। এক বছর ধরে তাদের সম্পর্ক চলছে। বিয়ের জন্য বললে ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেবেন এমন হুমকিও দিয়েছেন।

দুই মাস ধরে জেলা প্রশাসক ও ওই নারীর মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা করেন শরীয়তপুর জজ আদালতের একজন আইনজীবী।

তিনি বলেন, ‘একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করতেন। আমি দুজনকেই প্রস্তাব দিয়েছিলাম বিয়ে করার জন্য, কিন্তু ওই নারী রাজি হননি। তিনি সমঝোতার জন্য বড় অঙ্কের টাকা দাবি করেছিলেন, যা পরিশোধের জন্য সময় দেওয়া হয়েছিল ৩০ জুনের মধ্যে। ওটা নিয়েই আলোচনা চলছিল। তার মধ্যেই এমন ছবি ও ভিডিও মানুষের সামনে চলে এল।’

জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বছরের নভেম্বর মাসে জেলা প্রশাসক হিসেবে শরীয়তপুরে যোগদান করেন ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন।

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তার সঙ্গে ওই নারীকে জড়িয়ে একটি আপত্তিকর ভিডিও ক্লিপ ও চারটি আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

শুক্রবার বিকেলে আশরাফ উদ্দিন ওই নারীর উদ্দেশে আবেগঘন কিছু কথা বলছেন, এমন একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *