নুরুল আমিন, ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম): কুড়িগ্রাম জেলার তিনদিকে সীমান্ত বৃষ্টিতে উপজেলা ভুরুঙ্গামারী। উপজেলার মাঠ এখন ফাঁকা। সোনালি ধান আমন কাটা শেষ বললেই চলে। কৃষক- কৃষাণীরা ধান মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গত বছরের তুলনায় এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে ধানের চাহিদা ও ব্যাপক। বেশি দাম পেয়ে খুব খুশি কৃষকরা।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি কৃষকের বাড়িতে কিষাণ- কিষানীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন ধান মারাই- ঝাড়াইয়ে। কোথাও দেখা মিলছে রাত্রি জেগে ধান সিদ্ধ করা প্রতিযোগিতা। আগামী ছয় মাসের খাবার সিদ্ধ ধান ঘরে তোলার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত সবাই।
কথা হয় তিলাই ইউনিয়নের দক্ষিণ তিলাই গ্রামের আব্দুর রহিমের স্ত্রী জরিনা বেগমের সঙ্গে।
তিনি জানান, এখন ধানসিদ্ধ শুকনা না করে, ঘরে না উঠালে কিছুদিনের মধ্যেই ব্যাপক শীত পড়বে। তখন সূর্যের আলো দেখা মিলবে না। ঠান্ডায় নাজেহাল হয়ে যাব। ওই সময় কি আর ধান সিদ্ধ করা ও শুকানো যাবে?
এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এই উপজেলায় গত বছরের চেয়ে এ বছর আমনের ফলন ভালো হয়েছে ইতিমধ্যে প্রায় ৯০ ভাগ ধান কৃষক তাদের ঘরে তুলেছেন। বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় কৃষক দামও বেশি পাচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস ও কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলায় আমন ধান চাষের লক্ষমাত্রা ছিল ১৬ হাজার ৮৬০ হেক্টর। হাইব্রিড ৫.৭০ টন ও উফশি ৪.৮ টন প্রতি হেক্টরে যা অর্জিত হয়েছে।
এক প্রেস ব্রিফিংয়ে খাদ্যসচিব মো. মাসুদুল হাসান জানান, চলতি আমন মৌসুমে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩৩ টাকা কেজি দরে সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন ধান ও ৪৭ টাকা কেজি দরে সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করবে সরকার।
মাঠে কৃষকের ফসল কাটা শেষ। চলছে গোলাজাতকরণ, ধান সিদ্ধ ও সংরক্ষণের কাজ। উপজেলার আন্ধারীঝাড়, জয়মনিরহাট, ভূরুঙ্গামারী, সোনাহাট, বলদিয়া, চর-ভূরুঙ্গামারী, পাগলাহাটের হাট- বাজার ঘুরে এবং বিভিন্ন কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার ধানের ফলন প্রতি বিঘায় (৩৩ শতক) ১৬-১৮ মণ হারে ধান হয়েছে। বাজারে এক মণ ধান স্থান ভেদে ১৩শ’ থেকে ১৩শ’ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধানের দাম বেশি পেয়ে কৃষকদের মনে আনন্দ দোলা দিচ্ছে। স্থানীয় হিসাব মতে প্রতি বিঘায় উৎপাদন খরচ হয়েছে গড়ে ১২ হাজার টাকা। ধান বিক্রি হচ্ছে প্রতি বিঘায় ২১ হাজার টাকা। আয় হচ্ছে ৯ হাজার টাকা। যা অন্যান্য বছরের তুলনায় লাভজনক।
অপরদিকে স্থানীয় খেটে খাওয়া দিনমজুর-শ্রমিকের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম অনেক বেশি। স্থানীয় বাজারে চাল কিনতে গেলে মোট চালের দাম ৫৪/৫৫ টাকা কেজি। যে হারে দৈনিক রুজি রোজগার হয় তা দিয়ে সংসার চালানো মুশকিল।