মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী : মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে নীলফামারী বাফার গুদামে ট্রাক থেকে সার খালাস বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেছেন লেবার-শ্রমিকেরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েন খালাসের অপেক্ষায় থাকা দূর-দূরান্ত থেকে সার নিয়ে আসা ট্রাকচালকেরা। এতে প্রধান সড়কে ট্রাকের দীর্ঘ সারিতে যানজটের সৃষ্টি হয়। শনিবার সার সংরক্ষণাগার বাফার গুদামে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, নীলফামারী বাফা সার গুদামের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে প্রতি মে.টন লোড–আনলোড করার জন্য মজুরি প্রদান করা হয় তিন টাকা। কিন্তু লাগামহীন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হলেও মজুরির কোনো পরিবর্তন হয়নি। এ বিষয়ে একাধিকবার ঠিকাদার ও গুদাম সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে কোনো কাজ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে কাজ বন্ধ রাখেন শ্রমিকেরা। পরে গুদাম কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ৩টার পর থেকে আনলোডের কাজ শুরু করেন লেবার- শ্রমিকেরা।
এদিকে শ্রমিকদের কাজ বন্ধের ঘটনায় বিপাকে পড়েছেন দূর-দূরান্ত থেকে সার নিয়ে আসা ট্রাকচালকেরা। যশোরের নওয়াপাড়া ও নগরবাড়ি থেকে সার নিয়ে এসে খালাসের জন্য গত তিন দিন ধরে অনেকেই অপেক্ষায় আছেন এমন অভিযোগ সড়কে সারিবদ্ধ থাকা ট্রাকচালকদের।
ট্রাকচালক কুরবান আলী বলেন, যশোরের নওয়াপাড়া হতে সার নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সার গুদামে পৌঁছাই। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির কারণে কাজ করেননি শ্রমিকেরা। এরপর শনিবার সকালে হটাৎ মজুরী বৃদ্ধির দাবীতে কাজ বন্ধ রাখে শ্রমিকেরা। প্রায় তিন দিন ধরে ভেতরে ঢুকতে না পেরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি।
তিনি বলেন, ‘সময়মতো খালাস না হওয়ায় প্রতিদিন হেলপারসহ দুজন মানুষের খাওয়া খরচ হচ্ছে এক হাজার টাকা। এ টাকা মালিক দেবে না, পকেট থেকে খরচ করছি। আসার সঙ্গে সঙ্গে খালাস হলে অতিরিক্ত খরচ হতো না। এ ছাড়া অন্য ভাড়ায় যে আয় হতো, এখানে বসে থেকে সেটিও হারাচ্ছি। বসে থেকে যে টাকা খরচ করছি, সেটি মহাজনের কাছে দেনা হয়ে থাকবে।’
নওয়াপাড়া থেকে সার নিয়ে আসা ট্রাকচালক সেলিম ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার পৌঁছালে ও ৩৬ নম্বর সিরিয়ালে আছি। আমরা নওয়াপাড়া থেকে দেশের বিভিন্ন বাফার গুদামে সার পরিবহন করি। এর আগেও নীলফামারীতে এসেছি, কিন্তু এবার এসে বিপদে পড়লাম।
ট্রাকচালক আরজু বলেন, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গুদামের শ্রমিকরা লোড–আনলোড বন্ধ রাখায় গুদামের ভেতরে আনলোডের অপেক্ষায় অনেক ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। আমরা ভেতরে জায়গা না পেয়ে সড়কে অন্তত ৫০টির বেশি ট্রাক সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে, জানি না কখন খালাস হবে। এভাবে সড়কে দাঁড়িয়ে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। রাতে পাহারা দিতে গিয়ে ঘুম হচ্ছে না। খাওয়া–শৌচাগারের সমস্যা তো আছেই।
এ বিষয়ে লেবার সর্দার সায়েদ আলম বলেন, প্রতি টন সার আনলোড তিন টাকা দরে সারা দিন কাজ করে শ্রমিকদের মাত্র দুই থেকে তিন শ টাকা পায়। এ আয়ে সংসার চলে না। আমরা বহুদিন ধরে টাকা বাড়ানোর জন্য তাগিদ দিয়ে আসছি। কিন্তু কেউ আমাদের কথা শুনছে না। বাধ্য হয়ে শনিবার সকালে লেবাররা কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে গুদাম কর্তৃপক্ষের অনুরোধে বেলা ৩টার পর আনলোডের কাজ শুরু করি। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় কাজ বন্ধ ছিল। এতে করে অনেক ট্রাক আনলোডের অপেক্ষায় রয়েছে।
লোডিং-আনলোডিং ঠিকাদার আনছার আলী বলেন, ‘লেবাররা প্রতি টন আনলোডিং দুই টাকা ও লোডিং এক টাকা করে মজুরি পান। এই মজুরিতে তারা কাজ করে আসছেন। এ বিষয়ে তারা আমার সঙ্গে কখনো কোন কথা বলেনি।
শুক্রবার ছুটি থাকায় কাজ বন্ধ ছিল। শনিবার সকালে হঠাৎ করে শুনি তারা কাজ বন্ধ রেখেছে। এরপর গুদাম কর্তৃপক্ষের অনুরোধে বেলা ৩টার দিকে কাজ শুরু করেন তারা।
নীলফামারী বাফা গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খাদেমুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকরা কাজ করেন ঠিকাদারদের অধীনে। ঠিকাদারদের বাড়ি দূরে হওয়ায় লেবার সর্দার শ্রমিকদের কাছে কিছু তথ্য গোপন রেখে ফায়দা নেয়। এ জন্য লেবার সর্দার এবং শ্রমিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাঁধে। বিষয়টি কথা বলে কাজ সচল রাখা হয়েছে।’