মো. রাশেদুল ইসলাম, কচাকাটা (কুড়িগ্রাম): মাটির বদলে নারকেলের ছোবড়ার গুঁড়া (কোকোপিট) ব্যবহার করে সবজির চারা উৎপাদন করা হচ্ছে কুড়িগ্রামে। আধুনিক এই পদ্ধতিতে খরচ কম হয় এবং সবজির চারা মাটিবাহিত রোগবালাই থেকে মুক্ত থাকে। সবজির ফলনও বেশি হয়। সেজন্য কুড়িগ্রাম অঞ্চলের সবজিচাষিরা দিন দিন এই চারা রোপণে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
জানা গেছে, কৃষি প্লাটফর্ম ব্যক্তিমালিকানার একটি প্রতিষ্ঠান কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার দক্ষিণ বেপারীহাট এলাকার যুবক এইচ এম ইদ্রিস হুসাইন সবজির চারা উৎপাদনের প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেন।
এই প্রতিষ্ঠানে বেগুন, মরিচ, টমেটো, লাউ, ব্রকলি ও পেঁপের এরকম ৩৫-৪০ প্রজাতির চারা উৎপাদন করেন তারা। এসব চারা নাগেশ্বরী‚ উলিপুর‚ভুরুঙ্গামারী‚ চিলমারী‚ রাজিবপুর‚ ফুলবাড়ি‚ রৌমারী‚ রাজারহাট‚ কুড়িগ্রাম সদর এবং বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা কিনে নেন। সারাদেশে অনলাইনের মাধ্যমে পাঠানো হয় বলে জানান এই কৃষি প্লাটফর্মের পরিচালক।
সম্প্রতি কুড়িগ্রাম মহাসড়কের পাশে বেপারীহাট এলাকায় কৃষি প্লাটফর্ম দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিকেরা বীজ বপন, চারা তৈরি, পরিচর্যা প্রভৃতি কাজে ব্যস্ত। আর আধুনিক প্রযুক্তিতে গড়ে তোলা বিশাল দুটি শেডে থরে থরে সাজিয়ে রাখা সবজির চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা।
কুড়িগ্রাম থেকে চারা কিনতে আসা সেলিম হোসেন বলেন‚ আমি পেঁপে গাছ নিতে আসছি। অনেকের কাছ থেকে এই কৃষি প্লাটফর্মের চারার কথা শুনেছি। এই চারা গুলো অনেক যত্ন করে তৈরি করে তারা। আর এগুলো চারা রোপণ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
কৃষি প্লাটফর্মের কাজ করা এক শ্রমিক বলেন‚ এখানে ৩ মাস থেকে কাজ করতেছি। আমরা নিয়মিত কাজ করি ৫ জন যখন কাজের চাপ বেশি থাকে ৮-৯ জন কাজ করতে হয়। এখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে চারা কিনতে ক্রেতারা আসে।
জানতে চাইলে কৃষি প্লাটফর্মমের পরিচালক ইদ্রিস হুসাইন বলেন, মাটির বদলে কোকোপিট বা নারকেলের ছোবড়ার গুঁড়া ব্যবহার করলে সবজির চারা পর্যাপ্ত খাবার ও পানি সংগ্রহ করতে পারে। ফলে সনাতন পদ্ধতিতে উৎপাদিত চারার তুলনায় এই চারা দ্রুত বড় হয় এবং ৭ থেকে ১০ দিন আগে গাছে ফলন চলে আসে। তা ছাড়া মাটিতে তৈরি চারা তুলে রোপণের সময় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ শিকড় ছিঁড়ে যায়। শিকড়ের ওই ছেঁড়া অংশ দিয়ে মাটিবাহিত জীবাণু প্রবেশ করে। ফলে গাছের চারা প্রয়োজনীয় খাবার ও পানি সংগ্রহ করতে পারে না। এতে চারা–গাছে রোগবালাইয়ের আক্রমণ বেশি হয় এবং ফলন কমে যায়। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন। অন্যদিকে কোকোপিট পদ্ধতিতে চারা রোপণ করলে একদিকে উৎপাদন খরচ কম হয়, অন্যদকে ফলন বেশি পাওয়া যায়।