শনিবার, ১৩ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মাধবপুর চলছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস

মাধবপুর প্রতিনিধি : মাধবপুরে জমে উঠেছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। প্রচার – প্রচারণা শেষে চলছে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি। প্রার্থীরা জয় নিশ্চিত করতে নিজ প্রতীকের পক্ষে ভোট চেয়ে খুদেবার্তা পাঠাচ্ছেন ভোটারদের, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। প্রার্থীদের সমর্থনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখনো চলছে ব্যাপক প্রচারণা।

বুধবার মাধবপুর উপজেলায় ভোট গ্রহণের দিন। এই উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২,৭৩,১৯২ জন। পুরুষ ভোটার ১,৩৯,৩৩৪ ও মহিলা ভোটার ১,৩৩,৮৫৭ জন। মাধবপুর উপজেলায় ১১ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা রয়েছে, যার আয়তন ২৯৫বর্গ কিলোমিটার।

এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন তিনজন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন। তবে ভোটারদের আগ্রহের মূল কেন্দ্রবিন্দু চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ঘিরে।

মাধবপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের দুই প্রার্থী লড়াই করছেন তারা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারমান জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা হবিগঞ্জ -৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সাইদুল হক সুমন সমর্থিত প্রার্থী সৈয়দ হাবিব উল্লাহ সূচন। এর মধ্যে জাকির হোসেন (আনারস) এবং হাবিব উল্লাহ (শালিক পাখি) প্রতীকে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বিভক্তিকে কাজে লাগিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো বিজয়ী হতে মরিয়া বিএনপির বহিষ্কৃত প্রার্থী জেলা বিএনপি সাবেক সহ সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ শাহজাহান।

বিএনপি দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচন বর্জন করলেও দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাঁর পক্ষে মাঠে ঐক্যবদ্ধ এবং সরব। জেলা বিএনপির (বহিষ্কৃত) সাবেক সহ-সভাপতি সৈয়দ শাহজাহান ঘোড়া প্রতীকে নির্বাচন করছেন। তিনি গত ১০ বছর ধরে চেয়ারম্যান পদে দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি ১৯৯০ সালেও চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর মধ্যে ভোট ভাগাভাগি হলে জয়ের ফসল উঠবে বিএনপি প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের সৈয়দ শাহজাহানের ঘরে।

মাধবপুর একসময় আওয়ামীলীগের শক্ত ঘাঁটি ছিল। কিন্তু গত জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গৃহবিবাদে বিভক্ত হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ। উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিসহ সহযোগী সংগঠনের কমিটি হচ্ছে না দীর্ঘদিন ধরে। গেল জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এর খেসারত দিতে হয়েছে দলটিকে। বিভক্তি থাকায় লাখো ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের কাছে হেরেছেন নৌকা প্রতীকের দলীয় প্রার্থী সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। আওয়ামী লীগ নেতা হাবিব উল্লাহ সূচনের পক্ষে ভোটের মাঠে সরব রয়েছেন ব্যারিস্টার সুমনের কর্মী-সমর্থকরা।

এতে বেকায়দায় পড়তে পারেন সূচনের চেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী অসীম চৌধুরী। তবে নির্বাচনে অসীম চৌধুরী এবং সৈয়দ শাহজাহানের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্ধিতা হবে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। দু’জনই বিভিন্ন সময় চেয়ারম্যান ছিলেন। তারা উভয়ই জনগনের কাছে পরীক্ষিত সৈয়দ শাহজাহান গত ১০ বছর ধরে চেয়ারম্যান পদে দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি ১৯৯০ সালেও চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। অন্যদিকে অসীম চৌধুরী এর আগে ২০০৯ সালে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও পৌর বিএনপি সাবেক সভাপতি (বহিষ্কৃত) আব্দুল আজিজ (চশমা), মাধবপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও মাধবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এরশাদ আলী (বই)। জগদীশপুর জেসি স্কুল এন্ড কলেজের পরিচালনা কমিটির সদস্য সৈয়দ সামসুল আরেফিন রাজীব (তালা), আসাদুজ্জামান গেন্দু (টিয়াপাখি), মুফতি সুলাইমান গাজী (টিউবওয়েল), চা শ্রমিক নেতা বাবু দিরা নায়েক ধীরু(মাইক)।

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহানারা বেগম শেলী (ফুটবল), বিএনপি মহিলা দলের সাবেক যুগ্ন সাধারন সম্পাদক (বহিষ্কৃত) সেলিনা আক্তার (কলস), জেলা মহিলা আওয়ামীলগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফাতেমা তুজ জোহরা রিনা (পদ্মফুল), মাধবপুর মডেল প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি আসমা আক্তার চৌধুরী (সেলাই মেশিন) মার্কায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

মাধবপুরে অতীতের দুইটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ফল পর্যালোচনা করলে জানা যায়, ২০১৪ সালে সৈয়দ মোহাম্মদ শাহজাহান ৭২ হাজার ৯২৫ ভোট, জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম ৩৬ হাজার ৪১৪ ভোট। সৈয়দ হাবিবউল্লাহ সুচন ৪ হাজার ৩৯ ভোট। ২০১৯ সালে সৈয়দ মোহাম্মদ শাহজাহান ৫৬ হাজার ৭৫০ ভোট, এহতেশামুল বার চৌধুরী লিপু ২৬ হাজার ৮৬৯ ভোট, আতিকুর রহমান আতিক ২৩ হাজার ৪৯১ভোট।

ভোট গ্রহনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে যায়যায় কালকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এ কে এম ফয়সাল বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোর বিষয়ে প্রশাসনের বিশেষ তদারকি থাকবে। পর্যাপ্ত ফোর্স মোতায়েন করা হবে।

মাধবপুর থানার ওসি রাকিবুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচনকে অবাধ সুষ্ঠ ও নিরেপক্ষ করতে আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুুত। কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে কঠোর হাতে দমন করা হবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ