সোমবার, ২৮শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৩ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

মাভাবিপ্রবি রেজিস্ট্রারের বিচারের দাবিতে অফিসে তালা, পরে তালা খুলে দিল ছাত্রদল ও শিবির

oplus_34

সমাপ্তী খান, মাভাবিপ্রবি: ‎টাঙ্গাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাভাবিপ্রবি) ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের বিরোধিতাকারী রেজিস্ট্রার ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রারকে বের করে দিয়ে অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয়।

‎মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রার অফিসে তালা দেন। পরে তারা ভাইস-চ্যান্সেলর বরাবর ২ দফা দাবি উত্থাপন করে আল্টিমেটাম দেন।

পেশকৃত ২ দফা: ‎১. জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের বিরোধিতাকারী শিক্ষক-কর্মকর্তাসহ রেজিস্ট্রারের বিচারের জন্য কমিটি গঠন না করা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তালা খোলবেন না। তবে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রার অফিস-সংক্রান্ত কার্যক্রম চালু থাকবে।
‎২. বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালের মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (মাকসু) গঠনের রোডম্যাপ ঘোষণা না করা হলে শিক্ষার্থী বাস ও অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হবে।

‎তবে দুপুর ৩টার দিকে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির তালা খুলে দেয়। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।

‎তালা ভাঙার কারণ জানতে চাওয়া হলে ‎বিজিই বিভাগের শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম জানান, “মূলত ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, সাধারণ শিক্ষার্থীরা সনদ উত্তোলন বা প্রশাসনিক কার্যক্রম যেগুলো রেজিস্টার ভবনের সাথে জড়িত সে কাজগুলোকে হালকা করার জন্য চেয়েছিল যে রেজিস্ট্রার ভবনটা খোলা থাকুক। ভবন খোলা থাকলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের যে দৈনন্দিন কার্যক্রম সনদ তোলা বা অন্যান্য কার্যক্রম সেগুলো করতে পারবে। কিন্তু স্বৈরাচারের দোসর যেসব শিক্ষককে এনওসি দেওয়া, অসঙ্গতি, ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে হামলাকারী শিক্ষক তাদের বিচারিক কার্যক্রম দ্রুত করার জন্য ভিসি স্যার, প্রক্টর স্যার কিছু অনুষদের ডিনদের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। আমরা একটা লজিক্যাল প্রসিডিউর অনুযায়ী বিচার কার্যক্রম যেন চলে সে বিষয়ে তাদের সাথে কথা বলেছি।”

‎আইসিটি বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম হ্নদয় বলেন, স্বৈরাচারের দোসর শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের ভিত্তিতে বিচারকার্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবশেষে বাধ্য হয়ে আমরা আজকে তালা ঝুলিয়ে দেই। আমাদের ২ দফার একটি ছিল স্বৈরাচারের দোসরদের শাস্তি ও মাকসুর রোডম্যাপ। পরবর্তীতে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের একাংশ তালা ভাঙার মাধ্যমে স্পষ্টত এটাই প্রমাণ করে যে, তারা আওয়ামিলীগের দোসর শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে এবং তারা ক্যাম্পাসে তাদের অধিপত্য টিকাতে তাদের(দোসরদের) ব্যবহার করছে।

‎পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী তুষার আহমেদ বলেন, আমরা ২০১৯-২০ সেশন থেকে ২০২২-২৩ সেশন পর্যন্ত পরিচিত সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে নিয়ে রেজিস্ট্রার অফিসে তালা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ছাত্রশিবিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দ এবং ছাত্রদলের কর্মী ফাহিম মুবিন আকিব ও নিজেদের ছাত্রদলের পরিচয়দানকারী ফোরকান, কাউকে কিছু না জানিয়ে তালা ভেঙে সরাসরি আওয়ামী দোসর শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের পক্ষ নিয়েছেন।

‎তিনি আরও বলেন, ফোরকান প্রশ্ন তুলেছেন কেন আমি ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার ছাত্রদল ও শিবিরের অনুমতি ছাড়া এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ প্রসঙ্গে বলতে চাই, অতীতে প্রশাসনের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলার সময় আমি কখনও এই সংগঠনগুলোর বাস্তব সহযোগিতা পাইনি। তাই এবারের আন্দোলনে তাদের অনুমতির প্রয়োজন বোধ করিনি। তবে আমরা আশাহত নই। আমাদের ন্যায্য দাবি আমরা অবশ্যই আদায় করে নেবো। উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থরক্ষার আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

‎ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের কর্মী মো: ফোরকান হোসেন বলেন, অসংখ্য সাধারণ ছাত্র ছাড়াও সেখানে ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ সবাই একসাথে দীর্ঘক্ষন বসে আলাপ আলোচনা হয়, অধিকাংশরাই ক্যাম্পাসের একাডেমিক কাজ চালু রেখে সবাইকে সিদ্ধান্ত নিতে বলেন। তারই ধারাবাহিকতায় তালা খুলে দেয়া হয় এবং অনতিবিলম্বে মাকসু, অভিযুক্ত শিক্ষক, রেজিস্ট্রারসহ আরও যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য জোর দাবি জানানো হয়। ভিসি স্যার এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে তখন সেখানে উপস্থিত সবাইকে বিষয়টি দ্রুত উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠনের আশ্বাস দেয়া হয়।
‎‎
‎ছাত্রশিবিরের সভাপতি হাফিজুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি।

‎বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিকতা যাচাইয়ের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে। আগামীকালকের মধ্যে নোটিশ আকারে কমিটি ঘোষণা হতে পারে। পরে কমিটি তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করবে।

‎তিনি আরও বলেন, “মাকসু বিষয়েও একটি কমিটি করা হয়েছে। মাকসু যেহেতু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে নেই তাই আমরা সরকারের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় আছি। পাশাপাশি আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরাও গুরুত্বসহ কাজ করে যাচ্ছেন।
‎পরবর্তীতে তালা ভাঙাকে কেন্দ্র করে জননেতা আব্দুল মান্নান হলের সামনে দুইপক্ষের মধ্যে কিছুসময় বাকবিতণ্ডা ও উত্তেজনা বিরাজ করে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ