যায়যায়কাল প্রতিবেদক: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ‘মুক্ত স্বাধীন নতুন বাংলাদেশকে’ মুছে দিতে ‘কল্পকাহিনি’ প্রচার করা হচ্ছে মন্তব্য করে রাজনৈতিক দলগুলোকে তা ঠেকাতে এক জোট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ‘জাতীয় ঐক্য’ প্রতিষ্ঠায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশের মুক্তি ও স্বাধীনতা অনেকের কাছে পছন্দ হচ্ছে না মন্তব্য করে প্রায় চার মাস ধরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব দেওয়া মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “নানাভাবে নানা গতিতে এটিকে উল্টে দেওয়ার চেষ্টা গত ৫ অগাস্টের পর থেকে কত রকমভাবে যে এসেছে সেটা আপনারা আমার চেয়ে ভালো জানেন।”‘অভ্যুত্থান যাদের পছন্দ হয়নি তারা’ এটা ‘মুছে দিতে চায়’ মন্তব্য করে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে বলেন, “তারা নতুন নতুন বেশে নতুনভাবে চেষ্টা করেই যাচ্ছে। এখন যে চেষ্টা চলছে সেটার বিশেষ একটা রূপ আছে। সেজন্য বিশেষভাবে আপনাদের ডাকা।”
দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ‘জাতীয় ঐক্য’ প্রতিষ্ঠায় এ সংলাপে বসেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
সংলাপে অংশ নেওয়া বিএনপির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তার সঙ্গে রয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
দলের আমির শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দলে রয়েছেন নায়েবে আমির মজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম।
এছাড়া নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি(এনপিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), গণঅধিকার পরিষদ(জিওপি) নেতারাও সংলাপে যোগ দিয়েছেন।
সংলাপের সূচনা বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা যে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে সেটি ধামাচাপা দিয়ে ‘আরেক বাংলাদেশের’ কাহিনি রচনার অপচেষ্টা চালানোর কথা তুলে ধরে বলেন, এটা যে শুধু এক দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে তাও নয়। বিশেষ বিশেষ বড় বড় দেশের মধ্যে এটা ছড়িয়ে গেছে।
আমাদের বিরাট অভ্যুত্থানটা তাদের পছন্দ হয়নি, তারা এটা মুছে দিতে চায়, আড়াল করতে চায়। এটাকে নতুন ভঙ্গিতে দুনিয়ার সামনে পেশ করতে চায় যেন- আমাদের এখানে ভয়ঙ্কর কাণ্ড হয়ে গিয়েছে সেখান থেকে আমাদের রক্ষা করতে হবে।
সংলাপের শুরুতে রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে ইউনূস বলেন, সেটা মিথ্যা প্রমাণ করা, বাস্তবকে সেখানে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমাদের সবার এক জোট হতে হবে। এটা কোন বিশেষ রাজনৈতিক মতবাদের কিছু না, জাতি হিসাবে আমাদের অস্তিত্বে বিষয়।
নানা দিক থেকে তারা একটা কাল্পনিক বাংলাদেশ তৈরি করেছে দুনিয়ার সামনে, তাদের শক্তি এত বেশি। ক্রমে ক্রমে তারা মানুষকে এটাতে ভেড়াতে পারছে, এই যে নতুন কল্পকাহিনী তারা তৈরি করছে। তা নিয়ে অনেকে সন্দেহও প্রকাশ করেছে-এখানে কি ধরনের সরকার হয়েছে। তাদের কী আমার বাধা দিয়েছি আসতে? আমরা তাদের বলেছি, আসেন দেখে যান। এখানে কোন বাধা নাই। কিন্তু তারা ওখান থেকে কল্পকাহিনী বানিয়ে যাচ্ছেন।
অপপ্রচার ঠেকাতে সবাইকে একজোট হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এখন আমাদের সারা দুনিয়াকে বলতে হবে আমরা এক। আমরা যে পেয়েছি তা এক যোগে পেয়েছি। কোনো মতভেদের মধ্যে পাইনি। কাউকে ধাক্কাধাক্কি করে পাইনি। যারা আমাদের বুকের ওপর চেপেছিল তাদেরকে আমরা বের করে দিয়েছি। আমার নিজেরাই উন্মুক্ত হয়েছি। সে জিনিসটা সবার সামনে তুলে ধরা। কীভাবে তুলবো এ ব্যাপারে পরামর্শ… সবাই মিলে যেন আমরা এটা করতে পারি।
তিনি বলেন, কারণ নতুন বাংলাদেশের যাত্রা পথে এটা একটা মস্তবড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, অস্তিত্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ জিনিস আমাদের মনের ভেতর যেটা আছে সেটা সবার সামনে একত্রিত হয়ে বললে আমাদের শক্তি সমবেত শক্তি হিসেবে আসবে।