সোমবার, ১৬ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,৩০শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

মোকতাদির চৌধুরী এমপির প্রচেষ্টায় বদলে যাওয়া তিতাস পূর্বাঞ্চলের জনপদ বিজয়নগর

এস এম কামরুল হাসান শান্ত, বিজয়নগর থেকে: প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য্যে ভরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার পূর্বাঞ্চল ভারতের ত্রিপুরার সীমানবর্তী অঞ্চল ঘেরা ১০ টি ইউনিয়ন নিয়ে নবগঠিত উপজেলা “বিজয়নগর”।

দীর্ঘদিন পিছিয়ে থাকা তিতাস পূর্বাঞ্চলের ১০ টি ইউনিয়ন নিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিজয়লাভের পরে প্রথম একনেক সভায় আওয়ামীলীগ সরকারের নির্বাচনীয় ইশতেহারকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবহেলিত জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষার নতুন উপজেলা ঘোষণা করা হয়। 

তার পর থেকে তিতাস পূর্বাঞ্চলের দশটি ইউনিয়নের ভিতরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম বিজয় মুকুন্দপুর যোদ্ধের কথা ভেবে বিজয়নগর নামকরণ করা হয় “বিজয়নগর উপজেলা”। এর পর থেকে ব্যাপক ভাবে লেগেছে ধারাবাহিক উন্নয়নের ছোঁয়া। শুধু উপজেলা সদরেই নয়, বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডগুলো একেকটি শহরে রুপান্তরিত হচ্ছে। বিজয়নগর উপজেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল উপজেলা। এটি তিতাস নদীর তীরে অবস্থিত। ১০টি ইউনিয়ন সহ ১৬৯টি মৌজা নিয়ে গঠিত এ উপজেলা।

২২১.১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়োতনের এই উপজেলায় উপজেলার জনসংখ্যা ২,৯০,৪২০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৫,০৯২ জন এবং মহিলা ৫২,২৭১ জন জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি’। 

উপজেলার অধিকাংশ জনগনের দাবী বিগত সময়ের চেয়ে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সারাদেশে উন্নয়নের গণজোয়ার বইছে৷ এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপির আন্তরিক প্রচেষ্টায় ধারাবাহিক অগণিত উন্নয়নে পাল্টে যাচ্ছে বিজয়নগর উপজেলা।

পাশাপাশি উপজেলার শান্তি, শৃঙ্খলা, উন্নয়ন ও নিরাপত্তায় বিজয়নগর উপজেলা প্রশাসন, থানা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ঐকান্তি চেষ্টার গুরুত্ব অপরিসীম।

নতুন উপজেলা গঠনের পরে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের মধ্যে উপজেলা কমপ্লেক্সে, ৫০ শষ্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, থানা ভবন, তিনটি নতুন পুলিশ ফাঁড়ি ভবন, উপজেলা প্রাণী সম্পদ হাসাপাতাল, ফায়ার সার্ভিস, হর্টি কার্লচার সেন্টার, উপজেলা কৃষি অফিস, উপজেলা ভূমি অফিস, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর কার্যালয়, প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদ ও ইসলামী গবেষণা কেন্দ্র, অফিসার্স কোয়ার্টার, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ভবন, প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে ২টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ টি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণের মাধ্যমে উপজেলার কার্যক্রম পরিচালিত করা।

এছাড়াও বিজয়নগর বিভিন্ন মাদ্রাসা ও মাধ্যমিক  বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৬ টি উন্নতমানের ৪র্থ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন করা হয়েছে ৷ উপজেলার অধিকাংশ বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও দাখিল মাদ্রাসায় দৃষ্টিনন্দন একাডেমিক ভবন নির্মাণ, সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৭ টি একাডেমি ভবন ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি অত্র উপজেলার শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষা প্রদান লক্ষে ও বেকারত্ব দূরীকরণে একটি অত্যাধুনিক মানের টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ উপজেলায় স্বাক্ষরতার হার এ এক যুগে দ্রুত এগিয়ে গেছে৷

বিজয়নগর উপজেলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি আধুনিক হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শেষে উপজেলার মানুষ এখন সেবা পাচ্ছে। চিকিৎসার জন্য এখন আর সবাইকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া দৌড়াতে হচ্ছে না। তাছাড়া ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে একাধিক কমিউনিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ থেকে ভলান্টিয়ারের মাধ্যমে পাড়ায় পাড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। নতুন করে উপজেলা প্রাণী সম্পদ হাসাপাতাল করা হয়েছে।

জেলা শহরের সাথে সরাসরি যোগাযোগের জন্য তিতাস পূর্বাঞ্চলের ১০ ইউনিয়নের প্রায় সারে তিন লাখ মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে  নির্মিত তিতাস নদীর উপর ও সীমনা নদীর উপর প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বড় তিনটি ব্রিজসহ আরো ১৫ কোটি টাকা খরচে ১২ টি ব্রিজ ও কাভার্ট নির্মাণ শেষে প্রায় ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে শেখ হাসিনা সড়কটির ১০ কিলোমিটার বর্তমানে কাপির্টিং করার কাজ শুরু হওয়ার পথে রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী ৬/৮ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের কষ্ট লাঘব হবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পত্তন ও চর ইসলামপুর নিন্ম অঞ্চলের মানুষের জন্য সারে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে লক্ষীমুড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও ১ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে দত্তখোলা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও উক্ত মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এইচবিবি প্রজেক্ট থেকে বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ কিলোমিটার নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে এবং ছোট বড় ব্রিজ ও কালভার্ট বিগত ৫/৬ বছরে ৪৫ টি নির্মাণ করে গ্রামীণ যাতায়াতের পরিধি বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়াও উক্ত মন্ত্রণালয় থেকে নিয়মিত বিভিন্ন স্কুল,কলেজের উন্নয়ন, রাস্তাঘাট, সীমানা প্রাচীণ, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান, শ্মশানঘাট উন্নয়ন কর্মকান্ডের পাশাপাশি দূর্যোগ কবলিত অঞ্চল ও পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছে র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। 

স্থানীয় সরকার ও এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে  উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পুরাতন ৭৫ কিলোমিটার রাস্তা নিয়মিত সংস্কার এর পাশাপাশি প্রায় ২০ কিলোমিটার নতুন রাস্তা কাপের্টিং করা হয়েছে। এছাড়াও নতুন বিভিন্ন রাস্তায় ২২ টি কালভার্ট ও ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ৮ ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। ২ কোটি টাকা ব্যয়ে বিষ্ণুপুর রানওয়ে বাজারের সংস্কার কাজ করা হয়েছে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ করার জন্য প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে দৃষ্টিনন্দন মনুমেন্ট ও রেষ্ট হাউজ (পর্যটন কেন্দ্র)  নির্মাণ করা হয়েছে। 

সারাদেশে ন্যায় বিজয়নগর উপজেলার ৫১৮ টি ভূমিহীন পরিবার ২ শতক ভূমিসহ পাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। 

উপজেলা কমপ্লেক্স এ প্রবেশ মুখে গেইটের পূর্ব কর্ণারে শহীদ মিনার, পশ্চিম কর্ণারে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ নির্মাণ প্রবেশ এর শুরুতে সবার নজর কারে। পাশাপাশি আরেকটু পূর্বে হেটে গেলে অফিসারের ব্যাটমিন্টন খেলার মাঠ ও অফিসার ক্লাব যেন উপজেলায় অফিসারদের ভাল কাজের মনোযোগী হতে অসীম ভূমিকা রাখে।

বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মো. ইকবাল হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন আমাদের মাননীয় এমপি মহোদয় এর একান্ত চেষ্টায় অবহেলিত বিজয়নগর এখন মাথা উঁচু করে সম্মানের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রিয় নেতা আরো কয়েকবছর সময় পেলে বাংলাদেশে এই বিজয়নগর মডেল হিসেবে গড়ে উঠবে।

বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিস এ এইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদ জানান, বিজয়নগর উপজেলা সৃষ্টি আগে এই অঞ্চলের মানুষ জেলা শহর বা ঢাকার মুখী থাকলেও নবগঠিত বিজয়নগর উপজেলাকে বর্তমান মাননীয় সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি স্যার সরকারের সহযোগিতায় নিজের হাতে সুপরিকল্পিতভাবে সকল সেক্টরে সমতার ভিত্তিতে উন্নয়ন করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করছি কয়েক বছরের মধ্যেই বিজয়নগর দেশের একটি মডেল উপজেলা হিসেবে দেশবাসীর কাছে পরিচিতি লাভ করবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *