রবিবার, ১৯শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,৩রা আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

যারা মুক্তিযুদ্ধকে ছোট করে দেখাতে চায়, তারা গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিপক্ষ শক্তি: আনু মুহাম্মদ

যায়যায়কাল প্রতিবেদক: বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের ‘ছায়া’ দেখছেন সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

তিনি বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে পরিচালিত হচ্ছে, তাতে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের ওপরে শেখ হাসিনা সরকারের ছায়া দেখতে পাচ্ছি। সেই একই রকম স্বৈরতন্ত্র, একই রকম জনগণের ওপর বিভিন্ন ধরনের নিপীড়ন, একই রকম বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা হচ্ছে।’

সরকারের এই উল্টোযাত্রা চলতে থাকলে জনগণের দ্রোহযাত্রা অবশ্যই অব্যাহত রাখতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় গত বছরের ২ আগস্ট ঢাকার রাস্তায় প্রতিবাদী কর্মসূচি ‘দ্রোহযাত্রার’ বর্ষপূর্তি ছিল শনিবার।

এই দিনটি উপলক্ষে ‘ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামোর বিলোপ, চব্বিশের গণহত্যাসহ পাহাড় ও সমতলের সব গণহত্যার বিচার এবং নব্য ফ্যাসিবাদী প্রবণতা প্রতিহতের’ আহ্বানে আজ বিকেলে ‘শিক্ষার্থী-শ্রমিক-জনতার দ্রোহযাত্রার’ আয়োজন করা হয়।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিভিন্ন বামপন্থী রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, নারী, শ্রমিক ও ছাত্রসংগঠন এই আয়োজন করে। গত বছরের মতো আজকের দ্রোহযাত্রায়ও সভাপতিত্ব করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

শহীদ মিনারে সমাপনী বক্তব্যে আনু মুহাম্মদ বলেন, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, ইউনূস সরকারের প্রতি জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, একের পর এক সেই প্রত্যাশা ভঙ্গ করে এই সরকার এক বছর পার করেছে। তিনি বলেন, ‘যেভাবে সরকার পরিচালিত হচ্ছে, তাতে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের ওপরে শেখ হাসিনা সরকারের ছায়া দেখতে পাচ্ছি। সেই একই রকম স্বৈরতন্ত্র, একই রকম জনগণের ওপর বিভিন্ন ধরনের নিপীড়ন, একই রকম বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই সরকার যে অনেক কিছু করতে পারবে না, সেটা আমরা বুঝি। রাতারাতি পরিবর্তন তাদের কাছ থেকে আমরা প্রত্যাশাও করি না। কিন্তু আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম পরিবর্তনের সূচনা। যেটা হয়নি।’

মব সন্ত্রাস প্রসঙ্গে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য আনু মুহাম্মদ বলেন, এই সরকারের সময়ে মব সন্ত্রাস করে মানুষের বাড়িঘর ভাঙা হয়েছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা করা হয়েছে, কিছু লোকের ভাড়াটে হিসেবে মব সন্ত্রাস তৈরি হয়েছে কাউকে বসানো বা ওঠানোর জন্য।

তিনি বলেন, ‘এগুলোর জন্য আমরা সরকারকে দায়ী করতাম না, যদি দেখতাম যে সরকার এগুলো থামানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। আমরা বরং দেখতে পাচ্ছি সরকারের মধ্যে কেউ কেউ মব সন্ত্রাসকে যৌক্তিকতা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।’

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার চুক্তির কড়া সমালোচনা করেন আনু মুহাম্মদ। ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষতিকর ও অসম চুক্তি প্রকাশ ও বাতিল না করে সরকার ও তাদের ঘনিষ্ঠদের ভারতের আধিপত্যবিরোধী কথাবার্তাকে ‘বাগাড়ম্বর’ বলে আখ্যা দেন তিনি।

ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত পাল্টা শুল্ক কমাতে অন্তর্বর্তী সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে গোপনীয়তার চুক্তি করেছে, তারও সমালোচনা করে সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, ‘এই যে তৎপরতা চলছে, এটা তো গণ-অভ্যুত্থানের প্রত্যাশার বিপরীত যাত্রা। সরকার এই উল্টোযাত্রা যদি করতে থাকে, তাহলে জনগণের দ্রোহযাত্রা তো অবশ্যই অব্যাহত রাখতে হবে।’

বাংলাদেশের মানুষের অতীতের সব লড়াইকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে সবার ওপরে রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেন আনু মুহাম্মদ।

তিনি বলেন, যারা একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকে ছোট করে দেখাতে চায়, তারা গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিপক্ষ শক্তি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ আওয়ামী লীগের সম্পত্তি নয়। তাদের কবল থেকে মুক্তিযুদ্ধকে উদ্ধার করে জনগণের মালিকানায় নিয়ে আসতে হবে।

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানকেও নতুন ধরনের চাঁদাবাজ, দখলদার, সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী শক্তি অপব্যবহার শুরু করেছে অভিযোগ করে আনু মুহাম্মদ বলেছেন, তাদের কাছ থেকেও এই অভ্যুত্থানকে জনগণের মালিকানায় নিয়ে আসতে হবে। এই অভ্যুত্থানের কোনো নির্দিষ্ট বা একক মালিক নেই। গণ-অভ্যুত্থানের মালিক হচ্ছে জনগণ।

দ্রোহযাত্রা থেকে চলমান আটক ও গ্রেপ্তার-বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, মব সন্ত্রাস, পাইকারি মামলা বন্ধের দাবিও জানান আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সব শহীদ ও আহতদের পূর্ণ দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে এবং জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার যথাযথভাবে করতে হবে।

বৈষম্যহীন সমাজের জন্য চারটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে বলে উল্লেখ করেন আনু মুহাম্মদ। এগুলো হলো শ্রেণিবৈষম্য সৃষ্টিকারী অর্থনৈতিক নীতির পরিবর্তন করতে হবে, ধর্মীয় বৈষম্যের কোনো রীতিনীতি বা ব্যবস্থা রাষ্ট্রের থাকা যাবে না, জাতিগত বৈষম্য নিরসনে বাঙালি ছাড়া অন্যান্য জাতিরও স্বীকৃতি থাকতে হবে এবং লিঙ্গবৈষম্যও দূর করতে হবে।

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক রূপান্তরের মধ্যে জনগণের সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োজিত না হলে এই দেশে বারবার স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদের আবির্ভাব হবে।

শহীদ মিনারে এই কর্মসূচিতে গান, আবৃত্তি ও মূকাভিনয় পরিবেশন করা হয়। শিক্ষক নেটওয়ার্কের অন্যতম সংগঠক অধ্যাপক সামিনা লুৎফা সেখানে বক্তব্য দেন। নারী সংগঠনগুলোর পক্ষে সীমা দত্ত, শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষে আবদুল্লাহ কাফী রতন এবং রিকশাচালকদের পক্ষ থেকে আবদুল কুদ্দুসও বক্তব্য দেন।

জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ মিরাজ হোসেনের বাবা মো. আবদুর রব এবং অভ্যুত্থানের পর ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্ত হওয়া মাইকেল চাকমাও কথা বলেন শহীদ মিনারের এই কর্মসূচিতে।

সমাবেশ শেষে শহীদ মিনার থেকে দ্রোহযাত্রার মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি টিএসসি, নীলক্ষেত ও কাঁটাবন ঘুরে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ