
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার যুবদল নেতা ফাহিম মিয়ার হামলায় গুরুতর আহত হয়ে বাড়ি ছাড়া সঞ্চয় কুমার রায়। সঞ্জয় কুমার রায় দিরাই পৌরশহরের দউজ গ্রামের স্বররঞ্জন রায় ও দীপালী রানী রায়ের ছেলে।
সঞ্জয় কুমার রায়ের দুই পাশে মুসলিম পরিবারের বসবাস থাকায় এই অত্যাচার বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। যুবদল নেতার কাছে বাড়ি বিক্রি না করায় এই নির্যাতনের শিকার সঞ্জয় কুমার রায়।
নিজেরা ইসলাম বিরোধী উস্কানিমূলক স্ট্যাটাস দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদেরকে (মুসলিম) মামলা দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে হিন্দু পরিবারের বিরুদ্ধে। হিন্দু পরিবারের তিনজন চিকিৎসা নিয়ে এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। দিরাই থানায় মামলা নিলেও প্রভাবশালীদের চাপে পুলিশ আসামি ধরেনি। ফাহিম মিয়ার দুই ছেলে জামিনে বের হয়ে আবারও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে সঞ্চয় কুমার রায়কে।
মামলার বাদী সঞ্চয় কুমার রায়ের স্ত্রী স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়িতে আসলে মামলার এক নম্বর আসামি যুবদল নেতা ফাহিম মিয়া, তার ছেলে ফাহাদ ও রাহাত এবং ভাই বাবুল মিয়া দ্বিতীয়বার হামলা চালায়। হিন্দু পরিবারটির সম্পদ আত্মসাৎ করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। শুধু তাই নয়, বর্তমানে তাদের অত্যাচারে নিজেদের জান-মালের নিরাপত্তা জন্য বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যের বাসায় থাকতে হচ্ছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, এক নম্বর আসামি যুবদল নেতা দিরাই পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম মিয়ার ছেলে, ২ নং আসামি ফাহাদ মিয়া সক্রিয় ক্যাডার ।
সঞ্চয় কুমার রায় তার অভিযোগে বলেন, বর্তমানে যুবদল নেতা ফাহিম ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আমার এবং আমার ভাইয়ের জমি বেদখল করার জন্য পাঁয়তারা করতেছে। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে গত ২৬ আগস্ট ২০২৪ ইং সকালে আমার স্ত্রী কাজের জন্য বাড়ির পেছনে যায়। তখন বিবাদী আমার স্ত্রীকে দেখা মাত্র অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে এবং কু-ইঙ্গিত করতে থাকে। তখন আমি গালিগালাজের শব্দ পেয়ে এগিয়ে যাই। পরে গালিগালাজ করার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ফাহিম মিয়ার ছেলে আমার উপরও চড়াও হয়ে উঠে এক পর্যায়ে আমাকেও গালিগালাজ করতে থাকে। আমি গালিগালাজ করতে নিষেধ করলে তারা অন্যান্য সবাইকে চিৎকার করে নিয়ে আসে এবং সকল বিবাদীগন আমার স্ত্রীকে ও মাকে খুন করে লাশ মাটিতে পুঁতে ফেলবে বলে হুমকি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে আসামিদের ভয়ে আমি আমার মা সহ বাড়ির উঠানে গেলে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র, রামদা, লোহার রড, বাঁশের লাঠি ইত্যাদি অস্ত্র নিয়ে আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পরে। ফাহিম মিয়ার হাতে থাকা ধারালো দা দিয়ে আমাকে খুন করার উদ্দেশ্যে আমার মাথা লক্ষ্য করে কোপ মারলে আমি ডান হাত দিয়ে ফেরাই। এসময় আমার ডান হাতের তালুতে লেগে হাড় কাটা যায়। গুরুতর রক্তাক্ত হই। সাথে সাথে আমি মাটিতে পড়ে গেলে পুনরায় রামদা দিয়ে আমাকে কোপ মারে। আমি হামাগুড়ি দিয়ে কিছুটা সরে পড়ায় আমার ডান হাতে কোপ লেগে জখম হই।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, তখন স্ত্রী ও মা সন্ত্রাসীদের কবল থেকে আমাকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসলে রামদা দিয়ে আমার মাকে খুন করার উদ্দেশ্যে মাথা লক্ষ্য করে কোপ মারে। আমার মায়ের ডান হাতে মারাত্মক জখম হয়। সাথে সাথে আমার মা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পুনরায় রাহাদ আমার মায়ের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য আমার মায়ের মাথা লক্ষ্য করে কোপ মারে। আমার মায়ের বাম হাতে কোপ লেগে জখম হয়। আমার স্ত্রী মাকে ও আমাকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসলে তাদের হাতে থাকা ধারালো দা দিয়া আমার স্ত্রীকে কোপ মারে। আমার স্ত্রীর উপরের ঠোঁটে লাগে। মারাত্মক জখম হয়। তারপর আমি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে আমার জীবনের নিরাপত্তার জন্য দিরাই থানায় একটা মামলা দায়ের করি গতবছর ২৭ আগস্ট। তারপর গত ২ অক্টোবর বিদেশ পাড়ি দেই। সঞ্জয় কুমার রায় বর্তমানে প্রবাসে আছেন বলে জানান তার পরিবার।