বুধবার, ২২শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

যৌথ চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ‘রাইজিং ফ্রম দ্য অ্যাশেজ’

নিজস্ব প্রতিবেদক : গল্পটা শুরু হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে। তুর্কি শিল্পী তুবা আহসান ও ইস্তাম্বুলের সিমাল আর্ট গ্যালারির শিল্পী বন্ধুরা মিলে একটি প্রদর্শনী করছিলেন। তখনই তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে ঘটে ভয়াবহ ভূমিকম্প। ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভয়াবহ সেই ভূমিকম্পে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উত্তর ও পশ্চিম সিরিয়া এবং দক্ষিণ ও মধ্য তুরস্ক। সবচেয়ে ক্ষতির শিকার হয় তুরস্ক। দেশটিতে প্রাণহানি ছাড়ায় ৫০ হাজার, আহত এক লাখেরও বেশি। যা দেখে মানবতাবাদী মানুষের মতোই তুবা ও তার বন্ধুরা স্তম্ভিত হয়ে পড়েন। ভাবতে থাকেন ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের কিভাবে সহায়তা করা যায়।

সেই ভাবনা থেকেই তুবার মাথায় আসে, তিনি যা ভালো পারেন, সেই শিল্পের মাধ্যমেই সাহায্য করতে পারেন আর্ত মানুষদের। রাইজিং ফ্রম দ্য অ্যাশেজ নাম দিয়ে শুরু করেন তারা প্রদর্শনী। শুরুটা নিউইয়র্ক দিয়ে হলেও একে একে কাতার কুয়েত ইতালিসহ মোট পাঁচটি দেশ পরিভ্রমণ করে এই প্রদর্শনী। চলমান এই যাত্রায় রাইজিং ফ্রম দ্য অ্যাশেজের এবারের যাত্রাবিরতি বাংলাদেশ।

তুবা এবং তার বন্ধু শিল্পীদের দল দল প্রদর্শনী থেকে শিল্পকর্ম বিক্রয়লব্ধ অর্থের একটা বড় অংশ দিয়ে তুরস্কে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি বানিয়ে দেন। এমনকি নিজেদের কাজে অসাধারণ দক্ষ এসব শিল্পী পরিবেশবান্ধব এসব বাড়ির নকশাও করে থাকেন। টেকসই  এই বাড়িগুলো এমনভাবে বানানো হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে ভূমিকম্প প্রতিরোধ করতে পারে।

২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে আলোকি গ্যালারিতে তুরস্ক ও বাংলাদেশের শিল্পীদের অংশগ্রহণে আয়োজিত প্রদর্শনীটি উদ্বোধন হয়। প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন  শিল্পবোদ্ধা, সমাজসেবীসহ অনেকেই।

প্রদর্শনীতে আসলে প্রথমেই যে বিষয়টি নজর কাড়বে, তা হচ্ছে মানুষের শক্তি।  শত ধ্বংস আর প্রতিকূলতার মধ্যেও মানুষ যে ফিনিক্স পাখির মতই ছাই থেকে জীবন্ত হয়ে ওঠে আবার, তারই প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই কখনো শিল্পীর ক্যানভাসে, কখনোবা ফটোগ্রাফারের ক্যামেরার চোখ দিয়ে। এ যেন ভূমিকম্পের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে আবারো মাথা উঁচু করে জেগে ওঠা। জীবনের কাছে ফেরা। মানুষ কখনোই পরাজিত হয় না। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সে বারবার উঠে দাঁড়ায়। ছাই থেকে, ভষ্ম থেকে।

প্রদর্শনীতে তুরস্কের শিল্পীদের মধ্যে অংশ নিচ্ছেন, ইলহামি আতালায়, চেমাল তয়, মেদিহা আতালায়, কানান আয়দোয়ান, জাফর ওরস, রুবেইদা গোরমেজোলু, তুবা আহসান, ফারুক এরচেতিন, কুবরা ওকমেন, ফুরকান তুরকিলমাজ, এলিফ তারাকচিসহ অন্যান্যরা।

রাইজিং ফ্রম দ্য অ্যাশেজ প্রদর্শনীর বাংলাদেশে যে আয়োজন তাতে প্রথমবারের মত স্থানীয় শিল্পীরাও অংশ নিচ্ছে। আয়োজকদের উদ্দেশ্য ছিল, স্থানীয় শিল্পীদের অন্তর্ভূক্ত করে প্রদর্শনীতে ভিন্ন মাত্রা প্রদান করা। যাতে ফুটে উঠবে বাংলাদেশ ও তুরস্কের বন্ধুত্বের শৈল্পিক অভিব্যক্তিও। যা তুলে ধরবে সৃজনশীলতা এবং সহানুভূতির এক অনন্য সংমিশ্রণ। দেখা মিলবে বৈচিত্র্যের মধ্যেই এক মহান ঐক্যের। তরুণ শিল্পীদের জন্যও এই প্ল্যাটফর্ম এক ভিন্নরকম সুযোগ হিসেবে ধরা দেয়। শুধু নিজের শিল্পকর্মকেই তারা সেখানে তুলে ধরেন না, তুলে ধরেন এক মহৎ উদ্দেশ্যে।

বাংলাদেশে এ প্রদর্শনীর আয়োজক হিসেবে তুবার সঙ্গে আছেন সামিরা জুবেরী হিমিকা। তিনি বলেন, “তুবার এই মহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পেরে ভালো লাগছে। এ আয়োজনে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশের তরুণ শিল্পীরা। তাদের সুযোগ করে দিতে পেরেও আমরা আনন্দিত। আশা করছি এই ধরণের সমন্বিত প্রদর্শনীগুলোর মধ্য দিয়ে আমাদের শিল্পযাত্রার পরিধি আরও বিস্তৃত হবে।”

তুরস্কের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে বাংলাদেশের শিল্পানুরাগী ব্যক্তিদের প্রদর্শনী দেখতে ও পছন্দের শিল্পকর্মটি কিনতে আহ্বান জানিয়েছেন সামিরা।

বাংলাদেশ-তুরস্কের এই মেলবন্ধনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি সেই তুবা আহসান বলেন, “ভূমিকম্প আমাদের ভাবনা চিন্তা পুরোপুরি পাল্টে দেয়। বারবার মনে হচ্ছিল শিল্পী হিসেবে, কি করতে পারি। এভাবেই শুরু। আর এখানে প্রদর্শনী করতে পেরে সত্যিই ভালো লাগছে। এখানে দারুণ সব শিল্পী আছেন। আমি চাই তারা আরো বেশি আন্তর্জাতিক শিল্পীদের সাথে কাজ করুন। দেশের বাইরে প্রদর্শনী করুক।”  

প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া এক ঝাঁক প্রতিশ্রুতিশীল বাংলাদেশি তরুণ শিল্পীদের একজন আজিজি খান বলেন, “ভূমিকম্পে বিপন্নদের সহায়তা করতে পেরে আনন্দিত তারা। আর নিজের শিল্পকর্ম নিয়ে বলেন, করোনা ও অন্যান্য বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও শিল্পের নতুন দ্বার খুলেছে শিল্পীদের সামনে। তাই শিল্পীর যাত্রা বহুদূর।”

আরেক তরুণ শিল্পী নাজিয়া আহসান চৈতি বলেন, “তুবা আহসান নানান দেশের শিল্পীদের সাথে কাজ করেন। আমার মনে হয় , তুবার মত আন্তর্জাতিক শিল্পীদের সাথে আমরা যত বেশি কাজ করতে পারবো, তত বেশি কুসংস্কার ও অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো।”

প্রদর্শনীতে আরো থাকছে রাকিবুল আনোয়ার, সাদিয়া খালিদ রীতি, জান্নাতুল ফেরদৌস মুক্তি, হৃদিতা আনিশা, মাসুদা খান, অনন্যা মেহপার আজাদ, সুবর্ণা মোরশেদা, অন্তরা মাহরুখ আজাদ, তায়ারা ফারহানা তারেকের শিল্পকর্ম। চিত্রশিল্পীদের শিল্পকর্ম ছাড়াও থাকছে আলোকচিত্রী রাহুল রায়ের ফটোগ্রাফিও।

প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকছে এই প্রদর্শনী।  চলবে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ আয়োজনের গ্যালারি পার্টনার আলোকি।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ