শুক্রবার, ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,৯ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রাজশাহীতে ট্রাক-অ্যাম্বুলেন্সের সংঘর্ষ, নারীসহ নিহত ৩

পাভেল ইসলাম মিমুল, উত্তরবঙ্গ: টমেটোবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে অ্যাম্বুলেন্সের সম্মুখভাগ খান খান হয়ে গেছে। সামনে থেকে দেখে চেনার উপায় নেই যে সেটা অ্যাম্বুলেন্স ছিল। এই অ্যাম্বুলেন্সের রোগী সুন্দরী পাহান (৬৫), তাঁর মেয়ে আদুরী মুরালি ও অ্যাম্বুলেন্সের চালক জাফর ইকবাল ঘটনাস্থলেই মারা যান।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়িহাট এলাকায় সোমবার ভোর চারটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

সুন্দরী পাহানের বাড়ি গোদাগাড়ী উপজেলার ঠাকুর যৌবন গ্রামে। আর অ্যাম্বুলেন্সচালকের বাড়ি রাজশাহী নগরের হসেনিগঞ্জ এলাকায়। এই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন সুন্দরী পাহানের আরেক মেয়ে সুমি রানি,ছেলে অসীম মুরালি ও নাতি সুদেব মুরালি। তাঁদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, আহত ব্যক্তিদের সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

গোদাগাড়ী ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার ফাইটার মাহাবুবুর রহমান ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন,ভোর সাড়ে চারটার সময় আমরা ফোন পেয়ে বের হই। হয়তো দুর্ঘটনা আরও একটু আগে হয়েছে। নিজেরা উদ্ধার করতে না পেরে ফায়ার সার্ভিসে খবর দিয়েছেন। গিয়ে দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্সটি সড়কের বাম পাশে অর্থাৎ সঠিক লাইনে ছিল। ওই লাইনে ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। ট্রাকের তো ওই সাইডে যাওয়ার কথা নয়।’

প্রত্যক্ষদর্শী রাজাবাড়ি গ্রামের কৃষক আবদুর রউফ জানান, ট্রাকটি টমেটোবোঝাই ছিল। উপজেলার বসন্তপুরে একটি কারখানায় টমেটো নিয়ে যাচ্ছিল। রাজাবাড়িহাট যুব প্রশিক্ষণকেন্দ্রের সামনে একেবারে ভুল পাশে গিয়ে ট্রাকটি অ্যাম্বুলেন্সকে মেরে দিয়েছে।

ওই অ্যাম্বুলেন্সে ছিলেন সুদেব মুরালির ভাইরা নিরাঞ্জন মুন্ডা। হাসপাতালে প্রতিবেদককে তিনি বললেন, অ্যাম্বুলেন্সে তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। চালকও ঘুমাচ্ছিলেন কি না, তিনি জানে না। দুর্ঘটনার পর ট্রাকের চালক পালিয়ে গেছেন। তাঁর সহকারীকে পালানোর সময় স্থানীয় লোকজন আটক করেছিলেন। পরে জনতার হাত ফসকে চালকের সহকারীও পালিয়ে যান।

সুন্দরী পাহানের জামাতা হীরালাল পাহান বললেন, গতকাল রোববার দিবাগত রাত ১২টার দিকে তাঁর শাশুড়ির কথা বন্ধ হয়ে যায়। তখনই তাঁকে গোদাগাড়ীর উপজেলা সদরের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা জানান, তাঁদের কিছু করার নেই। রোগীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা দেওয়া হয়। ভোর চারটার দিকে উপজেলার রাজবাড়ি যুব প্রশিক্ষণকেন্দ্রের সামনে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সটির সংঘর্ষ হয়।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সুন্দরী পাহানের মেয়ে সুমি রানিকে হাসপাতালের বরান্দায় রাখা হয়েছে। তাঁর চোখ–মুখ ক্ষতবিক্ষত। দেখে মনে হচ্ছে তাঁর চেতনা নেই। চিকিৎসক তাঁর কপালে চাপ দিলে সুমি সাড়া দিয়ে বলে উঠলেন, ‘ওরে বাবারে, ওরে বাবারে’।

চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ওই ওয়ার্ডের সহকারী আরাফাত হোসেন খান জানালেন, সুমি রানির অবস্থা আশঙ্কাজনক। স্ক্যান করার জন্য বলা হয়েছে। হাসপাতালের সিটি স্ক্যান যন্ত্রটি সাময়িকভাবে কাজ করছে না। তাঁকে বাইরে অন্য কোনো রোগ নির্ণয়কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। অন্য দুজনের অবস্থাও খারাপ। তবে সুমির চেয়ে ভালো আছেন তাঁরা।

সুন্দরী পাহানের ছেলে অসীম মুরালি ও নাতি সুদেব মুরালিকে ওয়ার্ডের মেঝেতে রাখা হয়েছে। আর শিশু সন্তান কোলে নিয়ে স্যালাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন অসীমের স্ত্রী কিরণ মুরালি। আর সুদেবের স্ত্রী সুনীতি রানি পাশে বসে স্বামীর পরিচর্যায় ব্যস্ত আছেন।

গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান, নিহত তিনজনের লাশ উদ্ধার করে গোদাগাড়ী উপজেলা কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছে। স্বজনদের খবর দেওয়া হয়েছে। তাঁরা আসার পরে লাশ হস্তান্তর করা হবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *