মঙ্গলবার, ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রাজশাহীতে নার্সিংয়ে এস আলম গ্রুপের জমিদারি প্রথা, বিদেশে টাকা পাচার

শাহ্ সোহানুর রহমান, রাজশাহী: ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের (আইবিএফ) নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রাজশাহীতে ‘জমিদারি প্রথা’ চালু করে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ। এখানকার স্বাস্থ্য-শিক্ষা খাত থেকে তারা কোটি কোটি টাকা বিদেশেও পাচার করে বলে অভিযোগ উঠেছে।

কোনো শিক্ষার্থী প্রতিবাদ জানালে তাকে মামলা দিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেয়ার হুমকিও দিতেন কর্মকর্তারা।

গত রোববার আইবিএফ‘র নতুন চেয়ারম্যান ও নির্বাহী পরিচালকের কাছে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) নার্সিং অনুষদের সেশনজট নিরসন আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিষদের পক্ষ থেকে পাঠানো এক স্মারকলিপিতে এসব অভিযোগ করা হয়। এছাড়া সোমবার দুপুরে কলেজটির শিক্ষার্থীরাও আরেক আবেদনে ‘জমিদারি প্রথা’ বিলুপ্ত করে রাজশাহীতে ইন্টার্নশিপ ভাতা চালুর দাবি জানিয়েছেন।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ‘রাজশাহী নগরীর আমচত্বরে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ইসলামী ব্যাংক নার্সিং কলেজ, ইসলামী ব্যাংক ইনস্টিটিউট অফ হেলথ টেকনোলোজি, লক্ষিপুরে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল এবং নিউ মার্কেট ও আলুপট্টিতে ইসলামী ব্যাংকের শাখা আইবিএফ অন্তর্ভুক্ত। আইবিএফের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার সুবাদে রাজশাহীর এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানা পায় এস আলম গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদে চট্টগ্রাম থেকে জনবল নিয়োগ দিয়ে পাঠিয়ে রক্তচোষা শুরু করে কোম্পানিটি।’

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘শুধুমাত্র ইসলামী ব্যাংক নার্সিং কলেজে ভর্তি ফরম বাণিজ্য করেই কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এস আলম গ্রুপ। এছাড়া জোরপূর্বক ফেল করিয়ে আদায় করা হত লাখ লাখ টাকা। এসবের প্রতিবাদ জানালে শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়ে স্টুডেন্টশিপ বাতিলের ভয় দেখানো হয়। এমনকি শেখ হাসিনার আস্থাভাজন এবং আওয়ামী লীগ পরিচয়ে মামলা দিয়ে শিক্ষার্থীদের জেলে ঢুকানোরও ভয় দেখাতেন চট্টগ্রাম থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। এ নিয়ে দফায় দফায় মিটিংয়েও বসতেন তারা। এস আলম গ্রুপ থেকে বিদেশে পাচার করা কোটি কোটি টাকার মধ্যে রাজশাহী অঞ্চলের শত শত শিক্ষার্থীর কৃষক, ভ্যানচালক-রিকশাচালক ও শ্রমিক বাবার টাকাও রয়েছে।’

শিক্ষার্থীরা বলেন, এ কলেজে বর্তমানে বিএসসি-ইন-নার্সিং ও ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্স চলমান। নার্সিং এসব কোর্স সম্পন্ন করে ৬ মাস ইন্টার্নশিপ করা বাধ্যতামূলক। সাধারণত আমচত্বর ও লক্ষিপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে আমরা ইন্টার্নশিপ করি। তবে এ ইন্টার্নশিপে আমাদের কোনো ভাতা দেয়া হয় না। অথচ আইবিএফ অধিভুক্ত ইসলামী হাসপাতালের ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল শাখায় ৬ মাসে প্রত্যেক শিক্ষার্থী ৮ হাজার করে ৪৮ হাজার টাকা ভাতা পান। এছাড়া নার্স নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শুধু ডিপ্লোমা সার্টিফিকেটধারীদের আবেদন চাওয়া হয়। বিএসসি সম্পন্নকারীদের করা হয় উপেক্ষা। অথচ বিএসসি কোর্সে ভর্তিচ্ছুদের শতভাগ চাকরির নিশ্চয়তা দিয়ে ভর্তি নেয়া হত। খরচও হয় ডিপ্লোমার চেয়ে দ্বিগুণ বেশি।

এ বিষয়ে রামেবির নার্সিং অনুষদের সেশনজট নিরসন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক রায়হান আলী বলেন, জমিদারি প্রথা আর এস আলমের করে যাওয়া বৈষম্য-অবিচারের মধ্যে কোনো তফাৎ নেই। আমরা এর অবসান চাই। এস আলমের দালালমুক্ত করে রাজশাহীতে নার্সিং শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ ভাতা চালু ও চাকরিতে বিএসসি শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করতে হবে। দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা লাভের পরও এখানে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত ও বৈষম্য দূর না হলে আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।

এ বিষয়ে জানতে রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ হামিমা উম্মে মোরশেদার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। রোববার এবং সোমবার অফিসেও যাননি তিনি।

এ ব্যাপারে রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিরেক্টর (এডমিন) ইমাজ উদ্দীন মন্ডল বলেন, বিষয়টি আমরা আইবিএফে জানাবো।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, , বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ