শনিবার, ১৪ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২৮শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রাজশাহীতে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে ‘রহস্যজনক’ চাঁদাবাজি

পাভেল ইসলাম মিমুল, রাজশাহী ব্যুরো: রাজশাহীর পবা উপজেলার হাট রামচন্দ্রপুরএলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুল গফুর একজন বিএনপি কর্মী।

তিনি মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় দোশর মন্ডলের মোড়ে অনুরাগ কমিউনিটি সেন্টারে স্ত্রী কানিজ ফাতেমার উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করেন।

অভিযোগ ছিল, তাঁর কাছ থেকে বিএনপি দলের নাম ভাঙিয়ে নির্দিষ্ট সাত জনের নামসহ অজ্ঞাত কিছু ব্যক্তি প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা চাঁদা নিয়েছে।

এ বিষয়ে পবা থানায় একটি অভিযোগও করেন তিনি। হঠাৎ কি এমন হলো যে পরদিন বুধবার (৩০ অক্টোবর) আব্দুল গফুর পুনরায় সংবাদ সম্মেলন করে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইলেন? আর সেদিন আব্দুল গফুরের স্ত্রী কোথায় ছিলেন?

এবার রহস্যঘেরা প্রশ্নগুলোর উত্তরে আসি। প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে এক এক করে সকল প্রশ্নের ‍উত্তর। মিলেছে বিএনপি দলের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজির এক ভয়ংকর চক্রের খোঁজ। যারা বিএনপি কর্মীদেরও ছাড় দিচ্ছেন না।

আব্দুল গফুর প্রথম দিনের সংবাদ সম্মেলনে জানান তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাকে প্রাণনাশেরও হুমকি দেয়া হয়েছে। তাকে নিয়ে বিএনপি নাম ভাঙিয়ে চলা কর্মীরা খেলছে। ভয়ে কেউ ঘটনার বিস্তারিত শিকার করছেন না।

গণমাধ্যমকর্মীর কাছে আসল ঘটনা সত্যতা বিবরণী দেয় ভুক্তভোগী আব্দুল গফুর ফোন-আলাপে মূল ঘটনা উঠে আসে।

আব্দুল গফুর ফোন-আলাপে বলেন, আমাকে বুধবার (৩০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সময় মোস্তাকসহ(স্বেচ্ছাসেবক দল পবা উপজেলা) অনেক জন মিলে আমাকে মারধর করে ও বলে তুই কার কাছে টাকা দিয়েছিস। পরে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়, বাদলের ছেলে সাজ্জাদ, তোতার ছেলে মুস্তাকিন রহমান(ছোট মুস্তাক), কাছের আলীর ছেলে খাইরুল ইসলাম, আইয়ুব আলীর ছেলে নাসির উদ্দীন, ইসমাইলের ছেলে ইদ্রিস আলী, আ. কুদ্দুসের ছেলে দেলোয়ার হোসেন এবং আশরাফুল ইসলাম, স্বর্ণকার বুলবুলসহ প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ জন ব্যক্তি মিলে বিএনপির বড় নেতা শফিকুল ইসলাম মিলন ভাইয়ের চেম্বারে।

মিলন ভাইকে বিষয় টা সমাধানের জন্য জানানো হলে, মিলন ভাই রাগনিত্ব হয়ে বলে তোমরা কেনো এখানে এসেছো তোমরা সবাই তো ভাগ খাও বের হয়ে যাও। তখন চেম্বার থেকে সবাই বের হয়ে গেলাম। তাৎক্ষণিক আমাকে নিয়ে আসলো গনক পাড়া একটা অফিসে। অফিসে নিয়ে এসে আমাকে জোরপূর্বক সংবাদ সম্মেলন করানো হয়। প্রাননাশের ভয়ে বাধ্য হয়ে আমি মিথ্যা বিবৃতি দিলাম।সংবাদ সন্মেলন শেষ হওয়ার পরে আবার জোর করে থানায় নিয়ে গিয়ে অভিযোগ তুলিয়ে নেয়।

আব্দুল গফুর আরও বলেন,আমি পরিস্থিতি শিকার আমাকে মেরে ফেললেও আমার কিছু করার নেই। আমি খুব আশংকার মধ্যে জীবন-যাপন করছি।পারিলা ইউনিয়নের সভাপতি রেজাউল ইসলাম সাহেব আমার কাছে সব কিছু শোনে সে আমাকে কোনো সাহায্য করেনি।আমি কোনো সঠিক বিচার পায়নি।টাকা ও চেক কোনো কিছুই ফেরত দেয়নি।

যেখানে আব্দুল গফুরের পরিবারের কেউ ছিল না। সংবাদ সন্মেলন (৩০ অক্টোবর) আব্দুল গফুরকে উচ্চস্বরে বলতে শোনা গেছে, আপনারা যা করলেন কাজ ঠিক করলেন না।

এই বিষয় স্বর্ণকার বুলবুলের কাছে মোবাইলে জানতে চাইলে,সে বলেন সব কিছু সমাধান হয়ে গেছে আমরা সবাই এক সাথে আছি।

এ ব্যাপারে জানতে মোবাইলে সাজ্জাদ বলেন,সংবাদ সন্মেলন করার সময় আমি ছিলাম,শফিকুল হক মিলন ভাইয়ের কাছে আব্দুল গফুরকে নিয়ে গিয়েছিলাম। মিলন ভাইকে আমি বললাম আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে ভাই। তখন ভাই বললো তোমরা বাইরে গেয়ে সমাধান করো।তখন আমরা সবাই মিলে আব্দুল গফুর নিয়ে গনক পাড়া একটা অফিসে সংবাদ সন্মেলন করলাম। আমি আব্দুল গফুর এর জন্য অসুস্থ হয়ে গেছি।আমি চাঁদবাজির সাথে জড়িত না,আমি কুরআন নিয়ে বলতে পারবো।

এ ব্যাপারে জানতে মোবাইলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ত্রান ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক শফিকুল হক মিলন বলেন,আমার কাছে সবাই এসেছিল আমি তাদের সবাইকে বের করে দিয়েছি।আমার কাছে এসব ঝামেলা নিয়ে আসবে না।তোমাদের মীমাংসা বাইরে গিয়ে করো। আমি এই সব বিষয় প্রশ্রয় দেয় না।

অন্যায় করে অন্য সংগঠন নাম হয় আমাদের বিএনপির। আমাদের সংগঠনের কারে বিষয় কোনো অভিযোগ থাকলে প্রমান পেলে সাংগঠনিক ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।সাজ্জাদ আমাদের কোনো সংগঠনে নেই। মুস্তাক স্বেচ্ছাসেবক দলে ছিলো।মুস্তাকের এই সব বিষয় নিয়ে আমি রাজশাহী মহানগর যুবদলের আহবায়ক মো: মাহফুজুর রহমান রিটনকে মোবাইলে আগেই জানিয়েছি।

কেমন ছিল চাঁদাবাজির প্রেক্ষাপট ?

একসময় আব্দুল গফুরের কাছ থেকে স্বর্ণকার বুলবুল আর্থিক সহযোগিতা নেন। সহযোগিতার সুদ-আসল দিতে না পেরে আব্দুল গফুরের কাছে জমি বিক্রি করেন বুলবুল। ঠিক গত ৫ অক্টোবর বুলবুল স্বর্ণকারের কাছে থেকে পবা থানার ভবানীপুর মৌজায় জেল নং-১৬৪,আর এস-৭৫৯, সাবেক দাগ নং- ৩৫৮০,বড়গাছী ইউনিয়ন,পবায় ১২ কাঠা জমি ১০ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দামদর হয়। ভুক্তভোগী আব্দুল গফুর ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে জমির মালিক বুলবুলের সাথে বায়নানামা চুক্তি করেন।

পরদিন জমি রেজিস্ট্রি করে বাকি টাকা দেবেন এমন কথা হয়। রেজিস্ট্রি করার দিন ৬ অক্টোবর জমির মালিক বুলবুল বুক্তভোগীকে ফোন করে ডাকলে তিনি সেখানে যান। তখন এলাকার বাদলের ছেলে সাজ্জাদ,তোতার ছেলে মুস্তাকিন রহমান,কাছের আলীর ছেলে খাইরুল ইসলাম,আইয়ুব আলীর ছেলে নাসির উদ্দীন,ইসমাইলের ছেলে ইদ্রিস আলী,আ. কুদ্দুসের ছেলে দেলোয়ার হোসেন এবং আশরাফুল ইসলামসহ অজ্ঞাত ব্যক্তিরা ভুক্তভোগীর কাছ থেকে দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবি করেন। তখন বুলবুল উপস্থিত ছিলেন।(যা পরে অস্বীকার করেছেন)।

ভুক্তভোগী টাকা দিতে অস্বীকার করলে তারা দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিতে শুরু করেন।পরে সকাল ১১ টায় ঘটনার সময়ে রামচন্দ্রপুর হাটের ওপর ভুক্তভোগী আব্দুল গফুরের কাছে থেকে নগদ দুই লক্ষ টাকা এবং অগ্রণী ব্যাংকের চেকের পাতায় পঞ্চাশ হাজার টাকা লিখে নেন ওই চক্র।

ভুক্তভোগী থানায় গেলে জিন্দা রাখবেন না বলে হুমকিও দেয় তারা। এবিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবার-পরিজনদের সাথে আলোচনা করে গত ২০ অক্টোবর পবা থানায় একটি লিখিত আভিযোগ করেন। যা শুনেই ওই চক্রের মাথায় বাজ পড়ে।


এরপর অভিযোগ তুলে নিতে বলেন এবং মেরে ফেলার হুমকি দিতে শুরু করেন। নিরাপত্তা ও চাঁদার টাকা ফেরত চাইতেই প্রথম দিনের সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন আব্দুল গফুর। সেই সাথে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছিলেন।এই চক্রের বিরুদ্ধে এমনও প্রমাণ আছে যে, লিজ নেয়া পুকুরের মালিককে মাছ ধরতেও দেননি তারা। তাদের দাবি টাকা দিতে হবে তাছাড়া মাছ ধরতে দেবেন না।

সেদিনও আব্দুল গফুর বলেছিলেন,কাছের মানুষরাও এখন অনেক কিছু অস্বীকার করছে কোন ঝামেলায় জড়াতে চাননা বলে। তাছাড়া চাঁদাবাজদের কাছে কেউ নিরাপদ নয়। জমি বিক্রেতা বুলবুলের সামনেই চাঁদা দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। বুলবুলের পথও আটকিয়ে ছিল। কিন্তু বুলবুলও আজ তাদের দলে।

দ্বিতীয় দিনের পর থেকেই ভুক্তভোগী আব্দুল গফুরকে চোখে চোখে রাখা হচ্ছে।জোর করে ভুক্তভোগী আব্দুল গফুরের সব ঘটনায় যেহেতু মিথ্যে প্রমাণ করানো হয়েছে।এখানে কি করার আছে ভুক্তভোগী আব্দুল গফুরের! তিনি দুই লক্ষ টাকা ও চেক ফেরত পাবেন? নাকি এমন চক্রের ক্ষমতার কাছে বলি দিতে হবে ভুক্তভোগীকে ! বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফ্যাসিস্ট সরকার সংস্কার হওয়ার পরেও কি আমাদের সমাজ সঠিক বিচার পাবে না!

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, , বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *