
রাজশাহী ব্যুরো: রাজশাহীর দুর্গাপুরে পুকুর সংস্কারের নামে যেন ধুম পড়েছে মাটি বিক্রির। এতে রাস্তা দিয়ে স্বাভাবিক চলাচল ব্যহত হচ্ছে। মাটিবাহী গাড়ির কারণে পাকা সড়কগুলো যেনো কাঁচা মাটির রাস্তায় পরিণত হয়েছে। সড়কের উপরে চলন্ত ট্রাক্টরগাড়ি হতে পড়ে থাকা মাটি বৃষ্টির পানিতে ভিজে একাকার হয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন যানবাহন চলাচলের সময় সেগুলো পিচ্ছিল হয়ে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়। তখন সড়কে পায়ে হেটে চলাচল করা যায় না। এ বিষেয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেটি মানছেনা কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। এ বিষয়ে প্রশাসনের ভুমিকা নিরব বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা ।
বৃহস্পতিবার(২৯ মে) সকালে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কিসমত গনকৈড় ইউনিয়নের উজানখলসী বিলে প্রায় দেড়শ বিঘা এলাকায় পুকুর সংস্কারের নামে চলছে মাটি বিক্রির ধুম। ওই রাস্তা দিয়ে ট্রাক্টরে করে মাটি পরিবহনের ফলে মাটি ছিটকে পড়ছে রাস্তায়। ওই মাটি নিয়ে বারবার ট্রাক্টর চলাচলের কারনে ওই পাঁকা রাস্তায় মাটির প্রলেপ পড়ে কাঁদায় পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে, তাছাড়া কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত রাস্তার ও ক্ষতি হচ্ছে।
জানাগেছে, দূরত্ব অনুযায়ী ৮০০ থেকে ২০০০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে প্রতি ট্রাক্টর মাটি। আর মাটি বিক্রয়ে লাভবান হওয়ার কারনে বিভিন্ন মহল ম্যানেজ করে মাটি বিক্রয় করে চলেছেন স্থানীয় বেলাল হোসেন নামের এক স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জেলার বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আবুল কালাম আজাদ গত বছর সংসদ সদস্য হওয়ার পর দুর্গাপুরের উজান খলসী মৌজায় এই পুকুরের খনন প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। কিন্তু আনুষ্ঠানিক কাগজপত্র ছিল তাহেরপুর পৌর এলাকার বাসিন্দা কার্তিক সাহার নামে। গত ২৪ এপ্রিল এই প্রকল্প বুঝে নিয়েছেন একই এলাকার বিএনপি সমর্থক হিসেবে পরিচিত বেলাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি। হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে আবুল কালাম আজাদ বর্তমানে দিনাজপুর জেলা কারাগারে রয়েছেন।
স্থানীয় আলমগীর হোসেন বলেন, লাইসেন্সবিহীন ট্রাক্টর ও ট্রলি গাড়ি করে এসব মাটি বহন করছে চালকেরা। যাদের নিজেদেরও ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। খুবই দুঃখজনক হলো এগুলো দেখার জন্য কেউ নেই। দুর্গাপুর থেকে তাহেরপুরগামী এসব রাস্তায় মোটরসাইকেল চালকদের সাবধানে গাড়ি চালানোর অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, সাবধান, এ রাস্তায় অন্তত ৪টি এক্সিডেন্টের খবর পেলাম।
শিক্ষানবিশ আইনজীবী মোজাম্মেল হক নামের আরেক যুবক বলেন, খুব ভয়ানক অবস্থা, একটুর জন্য বেঁচে গেছি। তিনবার স্লিপ করছে উজানখলসী বিলের মধ্যে রাস্তায় পুকুর খননের কাঁদামাটির কারনে খুব বাজে অবস্থা। এটা দেখার কেউ নেই।
মোতালেব আলী নামে একজন বলেন, আমি নিজে একবার বাইক নিয়ে পড়ে গিয়েছিলাম। এদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে কবে?
পুকুর সংস্কারের অনুমতি ও সরকারি রাস্তায় মাটি বহনের বিষয়ে জানতে চাইলে পুকুর প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা কার্তিক সাহা বলেন, অনুমতি নিয়ে পুকুর সংস্কার করা হচ্ছে , রাস্তার ক্ষতি করে মাটি বিক্রয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে মাটি বিক্রির দায়িত্বে থাকা বেলাল এর সাথে কথা বলতে বলেন।
মাটি বিক্রয়ের বিষয়ে জানতে একাধিকবার বেলাল হোসেনের মুঠোফোনে কল করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তাই এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অবৈধ পুকুর খনন ও মাটি বিক্রির কারনে রাস্তা দিয়ে চলাচলের সুবিধার্থে দ্রুত পুকুরের মাটি বিক্রয় বন্ধ করতে প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার লোকজন।
এক সপ্তাহে আগে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিনা শারমিন সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুকুর খননের কাজ বন্ধ করে দিয়ে আসেন। তিনি তাঁদের আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়ে আসেন। জানতে চাইলে ইউএনও আরো বলেন, পুকুর সংষ্কারের নামে মাটি বিক্রির বিষয়টি জানা নেই। তবে মাটি বিক্রির জন্য সরকারি রাস্তা ব্যবহারে করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।