আবুল হাশেম, স্টাফ রিপোর্টার: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজশাহী বিভাগের প্রতিটি জেলা/উপজেলায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও নিহতের ঘটনায় সাংবাদিকদের হয়রানিমূলক মামলা ও আটকের ঘটনায় তিব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা রাজশাহী বিভাগের নেতৃবৃন্দরা।
বৃহস্পতিবার সংগঠনটির বর্তমান অহবায়ক (সাবেক সভাপতি) মো. নুরে ইসলাম মিলন ও বর্তমান সদস্য সচিব (সাবেক সাধারণ সম্পাদক) ফয়সাল আজম অপু স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদ লিপিতে এমন ঘটনার তিব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানানো হয়।
প্রতিবাদ লিপিতে তারা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও নিহতের ঘটনায় সারাদেশের ন্যায় রাজশাহী বিভাগের প্রতিটি জেলা/উপজেলায় সাংবাদিকের নামে মামলা হয়েছে। সরকার পতনের পর সাংবাদিকদের নামে দায়ের করা এসব মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে অনেক জেলা ও উপজেলার সাংবাদিকেরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের পরিবারও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
যদিও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সাংবাদিকদের বলেছেন, এসব মামলা তদন্ত করে আসামিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিরপরাধ কেউ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই ব্যাপারে নজর রাখা হচ্ছে। এ ছাড়াও গত ২৪ জুন দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শনে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের আপত্তি জানিয়েছেন। একই ভাবে গত ১৩ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সাংবাদিকদের চার আন্তর্জাতিক সংস্থার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এ ছাড়াও গত ১৫ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঢালাও হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলা অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতিশ্রুতির লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন সম্পাদক পরিষদ। তারা যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করে অভিযুক্ত সাংবাদিকদের কোনো সংশ্লিষ্টতা না পাওয়া গেলে এসব মামলা থেকে দ্রুত তাদের অব্যাহতি দেওয়ার আহ্বান জানায়।
এ সকল আবেদনের পেক্ষিতে গত ৭ অক্টোবর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঢালাও হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলার ঘটনায় দেশি-বিদেশি সাংবাদিক সংগঠন ও মানবঅধিকারসহ বিভিন্ন সংগঠনের দেওয়া বিবৃতি বিবেচনা করে সাংবাদিকদের নামে হওয়া মামলার বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের নির্দেশে উপসচিব মাসুদ খান সাক্ষরীত তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করে অফিস আদেশ জারি করেন। এর পরেও রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলা/উপজেলায় সাংবাদিকদের হয়রানি করা হচ্ছে।
এমনকি গত ২৬ অক্টোবর রাতে জাতীয় মিডিয়া তালিকাভুক্ত সাপ্তাহিক অগ্রযাত্রা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার এবং দৈনিক আজকের বাংলা পত্রিকার প্রতিনিধি রাজশাহী জেলার দুর্গাপুর উপজেলার ১নং কিশমত গনকৈড় ইউনিয়নের উজানখলসী গ্রামের নছির উদ্দিন মোল্লার ছেলে সাংবাদিক শাহাবুদ্দিন মোল্লাকে, দুর্গাপুর থানা পুলিশ কোন অভিযোগ ছাড়াই আটক করে রাজনৈতিক নাশকতা মামলায় চালান করে কারাগারে প্রেরন করেছেন।
যেহেতু সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঢালাও হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন হয়রানীমুলক মামলার ঘটনায় দেশি-বিদেশি সাংবাদিক সংগঠন ও মানবঅধিকারসহ বিভিন্ন সংগঠনের দেওয়া বিবৃতি বিবেচনা করে সাংবাদিকদের নামে হওয়া মামলার বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করে অফিস আদেশ জারি করা আছে। সেখানে কোনো তদন্ত ছাড়া এমন সাংবাদিকদের আটকের বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। দূর্গাপুর থানা পুলিশের দেয়া মিথ্যা মামলা থেকে সাংবাদিক শাহাবুদ্দিন মোল্লার মুক্তির দাবি ও কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়া রাজশাহী বিভাগে কর্মরত সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধের জন্য জোর অনুরোধ ও এমন ঘটনার তিব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানান তারা।
এ ছাড়াও সাংবাদিকদের হয়রানিমূলক মামলা ও আটকের ঘটনায় রাজশাহী বিভিন্ন প্রশাসন মহলে লিখিত দিয়েছেন সংগঠনটির রাজশাহী বিভাগীয় কমিটির নেতৃবৃন্দরা বলে নিশ্চিত করেছেন সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক (সাবেক) সুরুজ আলী।