নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের গেস্টরুমে বসাকে কেন্দ্র করে শাখা ছাত্রলীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। শনিবার রাত ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল গেট ও মাদার বখ্শ হলের মধ্যবর্তী স্থানে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রায় ছয়টি ককটেল বিস্ফোরণসহ দফায় দফায় রামদা ও লাঠিসোটা হাতে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। সংঘর্ষে জড়ানো ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ হল, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ।
মোস্তাফিজুর রহমানের দাবি, এ ঘটনায় তার পাঁচ থেকে ছয়জন কর্মী আহত হয়েছেন। তবে নিয়াজ মোর্শেদের পক্ষের কেউ আহত হয়নি বলে তিনি নিজেই জানিয়েছেন। সংঘর্ষের খবর পেয়ে রাত পৌনে ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদসহ হল প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ক্যাম্পাসে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। এরপর ঘটনাস্থলে যান সহ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম ও অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) তারিকুল হাসান। রাত আড়াইটা পর্যন্ত থেমে থেমে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও উত্তেজনা চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে রাত পৌনে ৩টার দিকে।
কী ঘটেছিল? জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সোহরাওয়ার্দী হলের গেস্টরুমে বসে আমার কিছু অনুসারী সাংগঠনিক কাজ করছিলেন। তখন হলের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ এসে আমার অনুসারীদের বের হয়ে যেতে বলেন। আমার অনুসারীরা তাদের কাছে দুই মিনিট সময় চাইলে, এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে নিয়াজ, হলে বহিরাগতদের ঢুকিয়ে আমার অনুসারীদের ওপর রেললাইনের পাথর, ইট ও ককটেল নিক্ষেপ করে। এতে আমার পাঁচ থেকে ছয়জন কর্মী আহত হয়। এ ঘটনায় আমি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, ওই গেস্টরুমে বসা নিয়ে প্রথমে আমাদের মধ্যে একটু বাকবিতণ্ডা হয়েছিল। কিন্তু এক পর্যায়ে সভাপতির অনুসারীদের কয়েকজন এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। বিষয়টি নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। তবে এ ঘটনায় আমার পক্ষের কেউ আহত হয়নি।
রাতে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিহার বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মধুসূদন রায় সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় স্পর্শকাতর একটি জায়গা। এখানে পুলিশ চাইলেই হস্তক্ষেপ করতে পারে না। স্বাভাবিক পরিবেশ যেন বজায় রাখতে প্রশাসনের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করবে পুলিশ।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে রাতেই কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক। তিনি বলেন, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। রামদা নিয়ে মহড়া ও ককটেল বিস্ফোরণের বিষয়টি প্রশাসন খতিয়ে দেখবে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, হলের স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে এবং বহিরাগতদের ঠেকাতে কক্ষে কক্ষে তল্লাশি চালানো হয়েছে। দেশীয় অস্ত্র থাকতে পারে, এমন কক্ষেও তল্লাশি করা হয়েছে। তবে ভাঙা ইট ও চেয়ারের হাতল জাতীয় জিনিস ছাড়া অন্য কিছু পাওয়া যায়নি। হলের পরিবেশ শান্ত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।