মঙ্গলবার, ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রামেবি ক্যাম্পাসের শত শত গাছ কেটে লুট ঠিকাদারকে নোটিশ 

পাভেল ইসলাম মিমুল, উত্তরবঙ্গ: রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) নির্মাণাধীন ক্যাম্পাস এলাকায় টেন্ডার ছাড়াই সহস্রাধিক আমগাছ কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। বন বিভাগের অনুমতিও নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
রাজশাহী নগরীর সিলিন্দায় ২০৫ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করে গড়ে তোলা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। ইতোমধ্যে অসংখ্য তাজা আমগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এ গাছ কেটে লুটের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা, এক সিন্ডিকেট সদস্য ও একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জড়িত। এর আগে প্রায় ২০ লাখ টাকার আম বিক্রি করে সেই অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়। বর্তমানে পেছনের তারিখে লিজ দেখিয়ে আংশিক টাকা ফান্ডে জমা দেয়ার চেষ্টা চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, নির্মাণাধীন ক্যাম্পাস চত্বরে প্রায় ৭ হাজার ৩০০ আমগাছসহ নানা প্রজাতির গাছ রয়েছে। জমি অধিগ্রহণের সময় এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানায় আসে। অভিযোগ রয়েছে, এসব গাছ কেটে বিক্রির জন্য নম্বর দেয়া হলেও এখনো কোনো দরপত্র ডাকা হয়নি বা কার্যাদেশ জারি করা হয়নি।
সূত্র জানায়, ক্যাম্পাস এলাকায় বালুভরাটের কাজ করছে ঢাকার মিরপুরের প্রতিষ্ঠান হোসাইন কন্সট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড। তবে এ প্রতিষ্ঠানের রাজশাহী শাখার ব্যবস্থাপক দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের কাজ কেবল বালু ভরাট পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। গাছ কাটার সঙ্গে কোনোভাবেই আমাদের সম্পৃক্ততা নেই।’
ক্যাম্পাসের জন্য নির্ধারিত স্থান ঘুরে দেখা গেছে, গোড়া থেকে কেটে ফেলা হয়েছে অসংখ্য গাছ। কাটা জায়গাগুলো মাটি দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে, আবার কোথাও খুঁড়ে ফেলা গাছের স্থানে জমে আছে বৃষ্টির পানি।
পূর্ব পাশে সীমানাপ্রাচীর ও ড্রেন নির্মাণের কাজের সময় কয়েক শ গাছ আগেই কেটে ফেলা হয়। ওই অংশের শ্রমিকদের থাকার ঘরের কাছেই গোড়া থেকে কাটা দুটি আমগাছ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। শ্রমিকেরা জানান, কারা গাছ কেটেছে সে বিষয়ে তারা কিছু জানেন না।
নির্মাণাধীন ক্যাম্পাসের দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে আরও ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। সেখানে গাছ কেটে ফাঁকা জায়গায় শাকসবজির চাষ করা হয়েছে। প্রায় ১০ বিঘা জুড়ে থাকা এক বাগানে সারি সারি কাণ্ড কেটে রাখা গাছ হাঁটু সমান পানিতে ডুবে আছে। শুধু ওই বাগানেই অন্তত অর্ধশতাধিক গাছ কেটে রাখা হয়েছে, যেগুলোর প্রত্যেকটিতে রঙ দিয়ে নম্বর লেখা আছে।
এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মমিন জানান, তাকে মাসে ১০ হাজার টাকা বেতনে ক্যাম্পাস দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে গাছ কারা কাটছে, সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র দাবি করেছে, এই চক্রে জড়িত রয়েছেন সিন্ডিকেট সদস্য হাফিজুল, রামেবির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. হাসিবুল হোসেন, উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী নাজমুল হোসেন এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, নামমাত্র মূল্যে বাগান ইজারা দেখিয়ে চলতি মৌসুমেই প্রায় ২০ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছেন তারা। তবে সেই অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী সিরাজুম মুনীরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শীর্ষ কর্মকর্তা গাছ কাটার বিষয়টি আগে থেকেই জানতেন। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি।
রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গাছ কাটার অভিযোগে নাম উল্লেখ করা রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. হাসিবুল হোসেন বলেছেন, ‘গাছ কাটার বিষয়টি অফিসিয়ালি হয়নি। আমি প্রকল্প এলাকায় যাই না, তাই আমার নাম কেন আসে তা বুঝতে পারছি না।’
উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী নাজমুল হোসেনও এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, মাসের পর মাস ধরে ক্যাম্পাসে গাছ কাটার ঘটনা চললেও ব্যাপক হারে কাটা শুরু হওয়ার পর এটি ফাঁস হয়। এরপর তোলপাড় সৃষ্টি হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বালুভরাটের কাজ করা হোসাইন কন্সট্রাকশনকে শোকজ নোটিশ প্রদান করে।
মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক ও পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক প্রকৌশলী সিরাজুম মুনীর জানান, ‘আমাদের পক্ষ থেকে কোনো গাছ কাটা হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেআইনিভাবে গাছ কেটেছে। তাই তাদের শোকজ নোটিশ দেয়া হয়েছে। জবাব পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদি আমাদের কোনো কর্মকর্তা এতে জড়িত থাকে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযোগের বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। প্রতিষ্ঠানটির রাজশাহী ব্যবস্থাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা গাছ কাটিনি, ওই দিকটায় আমাদের কোনো কাজই নেই। শোকজ নোটিশের জবাবে এটিই জানানো হয়েছে।
Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ