Rashadul Hoque : দেশের এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন রোগে ভুগলেও চিকিৎসাসেবা পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় থাকে। কারণ কোনো চিকিৎসক রোগী এইডস আক্রান্ত জানলে সেবা দিতে চান না। তাই বেশির ভাগই এইডসের বিষয়টি গোপন করে চিকিৎসা নেন বলে জানিয়েছেন এক গোলটেবিল বৈঠকের বক্তারা।
সিক্সটিন ডেইস অব অ্যাকটিভিজম উপলক্ষে গতকাল শনিবার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন।
এ সময় দেশে এইডস আক্রান্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুস্থ জীবনযাপনে ১১ দফা দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রতিবছর ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিক্সটিন ডেইস অব অ্যাকটিভিজম দিবস পালিত হয়। এ বছর দিবসটির আওতায় নারীর প্রতি সহিংসতা দিবস, বিশ্ব এইডস দিবস ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উদযাপিত হচ্ছে।
বৈঠকে উত্থাপিত দাবিগুলো হলো এইডস আক্রান্তদের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করে প্রত্যেককে চিকিত্সার আওতায় নিয়ে আসা।
ওষুধের পাশাপাশি তাদের অন্যান্য চিকিত্সাসেবা সহজলভ্য ও বৈষম্যহীন করা। সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের আরো দায়িত্বশীল আচরণ করা। যেকোনো ধরনের হয়রানি ও বৈষম্যমূলক আচরণ পরিহার করা। তাদের বৃত্তিমূলক ও মানানসই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
তাদের সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর আওতায় নিয়ে আসা। নতুন আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা। তাদের জন্য সহজশর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা। প্রত্যেক ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে এইচআইভি সচেতনতামূলক কার্যক্রমে যুক্ত করা। অভিবাসীরা বিদেশে যাওয়ার আগেই এইচআইভি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া।
দেশে এইডস রোগী ও মৃত্যু বেড়েছে
দেশে গত এক বছরে এক হাজার ২৭৬ জনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে মারা গেছেন আড়াই শতাধিক এইডস রোগী। বাংলাদেশে এইডস শনাক্ত হওয়ার পর এক বছরের হিসাবে আক্রান্ত ও মৃত্যুর এ সংখ্যা সর্বোচ্চ। এসব তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা, কুষ্ঠ ও এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যে বলা হয়, আক্রান্তদের মধ্যে এক হাজার ১১৮ জন বাংলাদেশী নাগরিক। বাকি ১৫৮ জন কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আটকে পড়া মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা। এর আগের বছর সারা দেশে ৯৪৭ জন এইডস রোগী শনাক্ত হয়। আক্রান্তদের মধ্যে মারা যান ২৩২ জন। আর সর্বশেষ বছরে মারা গেছেন ২৬৬ জন।
গত এক বছরের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জাতীয় যক্ষ্মা, কুষ্ঠ ও এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. মাহফুজুর রহমান সরকার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এক বছরে আক্রান্ত বাংলাদেশী নাগরিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৪২ জন রোগী ঢাকায়। এছাড়া চট্টগ্রামে ২৪৬, রাজশাহীতে ১৭৫, খুলনায় ১৪১, বরিশালে ৭৯, সিলেটে ৬১, ময়মনসিংহে ৪০ ও রংপুর জেলায় ৩৪ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৮৫০ জন পুরুষ ও ২৭৮ জন নারী। নয়জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ গত এক বছরে এইডসে আক্রান্ত হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ১৯৮৯ সালে দেশে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হয়। এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৯৮৪ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে দুই হাজার ৮৬ জনের।
বাংলাদেশে এইচআইভি ভাইরাস বহনকারীর সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি। এইডস আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ যৌনকর্মীর সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়া পুরুষ সমকামীদের মধ্যেও এই রোগ ছড়াচ্ছে। এ বছর আক্রান্তদের মধ্যে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ।
এসব তথ্য তুলে ধরেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম মি. আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ অনেক রোগ নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণে সফল হলেও এইডস নিয়ন্ত্রণে থমকে আছে। এইডস নির্মূলে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসায় আরো বেশি জোর দিতে হবে। পাশাপাশি রোগটি যেন না ছড়ায় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’
আক্রান্তদের দূরে সরিয়ে রাখা নয়। সরকার এইডসের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা ওষুধসব সব ধরনের সেবা দিচ্ছে। আমাদের এখানে অস্ত্রোপচারসহ চিকিৎসায় রি-ইউজেবল অনেক কিছু ব্যবহার করা হয়। ওই জিনিসগুলো জীবাণুমুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে বলেও জানান মি. আলম।